‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
রবিবার

২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১

৪:৩২:৩৯ PM
1117539

হাওযা ইলমিয়া কোমে’র উচ্চতর পরিষদের প্রধান বলেন: মহানবি (স.) কে সমর্থন ও তার পৃষ্ঠপোষকতা এবং তাকে শত্রুর অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখার তৎপরতা যেন নিজের আত্মীয়কে রক্ষা বলে বিবেচিত না হয় এ কারণেই হজরত আবু তালিব (আ.) নিজের ঈমানকে (সর্বত্র) প্রকাশ করতেন না।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ‘মহানবি (স.) এর সহযোগী, আবু তালিব (আ.) আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ আয়োজনকারী পরিষদের সদস্যরা জামেয়ে মুদাররিসীনের উচ্চতর পরিষদের প্রধানের সাথে সাক্ষাতে তাঁর মজলুমিয়্যাত এবং ইতিহাসে তার উপর যে, অন্যায় আচরণ করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে বলেন: তাঁর ঈমানের বিষয়ে সবচেয়ে বড় অন্যায় ও জুলুম তাঁর উপর করা হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ ‘সৈয়দ হাশেম হুসাইনি বুশাহরি’ বলেন: হজরত আবুতালিব (আ.) এর পক্ষ থেকে এ সহযোগিতা শুধুমাত্র আত্মীয়তা ও গোত্রীয় সম্পর্কের কারণে ছিল না। তিনি মনেপ্রাণে মহানবি (স.) এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। আর এ বিষয়টি তাঁর কবিতা সমগ্র থেকে প্রমাণিত।

পাশাপাশি মহানবি (স.) এর প্রতি আবুতালিব (আ.) এর স্পষ্ট ও সুগভীর ভালবাসা এবং এর বিপরীতে আবুতালিব (আ.) এর প্রতি মহানবি (স.) এর শ্রদ্ধা ও গভীর ভালবাসা, তার ঈমান আনয়নের অন্যতম চিহ্ন। কেননা মহানবি (স.) কাফেরদের বিষয়ে অত্যন্ত ‘কঠোর’ এবং মু’মিনদের বিষয়ে অত্যন্ত নরম হৃদয়ের ও দয়ালু ছিলেন। এই মা’লুল তথা কার্য থেকে এর ইল্লাত তথা কারণকে আমরা খুঁজে পাই যে, মহানবি (স.) এর প্রতি ভালবাসা আবুতালিব (আ.) এর ঈমানের অন্যতম দলীল। (অন্য ভাষায় যেহেতু মহানবি (স.) কাফেরদের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর তাই যদি হজরত আবুতালিব ঈমান না আনতেন তাহলে মহানবি (স.) তাকে কক্ষণো ভালবাসতেন না।)

হজরত আবুতালিব (আ.) এর ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা এবং তাঁর ব্যক্তিত্বের উপর থেকে মজলুমিয়্যাতের ধুলো মুছে ফেলার যে সুযোগ আপনারা পেয়েছেন তা আপনাদের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ –এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: আলেম সমাজ, শিয়াগণ এবং হাওযা ইলমিয়া সর্বদা হজরত আবুতালিব (আ.) এর এ মজলুমিয়্যাতের বিষয়ে সমব্যাথী ছিল। কিন্তু হজরত আবুতালিব (আ.) এর সম্মেলনের আয়োজন এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন মতামত ও প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য সুযোগ সৃষ্টির এ তৌফিক ‘মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ’।

হাওযা নিউজের ভাষ্যানুযায়ী, আয়াতুল্লাহ বুশাহরি বলেন: এ সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার অবস্থান অধিক উঁচু হয়েছে। আমার দৃষ্টিতে এ ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকা উচিত।

সম্মেলন আয়োজনকারীদের উদ্দেশ্যে ইরানের কোম শহরের জুমআর খতিব বলেন: বিভিন্ন প্রবন্ধ ও গ্রন্থ উপস্থাপনের মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আপনাদের অগ্রসর হওয়াটা যথেষ্ঠ নয়, বরং যে সকল গ্রন্থ ও প্রবন্ধ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে লেখা হয়েছে সেগুলোকে সংগ্রহ এবং তাতে উত্থাপিত সংশয়ের জবাব দিতে হবে।

তিনি বলেন: নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে হজরত আবুতালিব (আ.) সম্পর্কে যেসকল গ্রন্থ রচিত হয়েছে সেগুলোকে এ বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের নিকট হস্তান্তর করুন, যাতে ঐ সকল বইতে উত্থাপিত দাবী ও সংশয়ের শক্তিশালী জবাব দিতে পারেন। শুধুমাত্র ইতিবাচক আলোচনা নিয়ে থেমে থাকলে চলবে না, বরং উত্থাপিত সংশয় ও দাবীগুলোর জন্য যুক্তিনির্ভর জবাব দিতে হবে।

