‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
রবিবার

২২ নভেম্বর ২০২০

৯:৩৯:৪৬ AM
1088263

‘লাভ জিহাদ’ ইস্যুতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবিকে আমল দিচ্ছে না জেডিইউ

ভারতের বিহার রাজ্যে বিজেপি’র ফায়ারব্রান্ড নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের ‘লাভ জিহাদ’সম্পর্কিত বক্তব্য থেকে ক্ষমতাসীন জেডিইউ নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং বিহারে ‘লাভ জিহাদ’সম্পর্কিত আইন তৈরি করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছিলেন। বিহারে জেডিইউ-বিজেপি সমন্বিত জোট ‘এনডিএ’ ক্ষমতায় রয়েছে।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের বক্তব্য প্রসঙ্গে গতকাল (শনিবার) জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) গণমাধ্যমকে বলেছে, আপনাদের এ জাতীয় বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়। 

গিরিরাজ সিং বলেছিলেন, ‘লাভ জিহাদ’ রুখতে বিহার সরকারকেও মধ্য প্রদেশের মতো আইন করা উচিত। কিন্তু জেডিইউ-এর বিহার শাখার সভাপতি বশিষ্ট নারায়ণ সিং বলেছেন, আপনারা এ জাতীয় মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করবেন না। যদি এ জাতীয় বিবৃতি কখনও আসে তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনারা এটিকে শিরোনামে পরিণত করবেন।

শনিবার বিহারের রাজধানী পাটনার দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেডিইউ নেতা বশিষ্ঠ নারায়ণ সিং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংয়ের দাবিতে সহমত প্রকাশ করেননি। ওই সংবাদ সম্মেলনে বিহারের জেডিইউ নেতা ও  সিনিয়র মন্ত্রী অশোক চৌধুরী, জেডিইউ-এর প্রধান মুখপাত্র সঞ্জয় সিং-সহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেডিইউ নেতা বশিষ্ঠ নারায়ণ সিং সাফ জানান, তার দল এ জাতীয় বক্তব্যকে আমলই দিচ্ছে না। জেডিইউ এ ভাবে কার্যত ইঙ্গিত দিয়েছে যে গিরিরাজ সিংয়ের বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ‘বিতর্কিত ইস্যুতে’ বিজেপি থেকে দূরে থাকতে চায়। কিন্তু এই প্রথম নয় যে জেডিইউ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী  গিরিরাজ সিংয়ের বক্তব্য থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। দলটি স্পষ্টভাবে মনে করে যে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েও গিরিরাজ সিং যে ধরণের বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে থাকেন তাতে শেষ পর্যন্ত বিহারের রাজনীতিতে ‘এনডিএ’কে ক্ষতির শিকার হতে হয়। গিরিরাজ সিং এমনকি বিধানসভা নির্বাচনেও তার নির্বাচনী এলাকায় কোনও বিশেষ এনডিএ প্রার্থীকে জেতাতে পারেননি।

অন্যদিকে, জেডিউ মুখপাত্র সঞ্জয় সিং বলেছেন, ‘আমরা সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। আমাদের নেতা নীতীশ কুমার সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে চলা ব্যক্তি। কোনও সরকার কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা তাদের বিষয়। নীতীশ কুমার কখনও ‘চাপের রাজনীতি’  করেননি। সমাজকে ভেঙে ফেলে এমন কোনও প্রস্তাব এলে তা গৃহীত হবে না।’ 

গিরিরাজ সিং অবশ্য হাল ছাড়েননি। শনিবার তিনি ফের বলেন, আমি মনে করি যে ‘লাভ জিহাদ’আজ সামাজিক সম্প্রীতির জন্য একপ্রকার ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। এখন অনেক রাজ্যে এটির  জন্য আইন তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিহারকেও একে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নাম না দিয়ে সামাজিক সম্প্রীতির জন্য ‘লাভ জিহাদ’ নিয়ে কাজ করা উচিত।  

একইদিনে ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বাঘেল বিজেপি নেতাদের টার্গেট করে বলেছেন, ‘কিছু বিজেপি নেতার পরিবারের সদস্যরাও অন্য ধর্মে বিয়ে করেছেন। আমি বিজেপি নেতাদের জিজ্ঞেস করতে চাই যে, এই বিয়েগুলো 'লাভ জিহাদ' সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে কী না?’   

সাধারণত উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন ‘লাভ জিহাদ’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে। তাদের দাবি, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে কৌশলে ধর্মান্তর করায়। যদিও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাই ‘লাভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করেনি। আইনেও ‘লাভ জিহাদ’ -এর অস্তিত্ব নেই।

যদিও থেমে নেই হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও তাদের দলবল। এরইমধ্যে বিজেপিশাসিত মধ্য প্রদেশ, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা প্রভৃতি রাজ্য কথিত ‘লাভ জিহাদ’ রুখতে কঠোর আইন তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে। # 

342/