‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : parstoday
শুক্রবার

৩ ডিসেম্বর ২০২১

২:০০:৫৭ PM
1204655

সংসদে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ প্রণয়নের দাবি জানালেন বিজেপি এমপি

ভারতীয় সংসদে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি ওই দাবি জানিয়েছেন।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : এ প্রসঙ্গে আজ (শুক্রবার) পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়টি অনেকদিন ধরেই আলোচিত একটা দিক। কিন্তু আমরা এটাকে কার্যকর করতে কতটা চাচ্ছি এবং কতটা পারব সেটা নিয়ে যথেষ্ট ভেবে দেখার জায়গা আছে। যারা এটাকে সংবিধানে আনতে চেয়েছিলেন আমরা নিশ্চয় তাঁদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। কেননা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ভারতীয় সংহতির পক্ষে পজিটিভ হবে এটা হয়তো তারা ভেবেছিলেন। কিন্তু এখন বাস্তব যে অবস্থা তাতে আমরা বুঝতে পারছি যে  আমাদেরকে এখনও অনেক অপেক্ষা করতে হবে। কেননা বহু ভাষা, বহু জাতির মানুষ, বহু ধর্মের রয়েছে এই মানুষগুলো আমরা অবশ্যই চাইতে পারি যে আগামীদিনে নিশ্চয়ই আমরা ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’র মধ্যে আসবো। কিন্তু সেই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য আমাদেরকে অনেক অপেক্ষা করতে হবে। সত্তর বছরটা মোটেই যথেষ্ট সময় নয়।’   

তিনি বলেন, ‘যারা এটার জন্য দাবি করছেন আমরা তাদের সঙ্গে সহমত নই। যতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের আমাদের এই পরিচয়গুলোকে বহাল রেখে আমরা ভারতীয় থাকতে চাই, ততদিন পর্যন্ত নিশ্চয় এটা আমাদের জন্য শুভ হবে না। যদি এমন কোনও দিন সত্যিই আসে যেদিন আমাদের কাছে অন্য পরিচয়গুলো হয়ত অনেকটা লঘু হয়ে যেতে পারে। যদিও সেটা কে কীভাবে নেবেন সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা এটা বলব যে আমাদের ভারতীয় ঐতিহ্য, ভারতীয় সংস্কৃতি, সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতা ও বৈচিত্রতাকেই প্রশ্রয় দেয় এটাই তার নিজেস্বতা ও বৈশিষ্ট। আমরা নিশ্চয়ই চাইব এই বৈচিত্র বজায় রেখেই আমরা পথ হাঁটব। তাতে যদি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রবর্তিত বা প্রবর্তন করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকে আমরা সেই বাধাকে মেনে নিয়েই পথ চলব। আমাদের ভারতীয় সংহতি, আমাদের ভারতীয় যে জাতীয় ঐতিহ্য ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’-এটাই  আমাদের আমাদের মূল মন্ত্র। সারা পৃথিবীকে আমরা এই শিক্ষাই দিয়েছি।’   

অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আরও বলেন, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নাম করে আমাদের বহুচর্চিত ও বহু লালিত সেই ঐতিহ্যকে আমরা কিছুতেই আমরা বিসর্জন দিতে পারি না। কাজেই যারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে আমি মনে করি তাদের আরও ভেবে দেখার দরকার আছে। আমরা আইনকে বড় বেশি করে ভালোবাসব, না আমাদের জাতিসত্তাকে?  যে জাতিসত্তার কারণে আমরা সারা পৃথিবীর কাছে পরিচিত, ভারতবর্ষের সারা পৃথিবীর কাছে একটা অন্য পরিচয় আছে, সেই পরিচয়টাকে কী ভূলুণ্ঠিত করব একটা ‘বিশেষ আইন’কে সামনে আনার জন্য? বোধহয় এটা ভেবে দেখার দরকার আছে। যারা প্রশ্ন তুলছেন এবং যাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তুলছেন উভয়পক্ষই এটা নিয়ে ভেবে দেখবেন বলে আমি মনে করি।’ 

গত (বুধবার) সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় জিরো আওয়ারে বিজেপি’র ঝাড়খণ্ডের এমপি নিশিকান্ত দুবে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’  সংক্রান্ত বিল নিয়ে আসতে অনুরোধ করেন সরকারকে। সাধারণত, জিরো আওয়ারে পূর্বঘোষিত অ্যাজেন্ডা ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা কিংবা দাবি নিয়ে আলোচনা করে সরকার ও স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।জিরো আওয়ারে মৌখিকভাবে বিষয় উত্থাপন করার আগে লিখিতভাবে তা স্পিকারের দফতরে জমাও করতে হয়। স্পিকার অনুমতি দেওয়ার পরেই এমপিরা সেই বিষয়টি উত্থাপন করেন।    

সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার ১২ জন এমপি’র সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে  বিক্ষোভ চালিয়ে জাছেন বিরোধীরা। কয়েকটি দল ফসলের নূন্যতম সহায়ক মূল্য ও সংগ্রহমূল্য ইস্যুতে সরকারকে চেপে ধরছে। এ রকম সময়ে সংসদে বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবের উত্থাপন করা বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ নিয়ে বিগত কয়েকটি অধিবেশনে বিজেপি এমপি’রা দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। রাজ্যসভায় প্রাইভেট মেম্বার বিলও আনা হয়েছে। এবার লোকসভায় সরাসরি জিরো আওয়ারে তা তোলা হল।

বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে সংসদে বলেন, গত মাসেই এলাহাবাদ হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছে,  সংবিধানের ৪৪ নং ধারা নিয়ে কমিটি গঠন করতে। ওই ধারাতেই  অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথাও বলা হয়েছে। যার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্যই হবে একইরকম দেওয়ানি বিধি। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও কেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধির জন্য অপেক্ষা করতে হবে আমাদের? নিশিকান্ত দুবের এই দাবির পিছনে যে বিজেপি ও সরকারের প্রত্যক্ষ পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  

কৃষি আইনের পর ফসলের নূন্যতম সহায়ক মূল্য নিশ্চয়তা আইনের চাপ। অন্যদিকে, সম্মিলিত বিরোধীদের নানাবিধ ইস্যুতে বিক্ষোভ জারি। শীতকালীন অধিবেশনের শুরুই হয়েছে কৃষি আইন নিয়ে মোদি সরকারের পিছু হটার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। এবার  বিরোধীদের হাতে আরও যে কৌশল রয়েছে, তা অকার্যকর করতে কার্যত মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কারণেই সাত রাজ্যে নির্বাচনের আগে বিরোধীদের কী ধাক্কা দেওয়ার পথ খুঁজছেন নরেন্দ্র মোদি? সেই পথ কী হতে চলেছে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’? জাতীয় রাজনীতির অন্দরে সেইরকমই জল্পনা শুরু হয়েছে।#

342/