‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শুক্রবার

৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

১২:৩২:০৯ PM
1225835

আত্মহত্যা মহাপাপ! একটি আত্মহত্যা নাড়িয়ে দিল সবাইকে, এর দায় কার!

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম:

  • ওসি প্রদীপ-আতঙ্কের টেকনাফ এখন যেমন-প্রথম আলো
  • একটি আত্মহত্যা নাড়িয়ে দিলো সবাইকে -মানবজমিন
  • মির্জা ফখরুলসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ -ইত্তেফাক
  •  এমন অভিজ্ঞতা কারও জীবনে না আসুক ‘সবকিছু ভেঙে পড়ে’ ভয়ংকর অমানবিকতায় -যুগান্তর
  • খালেদা জিয়া সুস্থ হওয়ায় বিএনপি নেতারা হতাশ : তথ্যমন্ত্রী -কালের কণ্ঠ

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:

  • রাজপুরুষোচিত আচরণ প্রত্যাশিত রাজ্যপালের কাছে, জয়প্রকাশের তোপের মুখে ধনখড় -সংবাদ প্রতিদিন
  • এক দিনে ১৭ লক্ষ কোটি ক্ষতি! কেন হঠাৎ লাভ কমছে জাকারবার্গের সংস্থার-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • ‘ইস বার ৩০০ পার’, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির টার্গেট বেঁধে দিলেন অমিত শাহ -আজকাল

এবার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

আত্মহত্যা মহাপাপ। কোনো ধর্মই আত্মহত্যাকে সমর্থন করে না। আত্মহত্যা করা উচিত নয়।  মনোবিজ্ঞানের কথা আত্মহত্যা একটি রোগ। তাই বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেড়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ফেসবুক লাইভে থেকে মর্মান্তিক একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে গেল। এ সম্পর্কে দৈনিক মানবজমিনের শিরোনাম- একটি আত্মহত্যা নাড়িয়ে দিলো সবাইকে।

বিস্তারিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,ধানমণ্ডির ৭ এর একটি বাসায় একাই থাকতেন ব্যবসায়ী মহসিন খান। স্ত্রী এবং ছেলে থাকেন অস্ট্রেলিয়া। মেয়ে স্বামীর সংসারে। মহসিন খানের মেয়ের জামাতা জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রিয়াজ। বুধবার রাত পৌনে ১০টায় ফেসবুক লাইভে এসে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন মহসিন খান। তার এই আত্মহত্যার ঘটনাটি নাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে। একটি প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সদস্যের এমন মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা আলোচনা। কেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন তার অনেকটা ফেসবুক লাইভে বলে গেছেন মহসিন খান।

এ ছাড়া একটি সুইসাইডাল নোটও রেখে গেছেন। নোটে তিনি কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের আত্মহত্যার পেছনে শুধু ব্যক্তিই দায়ী নয়। এর পেছনে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র দায়বদ্ধ। যার যে দায়িত্ব সেটা পালন না করার কারণে বা বন্ধন ছিন্ন হওয়ার কারণে এমন সব ঘটনা ঘটে। মহসিন খানের আত্মহত্যার ঘটনাটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রবীণদের জন্য আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বোধের বিষয়টি।

মনোচিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল মানবজমিনকে বলেন, যাপিত জীবনে চারপাশের ‘লস ইভেন্ট’ তাকে বিষণ্নতায় আক্রান্ত করেছে। এই ধরনের মানুষকে কখনো একাকী রাখতে নেই। একদিকে ব্যবসায় লস, একদিকে বন্ধুর প্রতারণা বা টাকা মেরে দেয়া, আর্থিক দুর্গতি বা টাকা-পয়সার চিন্তা, অন্যদিকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, একাকী থাকা ধীরে ধীরে তাকে চরম বিষণ্নতায় নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় যেকোনো মানুষের ব্রেনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ, সেরোটোনিনের মাত্রা কমে যায়। তখন সে সবকিছু নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে। পজেটিভ কোনো চিন্তা করার ক্ষমতা প্রায় পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে। এই অবস্থায় স্বজনদের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো। তাকে চিকিৎসার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। তারা এই সামাজিক দায়িত্বটা পালন করেছেন বলে মনে হয় না। আত্মহত্যা সামাজিক ও পাবলিক হেলথ সমস্যা। এই দুইটির মিশ্রণে ঘটে গেছে বিয়োগান্তক ঘটনা। সেজন্য সামাজিক চিকিৎসার পাশাপাশি ব্যক্তির মনোচিকিৎসা দরকার। তাহলে আমরা সমাজে পরবর্তীতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা রোধ করতে পারবো। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে। 

