‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শুক্রবার

৩০ জুলাই ২০২১

৯:৪৭:১২ AM
1164670

'দিন দ্য ডে' মুভিটি ইরান-বাংলাদেশ দু'দেশেই সমাদৃত হবে: সুমন ফারুক

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! সাক্ষাৎকারভিত্তিক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান আলাপনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি আশরাফুর রহমান। আজ আমরা কথা বলব বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা ফারুক উদ্দিন সুমন ওরফে 'সুমন ফারুক'-এর সঙ্গে। তিনি একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হলেও শখের বশে অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েছেন। এ পর্যন্ত তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবিগুলো হচ্ছে 'দিন দ্য ডে', 'দ্য বর্ডার' ও 'মাসুদ রানা'।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : 'দিন-দ্য ডে' হচ্ছে ইরান-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার একটি অ্যাকশন থ্রিলার চলচ্চিত্র। পরিচালনা করছেন ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম। চলচ্চিত্রটি ইরানের ফারাবি সিনেমা ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশের আলোচিত চলচ্চিত্র অভিনেতা অনন্ত জলিল যৌথভাবে প্রযোজনা করছেন। 'দিন দ্য ডে' মুভিতে অভিনয়ের জন্য অভিনেতা সুমন ফারুক কয়েকবার ইরান সফর করেছেন। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তাঁর অভিনীত মুভি এবং ইরানি চলচ্চিত্র শিল্প সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন গাজী আবদুর রশিদ।

রেডিও তেহরান: জনাব সুমন ফারুক, আপনাকে আলাপন অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি। প্রথমেই 'দিন দ্য ডে' মুভিটি সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাই। মুভির বাজেট কত, গল্পের মান কেমন- এ সম্পর্কে যদি বলতেন।

সুমন ফারুক: 'দিন দ্য ডে' সিনেমাটি বাংলাদেশ এবং ইরানের যৌথ প্রযোজনার ছবি। এর মূল পরিকল্পনাকারী আমার বন্ধু অনন্ত জলিল। এই ছবির লিড চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। ওনার উৎসাহে এই ছবির একটি চরিত্রে আমি কাজ করেছি।

ছবিটির বাজেট বলতে আপনারা বলতে পারেন বাংলাদেশি একশত পঞ্চাশ ক্রোর (কোটি) টাকার মতো। তবে পুরোটাই ক্যাশ ইনভলমেন্ট না। ইরান তার বিভিন্ন ধরণের ইকুইপমেন্ট ফ্যাসালিটিজ দিয়ে এই বাজেটটা রিচ করেছে।

গল্পমানের দিক থেকে বলতে গেলে- বর্তমান সময়ের একটি উপযোগী গল্প। এখানে ইরান থেকে ভালো ভালো চরিত্র নির্বাচন করা হয়েছে। ইরান থেকে এরমধ্যে প্রধান চরিত্রে কাজ করছেন রেজা হেদায়েতি। তিনি অনেক বড় মাপের অভিনেতা। ফলে সিনেমাটি ইরানে যেমন সমাদৃত হবে বাংলাদেশেও ঠিক তেমনই সমাদৃত হবে বলে আশা করি। আমার ধারণা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছবিটি মানুষ গ্রহণ করবে এবং এই ছবিতে নতুনত্ব পাবে।

রেডিও তেহরান: বিশাল বাজেটের একটি চলচ্চিত্র মানসম্মত হবে এবং এটি নিয়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে বিশেষ কৌতূহল থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। তো ছবিটি কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারে বলে আপনি মনে করেন।

সুমন ফারুক: ‘দিন দ্য ডে’ ছবিটি’র মুক্তির ব্যাপারে আমি বলব, আসলে ছবিটি অনেক আগেই অর্থাৎ ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেতো। কিন্তু মহামারি করোনাকালীন সময়ে গোটা বিশ্বের যে করুণ অবস্থা সে কথা বিবেচনায় রেখেই আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতি একটু ভালো হলে সুন্দর দিনক্ষণ দেখে মুক্তি পাবে। যেহেতু একটি বড় বাজেটের ছবি তাই ভালো সময়ের জন্য আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। ভালো সময় এলেই ছবিটি রিলিজ করা হবে। একইসাথে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে এবং সরাসরি বিভিন্ন দেশের সিনেমা হলগুলোতে চলবে। ফলে সময়ের জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে। এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না যে কবে রিলিজ হবে।

রেডিও তেহরান: 'দিন দ্য ডে মুভি'র শুটিং-এর জন্য আপনি বেশ কয়েকবার ইরানে এসেছিলেন। তো আপনার কেমন কেটেছে আপনার ইরানের দিনগুলো?

