‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
সোমবার

২৯ নভেম্বর ২০২১

৭:৩১:০৭ PM
1203496

সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করণ প্রতিরোধ আন্দোলনের দৃঢ়তায় প্রভাব ফেলবে না: নাসরুল্লাহ

যতদিন লেবানন ইসরায়েলের ক্রমাগত হুমকির মুখে থাকবে, ততদিন আমাদের স্বাধীনতার লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এ লড়াইয়ে অনেক ক্ষেত্রে আমরা বিজয়ীও হয়েছি।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গত শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় টেলিভিশনে প্রদত্ত এক ভাষণে লেবাননের অভ্যন্তরিন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন দেশটির হিজবুল্লাহ বাহিনীর প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ।

১৯৮৫ সালে প্রতিরোধকামী আন্দোলনের বিজয় তথা দখলদার বাহিনীর লেবাননের রাজধানীসহ দেশটির জাবাল লুবনান, সাইদা ও রাশিয়া এলাকা ত্যাগ করে চলে যাওয়া এবং ২০০০ সালের মহাবিজয় ও দক্ষিন লেবানন থেকে জায়নবাদী ইসরাইলের পলায়নের প্রতি ইঙ্গিত করে নাসরুল্লাহ বলেন: লেবাননের জনসাধারণের একটি বড় অংশ ঐ সময় দৃঢ়তা দেখিয়েছে এবং তারা বিভিন্নভাবে প্রতিরোধকামী আন্দোলনের প্রতি আস্থা রাখে।

ত্রুটিযুক্ত সার্বভৌমত্বের অধিকারী আমরা

লেবানন তার নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারে নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হচ্ছে আমাদের সার্বভৌমত্ব ত্রুটিযুক্ত। বিচার বিভাগ, রাজনীতি, নিরাপত্তা বিভাগসহ আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মার্কিনীদের স্পষ্ট হস্তক্ষেপের অর্থ হচ্ছে ত্রুটিযুক্ত সার্বভৌমত্বের অধিকারী আমরা।

যতদিন লেবানন ইসরায়েলের ক্রমাগত হুমকির মুখে থাকবে, এর অর্থ হল আমাদের স্বাধীনতার লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এ লড়াইয়ে অনেক ক্ষেত্রে আমরা বিজয়ীও হয়েছি। আমার বিশ্বাস, যদি আমরা কঠোর সংকল্প ও দৃঢ়তার মাধ্যমে এ পথ অব্যাহত রাখি আরও বড় বিজয় আসবে। নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এমন একদিন আসবে যেদিন আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং শর্তহীন স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হব।

তিনি বলেন: কিছু কিছু দেশে প্রতিরোধকামী আন্দোলন বা এর সদস্যদেরকে এমনকি গোটা মুভমেন্টকে সন্ত্রাসী তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের আচরণ আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করণ মধ্যপ্রাচ্যে ঘটমান ঘটনাবলী এবং আসন্ন সংসদীয় নির্বাচনের সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না।

জায়নবাদীদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করণসহ বেশ কিছু বিষয় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, যার শেষটি আমরা মরোক্কো’তে দেখলাম; অপরদিকে প্রতিরোধকামী আন্দোলনকে সমর্থনকারী সকলের জন্য প্রতিবন্ধকতা এবং তাদের উপর চাপ বৃদ্ধির বিষয়টিও আমরা প্রত্যক্ষ করছি।

প্রতিরোধ আন্দোলনকে সন্ত্রাসী তালিকাভূক্তকরণ, আন্দোলনের সংকল্প বা তারা যে সকল ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছে সেসব ক্ষেত্রে তাদের সতর্কতায় ঘাটতির কারণ হবে না।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত হিজবুল্লাহ

লেবাননে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন: করোনা সংক্রামণের শুরুতে আমরা একটি বিশেষ পরিকল্পনা ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করেছিলাম এবং তাতে আমরা সফলও হয়েছি। আজ বলতে চাই ঐ পরিকল্পনা ১০০ ভাগ বাস্তবায়ন করেছি। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত আরও বেশী চেষ্টা চালানো।

সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যের বলেন: বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

তিনি বলেন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোন রাজনৈতিক মুভমেন্টের সাথে সম্পৃক্ত তা আমাদের জন্য মুখ্য নয়; কেননা দেশ হুমকির মুখে। আর তাই আমরা পূর্ববর্তী সরকারকে যেভাবে সহযোগিতা করেছি বর্তমানেও করছি।