তিনি বলেন, দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী এ ধরনের আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আছে। হতাশায় যারা ভোগে তারা বিষণ্নতার ঝুঁকি থেকে পরিকল্পিত আত্মহত্যার চিন্তা করে।

যখন মানুষ একাকী হয়ে যায়, আর্থিকভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে যায়, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায়, বিষাদ রোগে আক্রান্ত হয় তখন তার ভেতর থেকে আত্মহত্যার ইচ্ছা চলে আসে। তখন এ সকল মানুষের পাশে স্বজনদের দাঁড়াতে হবে। বন্ধু, সহকর্মী, সকলকে পাশে দাঁড়াতে হবে। সেটি হবে সবচেয়ে মানবিক কাজ। 

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, প্রতিটি মানুষের জীবনের ধরন ভিন্ন। একাকিত্ব, হতাশা এরকম নানা ধরনের সমস্যা থাকে। সমাজে এক শ্রেণির মানুষ যাদের আর্থিক দিক থেকে কোনো কষ্ট নেই সবদিক থেকে তারা স্বাবলম্বী। কিন্তু তাদের সঙ্গ বা বন্ধনের দিক থেকে একটি শীতল অবস্থায় রয়েছে। মহসিন খানের আত্মহত্যার পেছনের কারণ হলো তার সন্তান, পরিবার দূরে থাকা। পরিবার থেকে সে বিচ্ছিন্ন এবং নিজেও ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তাকে সঙ্গ দেয়ার মতো কেউ ছিলেন না। এটা মানসিকভাবে তিনি মেনে নিতে পারেননি। মেনে না নেয়ার পেছনে দেখা যায়, আমাদের দেশে অধিকাংশই জীবনের একটি বড় সময় অর্থের পেছনে ছুটে এবং আর্থিক স্বাবলম্বী এবং সক্ষমতার উজ্জ্বল সময়টা বিনিয়োগ করে। কিন্তু সেই অর্থের যোগ্যতার উন্নতি করতে গিয়ে বন্ধন অথবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কের জায়গা থেকে আমরা দূরে সরে যাই। সেখান থেকে ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি হয়। তখন পরবর্তী সময়ে সন্তানরা নিজের কর্ম ও অন্য পরিস্থিতির কারণে হোক অনেক সময় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কিন্তু যে ব্যক্তি একটি পরিবার তৈরি করলেন, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলেন সে একটি সময় গিয়ে দেখেন, অর্থ ছাড়া তারপাশে আর কেউ নেই তখন তিনি এটি মেনে নিতে পারেন না। তার মধ্যে একটি দুঃখবোধ ও বেদনা কাজ করে।

আত্মহত্যার দায় যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে তার একার নয়, এই দায় পরিবার, রাষ্ট্রের, সমাজের। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, আত্মহত্যা মানুষ মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে করে। যখন হতাশা, দুঃখ জীবনের ওপর ভর করে তখন আর মানুষ জীবন উপভোগ করে না। এরপরই মানুষ আত্মহত্যার চিন্তা করে। এর পেছনে দুই ধরনের কারণ ভর করে, একটি হচ্ছে বাইরের কারণ, অর্থাৎ তার পারিপার্শ্বিক আত্মীয়-স্বজন, নিজের ব্যক্তি জীবন এগুলো তার ভেতরে অন্তর্গত এক ধরনের দুঃখবোধ তৈরি করে। তার সন্তান এবং ব্যক্তিগত জীবন সবকিছু নিয়েই এক ধরনের অসুখী মনোভাব তৈরি হয়েছিলো। একদিকে যেমন নিজের উন্নতি করা এবং সন্তানদের উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেয়ার স্বপ্ন। অন্যদিকে জীবন-যাপনের উদ্দেশ্যে, আনন্দ এগুলো সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা। ফলে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এই আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে কিন্তু সেটিই তৈরি হয়েছে। তিনি একা থাকতেন একদিকে করোনার কারণে বিচ্ছিন্নতা, অন্যদিকে একাকী জীবন-যাপনের যে অভ্যাস সেটি সন্তানরা থাকে দূরে এবং অর্থনৈতিকভাবে অনিশ্চয়তা সবকিছু মিলে তার মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। মানুষের ভালো থাকার জন্য শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যকে মাথায় রেখে শুধু শারীরিক যত্ন না এর সঙ্গে মানসিক পরিচর্যাও থাকতে হবে। যদি সেটি না রাখা যায় তাহলে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।আপনার মতামত 