সুমন ফারুক: ইরানে আমার শুটিং পারপাজে এবং বিভিন্ন ধরনের মিটিং-এর কারণে বেশ কয়েকবার আসতে হয়েছে। শুরুতেই যখন ছবিটি যৌথ প্রযোজনায় করার পরিকল্পনা করা হলো তখন মিটিংএর জন্যে ইরান গেলাম অনন্ত ভাই ও আমি। তারপর সিনেমা শুটিং শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন লোকেশান দেখার জন্য গেলাম। এরপর যেতে হলো শুটিং-এর জন্য। আর এই সময়টা বেশ খানিকটা লম্বা ছিল। প্রায় একমাসের মতো। এই সময় আমরা বিভিন্ন লোকেশনে পুরো টিমের সাথে কাজ করেছি। আমাদের শুটিং-এর সময়টা ইরানে গ্রীষ্মকাল ছিল। দুপুরের দিকে প্রচণ্ড রোদ। ফলে দুপুরের দিকে শুটিং বন্ধ থাকত। আবার বিকেল ৫ টা থেকে ৭/৮ টা পর্যন্ত আবার চিত্রায়নের কাজ করা যেত। শুটিং এর ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। (ইস্ফাহানের) নাকশে জাহান, খাজু ব্রিজসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। আর ইরানে অনেক পার্ক আছে। দেখার জন্য, বেড়ানোর জন্য সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। আর ইরানের মানুষগুলো খুবই আন্তরিক। আমরা দেখেছি বিকেল বেলায় ইরানিরা পারিবারিকভাবে সবাই পার্কের মধ্যে বসে গল্প করে, বাদাম খায়। ভারি সুন্দর সে চিত্র। এতে বোঝা যায় ইরানিদের পারিবারিক বন্ধন বেশ সুদৃঢ় এবং খুব সামাজিক। এককথায় ইরানের দিনগুলো খুব ভালো কেটেছে ভালো লেগেছে।

রেডিও তেহরান: ইরানি চলচ্চিত্র সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাচ্ছি।

সুমন ফারুক: দেখুন, ইরানি চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলার মতো যোগ্যতা বা ভাষা কোনোটাই আমার নেই। সারাবিশ্ব জানে ইরানি সিনেমা কী জিনিস! চলচ্চিত্রের জন্যই ইরানের জন্ম আবার ইরানের জন্যই চলচ্চিত্রের জন্ম এভাবে বলা যায়।

ইরানিরা চলচ্চিত্রকে অনেক বেশি মূল্যায়ন করে এবং ছুটির দিনগুলোতে পারিবারিকভাবে বসে সিনেমা হলে মুভি দেখে। ওদের প্রতিটি সিনেমা তৈরির পেছনে একটা উদ্দেশ্য থাকে। সিনেমার চরিত্র নির্বাচনে তারা খুবই আন্তরিক। খুবই ড্রামেটিক। সিনেমার যে চরিত্রে যিনি অভিনয় করছেন তিনি সফলভাবে তার চরিত্রের মধ্যেই মিশে যান। তাঁদের সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে একটা ফোকাস থাকে যে আমি এই বয়স থেকে এই বয়সীদের জন্য এটি নির্মাণ করব তাছাড়া কমেডি করব কিংবা অ্যাডভেঞ্চার করব। ইরানে সবচেয়ে বেশি কমেডি সিনেমা। দ্বিতীয়ত তারা গুরুত্ব দেয় সামাজিক সিনেমার উপর। ইরান অ্যাকশানধর্মী ছবি খুব একটা করে না। আর করলেও সেটি ভালোভাবে করে।সিনেমাটিকে বুঝে শুনে গুছিয়ে করে। সিনেমা তৈরির ইকুইপেমেন্টের কোনো কমতি নেই। তারা অনেক বড় বাজেটেও কাজ করে আবার অনেক ছোট বাজেটেও কাজ করে।