কিছু কিছু ঔষধে যে ভর্তুকি প্রদান করা হত সে বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত পূণঃবিবেচনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ঐ সকল ঔষধের ভর্তুকি তুলে দেয়া উচিত হবে না। আর এ খাতে সরকার অর্থ সংকটে রয়েছে এমন ওজুহাতও গ্রহণযোগ্য নয়। অপেশাদার এ সিদ্ধান্তের ফলে হাজার হাজার মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে, হাজার হাজার মানুষ এখনি মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এটিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় আবদ্ধ করা উচিত হবে না।

তিনি লেবাননের জনসাধারণ যাতে তাদের প্রয়োজনীয় ঔষধ সহজেই নাগালের মধ্যে পায় সে লক্ষ্যে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন ক্লিনিক সক্রিয় করার কথা জানান।

 ইরান থেকে জ্বালানি আমদানি

জ্বালানী স্বল্পতা চলাকালীন সময়ে পেট্রোল পাম্পগুলোতে দীর্ঘ লাইন, ব্লাক মার্কেট তৈরী (এর মত ঘটনায়) আমরা কথা দিয়েছিলাম যে, যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে পেট্রোল ও ডিজেল কেনার জন্য ইরানের দারস্থ হব। বর্তমানে পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে এবং কোন লম্বা লাইনও আর চোখে পড়ছে না। আমরা জনগণের ভোগান্তি দূর করতে এ পদক্ষেপ নিয়েছি।

আমার তেল কোম্পানীগুলোর জায়গা দখল করতে নয় বরং দেশের বিপর্যয় নিরসনে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে এ পদক্ষেপ নিয়েছি। জ্বালানী ভর্তি শত শত ট্যাঙ্কার বানিয়াস (সিরিয়া) থেকে বালাবাকে (লেবানন) স্থানান্তর করেছি, অথচ শহর দু’টির মধ্যকার দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। কিন্তু যদি (ইরানের) তেলবাহী জাহাজগুলো আয-যাহরানি অথবা ট্রাবলেস-এ আসতে পারত তাহলে আরও ভাল হত।

প্রথম পর্যায়ে আমাদের কাজ সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছিল, যা নভেম্বরে এসে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমরা কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম এবং এর মত বিভিন্ন কেন্দ্রে সরাসরি জ্বালানি পৌঁছে দিয়েছি।

দ্বিতীয় পর্যায়ের বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন: আমরা প্রতি ব্যারেল জ্বালানী প্রতিটি পরিবারকে বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে এক মিলিয়ন লিরা (লেবানিজ মুদ্রা) কম মূল্যে সরবরাহ করব। আমাদের লেনদেন হবে লিরা’র মাধ্যমে। আমাদের হাতে থাকা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে, লাখো পরিবার এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। আর এর বিতরণের সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আরও একটি তেলবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়বে। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। কেননা আমাদের লক্ষ্য হল মানুষর সমস্যা ও কষ্ট লাঘব করা। আমাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানীর একটি বড় অংশ লেবাননের পরিবারগুলোর প্রয়োজন মেটাতে খরচ হয়েছে, আর কিছু অংশ সিরিয়াতে স্টক করা হয়েছে; যেগুলো পর্যায়ক্রমে লেবাননে স্থানান্তরিত হবে।

হিজবুল্লাহ’র উপর আক্রমন

তিনি তার বক্তব্যে পরিকল্পিতভাবে হিজবুল্লাহ’র উপর আক্রমন প্রসঙ্গে বলেন: বিগত সপ্তাহ ও মাসগুলোতে হিজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ব্যাপক আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা হয়েছে, তবে এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ ধরণের আক্রমণকে আরও জোরদার করতে তারা ‘গোপন নথি’ নামক নতুন এক ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে, অথচ নথিগুলো হচ্ছে জাল ও বানোয়াট। এ সকল নথি জাল করার কাজে জড়িতরা পেশাদার এবং লেবাননের নাগরিক নয়, একইভাবে নথির কন্টেন্টগুলোও অত্যন্ত নোংরা। তবে সবচেয়ে আফসোসের বিষয় হল, কিছু কিছু মূর্খ লোক এ সকল নথির উপর ভর করে মন্তব্য করছে।

বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে সমালোচনা করে তিনি বলেন: এই প্রক্রিয়ায় মূল রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভবপর হবে না।

তিনি (আল-তাইওয়ানেহ এলাকায়) বিক্ষোভকারীদের উপর আক্রমণ সংশ্লিষ্ট মামলার বিষয়ে আদালতের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন: ঐ হামলায় বেশ কয়েকজন লেবানিজ শহীদ হয়েছেন।এ মামলার বিচারকদের উপর রাজনৈতিক দলগুলির চাপ সৃষ্টি মূলত শহীদ, হামলায় আহত এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর জন্য অসম্মানজনক। মামলার বিচারকদের উপর রাজনৈতিক দলগুলির চাপের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো প্রতিশোধ নিতে তৎপর হবে।#176