এমন অভিজ্ঞতা কারও জীবনে না আসুক ‘সবকিছু ভেঙে পড়ে’ ভয়ংকর অমানবিকতায়-যুগান্তর সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল আলম এ শিরোনামে লিখেছেন, ‘মৃত্যু এবং জীবন কিন্তু বিপরীত নয় বরং মৃত্যু হলো জীবনের অংশ।’-হারুকি মুরাকামি, ঔপন্যাসিক

১. আবু মহসিন খানের আত্মহত্যার ঘটনা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য এক ভয়াবহ বার্তা দিয়ে গেল। স্মরণের বন্ধন ছিন্ন করে বিস্মৃতির অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার জন্য এ জীবন ‘ত্যাগ’ নয়-এ যে কঠিন ‘ত্যাগ’। সমাজকে নাড়া দেওয়ার জন্য, মানবিক মূল্যবোধের গহিনে শেকড় ধরে টান দেওয়ার জন্য এক ব্যক্তির নিঃসংকোচ দুঃসাহস। বিষয়টি বেদনার, দুঃখের, কষ্টের-এতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবনের এমন অভিজ্ঞতা আর কারও জীবনে না আসুক-এটাই প্রার্থনা। তবু এ সত্য আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। জীবনকে বোঝার জন্য-‘মৃত্যুর দামে’ ‘জীবনকে কেনা’র জন্য।

একজন মানুষ যে কত একা, তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মহসিন খান। ৫৮ বছর বয়সি একজন মানুষ, যার একদিন সবই ছিল, সব আছে। কিন্তু আজ তিনি নেই। একদিন অর্থ ছিল, প্রভাব ছিল, বিত্তবৈভব ছিল। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ছিল, এখনো আছে। কিন্তু বহুদূরে আক্ষরিক অর্থে যেন ‘মহাসিন্ধুর’ ওপারে। এতদিন সব থাকার মতো দেখিয়েছে। আসলে কেউ নেই, কিছু নেই। 

৫৮ বছরের একজীবনে একবুক হাহাকার, শূন্য হৃদয়ের গোঙানি, ধূসর বেঁচে থাকার স্বপ্ন একজন মানুষকে কোথায় ভাসিয়ে নিতে পারে, তা মাত্র ১৬ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে তিনি বর্ণনা করেছেন। জীবনের এত কঠিন বাস্তবতার নিখাদ বুনুনি আর হতে পারে না। জীবন কি এমনই? ‘আমরা সবকিছু করি সন্তান এবং ফ্যামিলির জন্য।...অনেকদিন যাবৎ আমি মেন্টালি আপসেট। জীবনে প্রতারিত হতে হতে।...আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি, আমার মনে হয় না যে, এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবে, আমি মারা গেছি।...ছেলে বলেন, স্ত্রী বলেন, কেউই আপনার না।...নিজের ওপর নিজের এতটাই বিতৃষ্ণা হয়ে গেছে পৃথিবীতে এখন আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না।’

জীবনের এ কেমন অসহায় ভাষ্য। জানি না আর শুনব কি না।

মহসিন খান বুধবার (২-২-২২) রাত পৌনে ১০টায় নিজের বাসা ধানমন্ডিতে লাইসেন্স করা পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেছেন। পৃথিবীর কারোর প্রতিই তার কোনো অভিযোগ নেই। নির্ভার হয়ে এসেছিলেন পৃথিবীতে, একেবারেই নির্ভার হয়ে গেলেন। কিন্তু এই সমাজের, এই রাষ্ট্রের কি কোনো দায়িত্ব নেই। পরিবারের? আমরা এখন কোন পরিবারে বাস করি। কোন সমাজে আছি? পারিবারিক বন্ধন, মায়া-ভালোবাসা কি একেবারেই হারিয়ে গেছে? কর্তব্য বা দায়িত্ববোধের কথা না-ই তুললাম, আজ মানবিক মূল্যবোধটুকুও নির্বাসিত, হারিয়ে গেছে? আহারে মানুষ, বড় একা!