ইরানি যাঁরা আমাদের সাথে কাজ করেছেন বিশেষ করে পরিচালক মুর্তজা আতশ জমজম- তাঁদেরকে দেখেছি যে লিডারশিপ কাকে বলে! তাঁরা ভালোবাসা দিয়ে বলেন, নেতৃত্ব দিয়ে বলেন পুরো ইউনিটটাকে এমনভাবে ধরে রাখে যে সিনেমাটির সর্বোচ্চ আউটপুটটা তুলে আনতে পারে। লাইটিং, ক্যামেরা, লোকেশন সিলেকশন সবকিছুতেই ইরানিরা অনেক পটু এবং দক্ষ। ওখানে দেখেছি যাঁরা সিনেমা করেন তারা অন্য কিছু করেন না। যিনি সিনেমা করবেন- তাঁর ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুই সিনেমাকেন্দ্রীক। ইরানি চলচ্চিত্র অবশ্যই অনেক উন্নত। আমরা ছোটবেলা থেকেই ইরানি চলচ্চিত্র দেখতে দেখতেই বড় হয়েছি। এখনও আমাদের বাংলাদেশের অনেকগুলো চ্যানেলে ইরানি চলচ্চিত্র কিনে এনে বাংলায় ডাবিং করে চালানো হয়। আর এসব সিনেমার দর্শকপ্রিয়তা অন্যান্য সিনেমার চেয়ে অনেক বেশি। কান কিংবা অস্কার চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে ইরানি সিনেমার আলাদা একটা কদর থাকে বলেই আমার মনে হয়।

রেডিও তেহরান: ইরানি চলচ্চিত্র সম্পর্কে আপনি চমৎকার ও বাস্তবধর্মী মূল্যায়ন করলেন। তো জনাব সুমন ফারুক সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাইছি সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র ‘দ্য বর্ডার’ সম্পর্কে আপনি কিছু বলুন?

সুমন ফারুক: বর্তমানে আমি যে সিনেমাটি করেছি তার নাম হচ্ছে দ্য বর্ডার। একজন পুলিশ কর্মকর্তার জীবনকাহিনী নিয়ে তৈরি এ সিনেমাটি। এখানে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মূখ্য চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। সীমান্তে যারা বা যে দলগুলো ক্রাইম করে তাদেরকে আমি আমার সোর্সসহ গোটা টিম নিয়ে ধরতে যাই। সেজন্য আমাকে খুব বেগ পেতে হয়। আমার পূর্ববর্তী পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্রাইম দলগুলো বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে এবং হত্যাও করে। ফলে দুর্ধর্ষ ঐসব অপরাধী চক্রকে ধরতে গিয়ে আমাকে বিশেষ কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। যেমন আমি কিছুদিন অপরাধী চক্রের সাথে মিলেমিশে কাজ করি। এতে তারা বুঝতে পারে এই পুলিশ অফিসারটি আমাদেরই লোক। এরপর ধীরে ধীরে তাদের বিরুদ্ধে আমি প্রতিশোধ নেই। এটি একটি ভিন্ন ধারার গল্প। তৈরিটাও বেশ সুন্দর হয়েছে। এটি পুরোপুরি একটি বাংলাদেশের সিনেমা। এ ছবিটির পরিচালক ছিলেন সৈকত নাসির। তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনায় পুরস্কার পেয়েছেন। দ্য বর্ডার এর গল্প এবং নির্মাণ সবকিছুই আলাদা। আমার মনে হয় দর্শক ভিন্নধারার এই ছবিটিকে পছন্দ করবে।

রেডিও তেহরান: ভিন্নধারার মুভি 'দ্য বর্ডার' দর্শকনন্দিত হোক আমাদের প্রত্যাশাও তাই। তো জনাব সুমন ফারুক ইরানের চলচ্চিত্র শিল্প এবং আপনার অভিনীত মুভিগুলো সম্পর্কে আজকের এই কথোপকথনে অংশ নেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আর শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! আপনারা ভালো ও সুস্থ থাকুন আবারও এ কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি আলাপনের আজকের আসর।#

342/