‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
রবিবার

১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

১০:২১:১৭ AM
1228986

ভারতে হিজাব বিতর্ক: মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সোচ্চার হবার আহ্বান

ভারতের বিজেপিশাসিত কর্ণাটকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠােন শুরু হওয়া হিজাব বিতর্ক রাজনৈতিক অঙ্গন এবং বিচার বিভাগকেও জড়িয়ে ফেলেছে। দেশের বাইরে থেকেও প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হচ্ছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : কর্নাটকের কয়েকটি কলেজ গত সপ্তাহে ক্লাসরুমে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করার পর থেকেই উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার কুন্ডাপুরে হিজাব পরিহিত  কয়েকজন মুসলিম ছাত্রীদের কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া এবং এক মুসলিম ছাত্রীকে হেনস্থা করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ভারতজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। রাজ্যে মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব পরা নিয়ে প্রতিবাদ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রাজ্যে কর্তৃপক্ষ তিন দিনের জন্য সব হাইস্কুল এবং কলেজ বন্ধ করে  দেয়।

এদিকে, ভারতের স্কুল ও কলেজগুলোতে হিজাব পরা নিয়ে দেশটির মুসলিম শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধান বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একাধিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ এবং পরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সমাবেশে অংশ নিয়ে পটুয়াখালী ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সাবেক শিক্ষার্থী জয়দেব চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। ভারতে যাঁরা এই কাজ করছেন, তাঁদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। এ ঘটনার জন্য আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে খুব লজ্জাবোধ করছি। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।'

ঐদিন সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল করীম।

এ প্রসঙ্গে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব এবং দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউল  রহমান  রেডিও তেহরানকে বলেন, হিজাবের বিষয়টি মুসলিম নারীদের জন্য ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী যেমন বাধ্যবাধকতা তেমনি সেটা তাদের মৌলিক অধিকার। এটা কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। তিনি মনে করেন, একটি  মুসলিম দেশ হিসেবে এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশকেও এ ব্যাপারে নিরব থাকার সুযোগ নেই।

অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন জাতীয় তাফসীর পরিষদ, বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম। তিনো আশা করেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে অবশ্যই সোচ্চার হবে। 

ওদিকে, আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা (আইআরএফ) সংস্থা কর্ণাটকে কলেজ ক্যাম্পাসে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার দাবি বিতর্কের জন্য সেখানকার  রাজ্য  সরকারের সমালোচনা করেছে। এছাড়াও অন্য দেশের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সমালোচনা করা হয়েছে। নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইও এই বিষয়ে ভারতের সমালোচনা করেছেন।

সম্প্রতি পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেছেন, “হিজাবকে কেন্দ্র করে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা মৌলিক মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন”

ভারতের মুসলিম ছাত্রীরা বলছেন, তারা বহু বছর ধরে হিজাব পরেই ক্লাস করছেন, এটি তাদের ধর্মীয় বিধানের অঙ্গ।

কর্ণাটকের ‘হিজাব’ বিতর্ক নিয়ে বিশ্বব্যাপী যখন তোলপাড় চলছে তখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কর্ণাটকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ‘ড্রেস কোড’ সংক্রান্ত বিষয়টি এখন সে রাজ্যের হাইকোর্টের বিবেচনাধীন।

তবে, হিজাব মামলা জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি শীর্ষ আদালত বলেছেন, হিজাব বিতর্ক দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেবেন না। সময় এলে এর শুনানি হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ধর্মীয় পোশাক’ নয়, এমনই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়ে কলেজ খুলে দিতে বলেছিলেন কর্ণাটক হাইকোর্ট। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন এক শিক্ষার্থী। আদালতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি।

একই সাথে শুধু মুখের কথা শুনে কোনো রকম প্রতিবেদন না করার জন্য সাংবাদমাধ্যমকে নির্দেশে দিয়েছেন আদালত। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আচারণে চরম সংযম বজায় রেখে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পুলিশকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলেছেন, মাথায় স্কার্ফ পরা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কি না তা বিবেচনা করছি। সেই সঙ্গে এটি ধর্মীয় অনুশীলনের অংশ কি না তাও বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।#

342/