কখনো কখনো পিতা সন্তানকে চেনে না, সন্তান পিতাকে চেনে না। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে টান পড়ে। একটা বয়সে এসে কারও কারও কাছে চেনা মানুষ অচেনা হয়ে যায়। যেন কোনোদিন কেউ কাউকে দেখেনি, যেন কোনোদিনই কোনো সম্পর্ক ছিল না, হায়রে বন্ধন! রক্তের টানও ধরে রাখতে পারে না!

২. নানা প্রকার জন্ম-মৃত্যু নিয়েই সংবাদকর্মীদের কাজ। প্রতিদিনই খুন, জখম, আত্মহত্যা, মৃত্যু স্থান করে নেয় সংবাদপত্রের কলামে কলামে। এসব নিয়েই সাজানো আমাদের সংসার। আমরা এসব ঘটনাকে সিঙ্গেল কলাম, ডবল কলাম, থ্রি-সি, ফোর-সিতে সাজিয়ে প্রতিদিন পাঠকের দরবারে হাজির করি। সেই জন্ম-মৃত্যুর মিছিলে হঠাৎ একজন ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা খুব ছোট্ট একটি সংবাদমাত্র। কিন্তু কখনো কখনো সেই এক কলামের সংবাদও আমাদের হৃদয়কে রক্তাক্ত করে তোলে, আমাদের চিন্তাকে স্তব্ধ করে দেয়। আমরা হারিয়ে ফেলি জীবনের অর্থময়তা। জীবন একটি সক্রিয় সত্তা, সেই সক্রিয় সত্তার বিপরীত অস্তিত্ব মৃত্যু নয়-সে কথা এ লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছি-জাপানি কথাসাহিত্যিক হারুকি মুরাকামির জবানে। এটাই সত্যি যে, মৃত্যু আমাদের জীবনের অনিবার্য অংশ। কিন্তু অপমৃত্যু তা নয়। অপমৃত্যু জীবনের অংশ নয় বলেই আমাদের তা সিঙ্গেল, ডি-সি, থ্রি-সিতে বিন্যস্ত করতে হয়।

৩. বুধবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে ব্যবসায়ী আবু মহসিন খানের নিজের লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে আত্মহত্যার দৃশ্য আমাদের চিন্তার ক্ষমতাকে ঘূর্ণাবর্তের মতো এলোমেলো করে দিয়েছে। অভাবনীয় এমন লাইভে এসে মৃত্যু এটাই প্রথম নয়। ইতঃপূর্বে এক যুবক আদাবরে তার স্বজনদের ওপর অভিমান করে স্বজনদের এমন লাইভে রেখে ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যা করে নিজের জীবনদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। তারও কিছুদিন আগে বোধকরি রাজধানীর ভাটারায় এক তরুণ তার প্রেমিকার ওপর অভিমান করে তাকে লাইভে রেখে ফাঁসিতে ঝুলেছে। এবার সেরকম দৃশ্য আমরা দেখলাম ধানমন্ডিতে একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব পরিণত বয়সি মানুষ মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে নিজে নিজে তার জীবনের গতি থামিয়ে দিলেন।

এই মৃত্যু সত্যিই বেদনার্ত করে সাধারণ মানুষকে। আমরা যারা নিজেদের সুস্থ মানুষ বলে দাবি করি তাদের ‘সুস্থতাকে’ প্রশ্নবিদ্ধ করে। ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ-এসব ঘটনাকে তার ধৈর্যের সীমানায় নিতে পারেননি। বলেছেন সে কথা তার ‘সুইসাইড লাইভে’। এই যে অনাস্থা, সেটা তো আরও ভয়ংকর। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনকে অনাত্মীয়রূপে অনুভব করা তো এক ভয়ংকর বাস্তবতা।

