‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শনিবার

১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২

১১:৩৭:২৭ AM
1231201

মুসকানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সন্তানদের নিয়ে মা-বাবাদের ভিড়

ভারতে বিজেপিশাসিত কর্ণাটকে হিজাব ইস্যুতে 'পোস্টার গার্ল' হয়ে ওঠা মুসকান খানের বাড়ি বর্তমানে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ মুসকানের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। এর উদ্দেশ্য হল মুসকানকে তাদের সন্তানদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, যাতে তারাও মুসকানের মতো হওয়ার চেষ্টা করে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে মুসকানের কথা বুঝতে এবং তাকে কাছ থেকে জানতে সম্প্রতি তার বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। কর্ণাটকের দুটি বড় শহর, ব্যাঙ্গালোর এবং মহীশূরের মধ্যে অবস্থিত মান্ডা একটি শান্ত শহর। হিজাব বিতর্কের কেন্দ্রস্থল উডুপি থেকে সাড়ে তিনশ’ কিলোমিটার দূরে এই শহর, কিন্তু এই বিতর্কের উত্তাপ এখানেও রয়ে গেছে। এখানকার সাদাত নগর এলাকাটি একটি সাধারণ মুসলিম এলাকা, যা আজকাল কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এখানে মুসকানের বাড়িতে অনেক হৈচৈ। দলে দলে নারী-পুরুষের একটানা আনাগোনা চলছে। তাদের সঙ্গে হিজাব পরা ছোট ছোট মেয়েদের হাত ধরে আসতে দেখা গেছে। মুসকানের সঙ্গে দেখা করে ফেরা মেয়েদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এই মেয়েরা নিজেদেরকে এত সুন্দর করে ঢেকে রেখেছে যে চোখও ঠিকমত দেখা যাচ্ছিল না।     

মুসকানের নতুন করে পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। গত ৮ ফেব্রুয়ারি,  মান্ডিয়ার পিইএস কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের বিকম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুসকানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিলেন। ভিডিওতে, গেরুয়া চাদর পরা একদল উন্মত্ত যুবককে তাকে ঘিরে ধরতে দেখা যায় এবং 'জয় শ্রী রাম' স্লোগানের জবাবে মুসকানকে পূর্ণ শক্তিতে 'আল্লাহু আকবর'  ধ্বনি দিতে দেখা যায়।  কয়েক সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় নিয়ে এসেছে মুসকানকে। মুসলিম সংগঠনগুলো তাকে পুরস্কৃত করেছে। হিজাব ইস্যুতে বিক্ষোভের সময়ে তার ছবি সম্বলিত পোস্টার দেখা গেছে। বাড়িতে বাড়িতেও তা লাগানো হচ্ছে।  

সাদাত নগরের তিনতলা বাড়িতে বাবার পুরনো টিভি মেরামতের দোকান। ছোট ভাইয়ের একটি জিম আছে, যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বাড়ির এক অংশে ভাড়াটিয়ারাও থাকেন। মুসকানের বাড়িতে যেখানেই জায়গা আছে সেখানে ফুলের তোড়া আছে। তার হিজাব পরা এবং প্রতিবাদী হাত উপরে তোলা কয়েক ডজন পোস্টার দেওয়ালে টাঙানো আছে। ঘরের কোথাও কোনো খালি জায়গা নেই। সেখানে অভিনন্দনকারীদের ব্যাপক ভিড়। মানুষ তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছে। কেউ এসেছেন ব্যাঙ্গালোর থেকে, কেউ এসেছেন মহীশূর থেকে পুরো পরিবার নিয়ে। কেউ শহরেরই পাশের এলাকা থেকে এসেছেন, আবার কেউ দূরের গ্রাম থেকে তাদের মেয়েদের নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তার পরিবারে গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তার বাবা বলেছেন, গণমাধ্যম তার মেয়ের ভুল ছবি তুলে ধরছে। তবে সব ব্যস্ততার মধ্যেও গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হন মুসকান।  

প্রশ্ন : কী হয়েছিল সেদিন? 

মুসকান খান : সেদিন আমি যখন গিয়েছিলাম, ওই ছেলেরা 'জয় শ্রী রাম' বলে চিৎকার করছিল। আমাকে বলেছে বোরকাটা খুলে ফেলো। ভেতরে যেতে লাগলাম। আমি ভাবছিলাম যে আমার কিছু করা উচিত নয়, সোজা ক্লাসে চলে যাই, কিন্তু তারা আমার সামনেই আসছিল। গেরুয়া চাদর সামনে এনে বলছিল, 'জয় শ্রীরাম-জয় শ্রীরাম',  তখন আমি আমার আল্লাহর কথা স্মরণ করে বলেছিলাম, ‘আল্লাহু আকবর’।     

প্রশ্ন : ওই ছেলেগুলো যখন আপনাকে অনুসরণ করছিল তখন কী মনে হচ্ছিল?  

মুসকান খান : আমার আল্লাহ আমার হৃদয়ে আবেগ জাগিয়েছেন, আমি আমার আল্লাহকে স্মরণ করেছি এবং আমার আল্লাহ আমাকে শক্তি ও সাহস দিয়েছেন।       

প্রশ্ন : আপনি যা বলেছেন সেটাকে ধর্মীয় স্লোগান হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং অনেকেই এর সমালোচনা করছেন। ভবিষ্যতে যদি কখনো এমন হয়, তাহলে কী আবার ওই ধ্বনি  দেবেন?  

মুসকান খান : না। কিন্তু আমি কোনো ধর্মীয় স্লোগান দিচ্ছিলাম না। আমি বিপদের মধ্যে ছিলাম এবং আল্লাহকে স্মরণ করে ‘আল্লাহু আকবর’ বলেছিলাম। আমার আল্লাহ আমাকে অনেক শক্তি দিচ্ছেন এবং আমি আমার আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।#  

342/