হজরত আবুতালিব (আ.) কে ঈমানের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করে তাঁর ব্যক্তিত্বের অন্যান্য দিকের প্রতি ইঙ্গিত করে আয়াতুল্লাহ হুসাইনি বুশাহরি বলেন: ঈমানের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে তিনি আমাদের এবং মোকাভেমাহ (প্রতিরোধ আন্দোলন) ফ্রন্টের জন্য আদর্শ স্বরূপ। তিনি দীর্ঘ ৩ বছর যাবত শিবে আবুতালিব-এ মহানবি (স.) এর পাশে ছিলেন এবং কুফরের বিরুদ্ধে তার এ প্রতিরোধ ইসলামি বিপ্লব ও আমাদের জনগণের জন্য আদর্শ হিসেবে বিবেচিত। ঐ কঠিন পরিস্থিতিতে আসহাবে কাহফের মত তিনি বিভিন্ন সময়ে তাকিয়্যাহ করতেন এবং বাধ্য হয়েই নিজের ঈমানকে গোপন রাখতেন; যাতে মহানবি (স.) এর পক্ষপাতিত্ব ও তাঁর প্রতিরক্ষা শুধুমাত্র আত্মীয়তা ও গোত্রীয় সম্পর্কের রূপ না নেয়।

এ সম্মেলন অব্যাহত রাখার প্রতি তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন: হজরত আবুতালিবের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরোধের বিশ্লেষণ বর্তমানে সময়ের দাবী।এ ধরণের সম্মেলন আয়োজন অব্যাহত রাখতে হবে। আপনারা এ সুযোগ তৈরি করেছেন এবং এ পথে আরও আলেম-ওলামাকে চিহ্নিত করার সুযোগও আপনাদের সামনে রয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আপনাদের এ কর্মসূচীই একটি বিপ্লবের জন্ম দিতে সক্ষম। এরপর আপনারা দেখবেন, এ বিষয়টিকে জনগণ কিভাবে স্বাগত জানাচ্ছে। অতএব, এ পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।

জামে মুদাররিসীনের উচ্চতর পরিষদের প্রধান এ সাক্ষাতের শেষে হজরত আবুতালিব (আ.) আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন: আরও এক মহান ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যার ব্যক্তিত্বের উপর ইতিহাস যে ধুলো জমিয়েছে তা ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করতে হবে; তিনি হলেন হজরত খাদিজা (সা. আ.)। হজরত খাদিজা (সা. আ.) ও হজরত আবুতালিব (আ.) এর মত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা একটি মহান কর্ম; মহান আল্লাহ্ এর প্রতিদান প্রদান করবেন (ইন শা আল্লাহ্)।

 

৩০টি প্রাক বৈঠক

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার সাংস্কৃতিক বিষয়ক বিভাগের প্রধান এবং ‘মহানবি (স.) এর সহযোগী আবু তালিব (আ.) আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ আয়োজনকারী পরিষদের প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ‘আহমাদি তাবার’, সম্মেলন আয়োজন কেন্দ্রীক কার্যক্রমের অগ্রগতি ও প্রস্তুতির বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন: সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে কয়েকটি আরব দেশ, ভারত ও এর আশেপাশের কয়েকটি দেশ এবং আফ্রিকার গন্যমান্য আলেমদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। এমনকি সুফি সম্প্রদায় ও সালাফিদের সাথেও যোগাযোগ হয়েছে। এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লেখাও জমা পড়েছে। এছাড়া আয়োজনকে অধিক সফল করতে তেহরান, কোম, ইসফাহান, মারকাজি, ইয়াযদ ও খোরাসানসহ ইরানের বিভিন্ন প্রদেশের হাওযা ইলমিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০টি প্রাক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ‘মহানবি (স.) এর সহযোগী হজরত আবু তালিব (আ.) শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা, ইমাম হুসাইন (আ.) এর পবিত্র মাজার, কালচারাল ইনস্টিটিউ অব রিসার্চ অব হাজরাত আবুতালিব (আ.), ইসলামি মাজহাবসমূহকে একত্রীকরণ বিষয়ক সংস্থা,  রিসার্চ ইনস্টিটিউ অব ইসলামিক সায়েন্স এ্যান্ড কালচারাল অফিস অব ইসলামি প্রোপাগাণ্ডা, আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, হাওযা ইলমিয়ার ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট, জামেয়াতুযা যাহরা (সা. আ.), আহলে বাইত (আ.) ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মীরাস-এ নবুয়্যত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আয-যুররিয়াতুন নাবাবিয়্যাহ রিসার্চ সেন্টার, কাসেম ইবনিল হাসান (আ.) ধর্ম ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আবনাউর রাসুল শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ অন্যান্য সংস্থা ও কেন্দ্রের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনটি আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭শে রজব (৯, ১০ ও ১১ মার্চ -২০২১ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সম্মেলনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন। ওয়েব সাইটটি ফার্সি, আরবি, ইংরেজি, টার্কি (ইস্তাম্বুলি) ও উর্দু ভাষায় সেবা প্রদান করছে।#176