এই ভয়ংকর বাস্তবতাই কি আমাদের সমাজের অংশ হয়ে উঠছে? তাই তো সত্য মনে হয়। না হলে কেমন করে বন্দুকযুদ্ধে নিহত জনপ্রতিনিধি একরামের অবোধ সন্তানেরা এ কথা বলতে পারে-‘ভূতকে ভয় লাগে না, মানুষকে ভয় লাগে।’ জনপ্রতিনিধি একরামের অবুঝ শিশুরা তাদের জীর্ণ দেওয়ালে, মার্কারের কালিতে উৎকীর্ণ করেছে এই ভীতির কথা। ‘মানুষ’ এমনই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে-মানুষেরই কাছে! এই সত্য কী করে অস্বীকার করতে পারি আমরা? সভ্যতার এই ‘গভীর অসুখ’কে কী করে অস্বীকার করা সম্ভব।

‘যুক্তরাষ্ট্র আর নিষেধাজ্ঞা দেবে না-যুগান্তর

বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আর বাড়াবার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর নিষেধাজ্ঞা দেবে না। অন্য কোথাও এর প্রভাব পড়বে না। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে আমরা যে সাড়া পেয়েছি তাতে আর নিষেধাজ্ঞার কোনো আশঙ্কা দেখি না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র যখন র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন থেকেই আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও ট্রেজারি বিভাগের কাছে চিঠি দিয়ে কারণ জানতে চেয়েছি। তারা আমাদের চিঠির উত্তর দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বন্ধু দেশের কাছে প্রত্যাশা করতেই পারি, তারা এর বিস্তারিত কারণ আমাদের জানাবে। এজন্য আমরা তাদের অনুরোধ করেছি।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। 

এক প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার আলম বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কেউ কেউ সস্তা রাজনীতি করতে চাইছেন। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল বলছেন, ‘এবার জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা দেবে’। কেউ বলছেন- ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা দেবে’। এভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা আর বাড়াবে না বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।

সিঙ্গেল তোষক ৩৩০০ টাকা!-মানবজমিনের শিরোনাম

যশোর কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের আসবাবপত্র কেনার জন্য সরকারি বরাদ্দের ১৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি বরাদ্দের এই টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে যশোরের সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সখিনা বেগমের বিরুদ্ধে। তিনি একটি সিঙ্গেল তোষকের ক্রয় মূল্য দেখিয়েছেন ৩ হাজার ৩শ’ টাকা। যা যশোরের স্থানীয় বাজারে সর্বোচ্চ ৩শ’ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে হরহামেশা। এছাড়া টিভি, ফ্রিজ, খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, স্টিলের ফাইল কেবিনেট, পড়ার টেবিল, কম্পিউটার ও কম্পিউটার টেবিল, ফটোকপিয়ার মেশিন, স্ক্যানার মেশিন, ফ্যাক্স মেশিনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

দুর্নীতি হচ্ছে আগেও এ ধরনের অনেক বড় বড় খবর হয়েছে। সে সব খবরের বর্তমান অবস্থা কি তা হয়তো জানা যাচ্ছে না কিন্তু মূল যে বিষয়টি দুর্নীতি তা যে বন্ধ হয়েছে বা খুব একটা চিত্রের পরিবর্তন হয়েছে তা বলা যাবে না।

তবে সেতুমন্ত্রী কড়াভাষায় বলেছেন,    ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে’। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না।

ওসি প্রদীপ-আতঙ্কের টেকনাফ এখন যেমন-প্রথম আলোর এ খবরে লেখা হয়েছে, টেকনাফের চা-দোকান, বাসস্টেশন, থানা—যেখানেই মানুষের জমায়েত, সেখানেই আড্ডা-আলোচনার বিষয়বস্তু তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশের লোমহর্ষক নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা হয়। টেকনাফ পৌরসভার ওপরেই বাজার। দুপুর ১২টার কাছাকাছি। আল মদিনা চা-দোকানে ১৩ থেকে ১৪ জন ক্রেতা।বাজারের মাছ বিক্রেতা সাহাব  উদ্দিন চা খেতে খেতে বললেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না?

