‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শুক্রবার

৩ মে ২০২৪

১:৫৭:২২ PM
1455906

আমেরিকায় ম্যাককার্থিজমের শ্বাসরুদ্ধকর যুগের প্রত্যাবর্তন; প্রকাশ্যে হরণ করা হচ্ছে বাকস্বাধীনতা

বাতিল হওয়ার প্রায় সাত দশক পর ম্যাককার্থিজম আবার ফিরে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করছে তাদের বিরুদ্ধেই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে দেশটির রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম সংস্থাগুলো। এই দলে রক্ষণশীলেরা যেমন আছেন তেমনি আছেন লিবারেলরাও। এভাবে তারা বাকস্বাধীনতা ও ভিন্ন মতের অধিকারকে লঙ্ঘন করে শান্তিকামীদের মুখ বন্ধ করে রাখতে চাইছেন। এটা যেন ম্যকাকার্থিজম যুগেরই প্রত্যাবর্তন।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ এন্টি-সেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষের বিষয়ে যে ধরণের তদন্তে নেমেছে তা স্পষ্টভাবেই ম্যককার্থিজম যুগের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সে সময় সবাই সিনেটর জন ম্যাককার্থির বক্তব্যের প্রতি বিশেষ নজর রাখত। তিনি যেসব শুনানির আয়োজন করতেন সেগুলো তখনও বাকস্বাধীনতার সমর্থকদের পক্ষ থেকে কঠোর সমালোচনার শিকার হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রেসিডেন্টকে কমিউনিস্ট লেবেল লাগিয়ে দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল।

সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে সন্দেহের বশে কিংবা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কাউকে শায়েস্তা করার জন্য তাকে কমিউনিস্ট আখ্যা দেয়া নিয়মে পরিণত হয়েছিল। সিনেটর জোসেফ ম্যাককার্থির কমিউনিস্ট শায়েস্তা করার নামে অনেক নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করার প্রক্রিয়াটি ম্যাককার্থিজম নামে পরিচিতি লাভ করে। একই প্রক্রিয়ায় এখন ফিলিস্তিনি গণহত্যার বিরোধিতাকারীদেরকে হয়রানি করার জন্য ইহুদি বিদ্বেষী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। মার্কিন শাসক গোষ্ঠী এখন ইহুদি বিদ্বেষ দমনের নামে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে জঘন্য আচরণ করছে, তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে। হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে জেলে ভরা হয়েছে। সে সময় মার্কিন নীতির বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য কমিউনিস্ট লেবেল লাগানোর দায়িত্ব পালন করতেন উইসকনসিন থেকে নির্বাচিত সিনেটর জোসেফ ম্যাককার্থি। এখন ইহুদি বিদ্বেষী লেবেল লাগানোর দায়িত্ব নিয়েছেন নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিক। গত ৫ ডিসেম্বর যথাক্রমে হার্ভার্ড ও এমআইটির প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিন গে ও স্যালি কর্নব্লুথের সঙ্গে প্রতিনিধি পরিষদের কমিটির সামনে উপস্থিত হন পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এলিজাবেথ ম্যাগিল। এ সময় রিপাবলিকান নিউইয়র্ক কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিক তাদেরকে জেরা করেন। ঐ জেরার পর পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এলিজাবেথ ম্যাগিল পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

৭৫ বছর আগে যেভাবে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ এবং ম্যাককার্থিবাদীদের মাধ্যমে মার্কিন বাক স্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার আক্রমণের শিকার হয়েছিল এখন ঠিক সেভাবেই মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক স্বাধীনতা আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া, ১৯৭০ সালের মে মাসে ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের সমর্থকদের দমন

দখলদার ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা বন্ধের লক্ষ্যে রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিক তৎকালীন ত্রাস সৃষ্টিকারী সিনেটর ম্যাককার্থির স্থানে বসে ছড়ি ঘুরাচ্ছেন। এলিস স্টেফানিক ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের আসল উদ্দেশ্য ইসরাইলের সমালোচনা নিষিদ্ধ করা। মার্কিন সংসদ বা কংগ্রেস কাউকে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করার বিষয়ে বড় ধরণের ক্ষমতা ভোগ করে। আর এই ক্ষমতা এখন অপবাদ, মানহানি এবং ভয় দেখানোর লাইসেন্স হয়ে উঠছে। ইহুদি বিদ্বেষ ইস্যুতে প্রতিনিধি পরিষদের এডুকেশন অ্যান্ড ওয়ার্কফোর্স কমিটির সাম্প্রতিক তদন্ত প্রক্রিয়ায় এমন চিত্রই দেখা গেছে।  

বর্তমান মার্কিন সরকার বৈধতার সংকটের মধ্যে থাকায় দেশটির তরুণ সমাজের সুসংগঠিত আন্দোলনকে খুবই ভয় পাচ্ছে। পরিবর্তন প্রত্যাশী তরুণ সমাজের এই জাগরণকে স্তব্ধ করতে ত্রাস সৃষ্টির কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। আর নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোও অতি-ডানপন্থীদের এই আতঙ্ক সৃষ্টির কৌশল বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে। ম্যাককার্থি যুগেও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এমন আচরণ লক্ষ্য করা গেছে।

সূত্র: Have You No Sense of Decency?” McCarthyism Returns to Campus. 2024. counterpunchISRAEL AND THE NEW MCCARTHYISM. 2023. fpifMcCarthyism Is Back: Together We Can Stop It. 2023. thetricontinental  


342/