‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
রবিবার

২৮ এপ্রিল ২০২৪

৭:৩৭:৪১ PM
1454771

আমেরিকার সামরিক ব্যবসায়ীরা যুদ্ধ শেষ হতে দিচ্ছে না

পার্সটুডে-ভিয়েতনাম যুদ্ধের মাঝখানে তৎকালীন সরকারের মুখপাত্র হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন: সামরিক বাহিনী, প্রচলিত অর্থে, যুদ্ধে জয়ী হলেই কেবল বিজয়ী হয়। অন্যথায় তারা সবসময়ই পরাজিত থাকে। পক্ষান্তরে, যুদ্ধের পক্ষপাতীরা যুদ্ধ ছেড়ে দিলেই হেরে যায়। অন্যথায়, তারা সবসময় জয়ী থাকে।

এই শব্দটিতে ভিয়েত কংদের বিরুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর হতাশার গন্ধ ছিল, এখন বিজয়ের রহস্যে পরিণত হয়েছে। অবশ্য আজকাল মনে করা হচ্ছে যে আমেরিকার সেনাবাহিনী পক্ষপাতীদের মতোই কাজ করে।

এখন ভিয়েতনাম যুদ্ধের কয়েক দশক পর, যুদ্ধের সময় ভিয়েতনাম গেরিলাদের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়া পেন্টাগন, অবশেষে একটি সহজ সমাধানে পৌঁছেছিল। সমাধানটি হলো নীরবে-কেউ যাতে বুঝতে না পারে-বিজয়ের সংজ্ঞার্থ পরিবর্তন করে দেওয়া।  যুদ্ধবাজরা বিজয়ের যে সংজ্ঞা দিয়েছিল তার জায়গায় পরিবর্তিত সংজ্ঞাটি প্রতিস্থাপন করে দেওয়া এবং বিশ্বাস করা যে: যুদ্ধ ছেড়ে দিলেই যুদ্ধে হেরে যাওয়া হয়, ব্যস। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীকে অন্তহীন যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে এমনকি কংগ্রেসের আরোপিত বিধিনিষেধ থেকেও অনেকাংশেই নিরাপদ রাখা হয়েছিল।

যাই হোক, ২০২১ সালে এত শক্তিশালী ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও পেন্টাগন আফগানিস্তান যুদ্ধে হেরে গেছে, কারণ গেরিলা যুদ্ধে তালেবানরা ছিল সিদ্ধহস্ত। তাই পেন্টাগন বাধ্য হয়েছিল এই যুদ্ধটিকেও তাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পরাজয়ের দীর্ঘ তালিকায় যুক্ত করতে। (ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়ার পাশাপাশি তাদের 'অবাঞ্ছিত বিজয়ের' তালিকায় গ্রেনাডা এবং পানামাকেও যুক্ত করা যেতে পারে।) কিন্তু এর মধ্যেই, জনদৃষ্টির আড়ালে এবং কংগ্রেসের তত্ত্বাবধানে, অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধসহ অন্যান্য প্রক্সি যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ সিরিয়া যুদ্ধের কথা বলা যায়। সেখানে মাত্র দশ বছরে পড়েছে। ইরাক যুদ্ধকে ১৯৯০ সাল থেকেই ধরুন আর ২০০৩ বা ২০১৪ সাল থেকেই ধরুন এখনও চলছে। সোমালিয়া এবং আফ্রিকান উপকূলে মার্কিন সংঘাত দুই দশক ধরে চলছে। প্রায় ২৪ বছর আগে আমেরিকা তাদের অন্যান্য ন্যাটো মিত্রদের নিয়ে সার্বিয়ায় বোমা বর্ষণ শুরু করেছিল। ওই বোমাবর্ষণের ঘটনা কসোভোকে যুদ্ধে প্রবেশ করতে বাধ্য করেছিল।

মার্কিন সেনাবাহিনীর এখনও প্রায় ৩০ হাজার সৈন্য কোরীয় উপদ্বীপে মোতায়েন রয়েছে। কারণ ওই দেশে ১৯৫৩ সালের যুদ্ধে যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়েছিল তা কখনও শান্তি চুক্তিতে পরিণত হয় নি। এমনকি ২০২১ সালে আফগানিস্তানে আমেরিকার পরাজয়ের গল্পেরও পরিসমাপ্তি ছিল না। কারণ ২০২২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ 'ওভার দ্য হরিজন' নাম দিয়ে আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি ওপর ড্রোন হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। ওই ঘটনার পর থেকে সেখানে হত্যাকাণ্ড এখনও অব্যাহত আছে।

পেন্টাগন হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রে আফগান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না, কিন্তু এধরনের অসম যুদ্ধের ঘটনা লড়াই সংগ্রামের আগুনকে জিইয়ে রাখে। ধীরে সুস্থে চললেও যুদ্ধ চলমান থাকে।  এভাবে পেন্টাগনের সামরিক বাজেট কেবল কমে তো না-ই বরং  ক্রমশ বাড়তেই থাকে। এই কৌশল বা ষড়যন্ত্র খুবই অবাক করার মতো।

এখানেই রয়েছে যুদ্ধগুলোতে আমেরিকার উচ্চ-পদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তা, জেনারেলগণ, ওই শিল্পে তাদের অংশীদারেরা এবং এই আদর্শের অনুসারীদের জন্য বিশেষ বিজয়।#