সাহাব উদ্দিনের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে পাশে থাকা শুক্কুর আলী (৩০) বললেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রদীপের ফাঁসির রায় হয়েছে। টেকনাফের মানুষ এ রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। তাঁর আতঙ্কে টেকনাফের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল, কখন কাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলে! শুক্কুর আলীর পাশে থাকা হোটেল কর্মচারী সেলিম (২৮) বলে ওঠেন, এখন দ্রুত রায় কার্যকর হলেই হয়।

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

‘ইস বার ৩০০ পার’, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির টার্গেট বেঁধে দিলেন অমিত শাহ-আজকাল

উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে ৩০০ আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। শুক্রবার এক নির্বাচনী জনসভায় ঘোষণা করে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। গোরক্ষপুরে দলীয় প্রার্থীদের জন্য টার্গেট বেঁধে দিয়ে শাহ বললেন, ‘উত্তরপ্রদেশে ইস বার ৩০০ পার।’২০১৭ বিধানসভা নির্বাচনে যোগীর (Yogi Adityanath) রাজ্যে বিজেপি জিতেছিল ৩১২টি আসন। সেই বিপুল সাফল্য এবার ধরে রাখাটা বিজেপির জন্য বেশ কঠিন কাজ হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অখিলেশ যাদবরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। তাঁদের দাবি, বিজেপিকে সরিয়ে এবার তাঁরাই ক্ষমতায় আসবেন। তাল ঠুকছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও (Priyanka Gandhi)। অধিকাংশ সমীক্ষাতেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ক্ষমতা ধরে রাখলেও বিজেপির আসন সংখ্যা অনেকটাই কমবে। কিন্তু অমিত শাহ বলে দিচ্ছেন, তিনশোর নিচে থামবে না বিজেপি। তাঁর বক্তব্য, বুয়া-ভাতিজার আমলে যে অরাজকতা, গুণ্ডারাজ উত্তরপ্রদেশে চলেছে, সেটা শেষ করেছেন যোগী আদিত্যনাথ।

বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, এরাজ্যে দু’শোর বেশি আসন পাবে বিজেপি। গেরুয়া শিবির সাকুল্যে পেয়েছে ৭৭ টি আসন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে যেতে পারেনি গেরুয়া শিবির। আর শুধু বাংলা কেন? আরও অনেক রাজ্যেই শাহ ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে যেতে পারেনি বিজেপি। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে দলকে তিনি টার্গেট দিয়েছিলেন ষাটের বেশি। দল জিতেছে মোটে আটটি। ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি দলকে টার্গেট দিয়েছিলেন ষাটের বেশি আসন জেতার। সেখানে এসেছে মাত্র ২৫টি।

এক দিনে ১৭ লক্ষ কোটি ক্ষতি! কেন হঠাৎ লাভ কমছে জাকারবার্গের সংস্থার-আনন্দবাজার পত্রিকা

জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে ছন্দপতন। দীর্ঘ ১৭ বছর পরে এই প্রথম বার মার্ক জাকারবার্গের মালিকাধীন সংস্থার ব্যবহারকারীর সংখ্যা এই পরিমাণে কমল। যার আঁচ এসে পড়ে ফেসবুকের অভিভাবক সংস্থা ‘মেটা’র উপরেও।ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় মেটার লভ্যাংশ এক ধাক্কায় অনেকটাই কমেছে। ধাক্কা খেয়েছে এই সংস্থার বিজ্ঞাপন ব্যবসাও।এই স‌ঙ্কটের সময়ে বৃহস্পতিবার সবথেকে বড় ধাক্কা খেল এই সংস্থা। বৃহস্পতিবার এই সংস্থার শেয়ারের দাম কমল প্রায় ২৬ শতাংশ। ফলে এক দিনে এই সংস্থার বাজারমূল্য প্রায় ১৭ লক্ষ কোটি টাকা কমেছে।

রাজপুরুষোচিত আচরণ প্রত্যাশিত রাজ্যপালের কাছে, জয়প্রকাশের তোপের মুখে ধনখড়-সংবাদ প্রতিদিন

রাজ্য বনাম রাজ্যপাল সঙ্ঘাতে অপ্রত্যাশিত মোড়। এ বার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে বিঁধে টুইট করলেন বরখাস্ত হওয়া বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। প্রশ্ন তুললেন, রাজ্য-রাজ্যপাল সঙ্ঘাতে বাংলা উপকৃত হচ্ছে কি? মানুষ রাজ্যপালের কাছে আরও রাজপুরুষোচিত (স্টেটসম্যান) আচরণ প্রত্যাশা করে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন জয়প্রকাশ। সাংবাদিক বৈঠক করে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। দল তাঁকে বরখাস্তও করেছে।#

342/