‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শনিবার

২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২

৮:২০:৪৩ AM
1233528

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়বে ভারতে

রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করায় সেদেশে আটকে পড়া কমপক্ষে ১৮ হাজার ভারতীয়কে উদ্ধারের চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলেছেন এবং ইউক্রেনে ভারতীয় নাগরিকদের বিশেষ করে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন বলেছেন, ‘আকাশ পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা ভারতীয়দের বিমানে ফেরানোর চেষ্টা বন্ধ করেছি। এখন বিকল্প পথের সন্ধান করা হচ্ছে।’         

এ দিকে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু মানুষ ইউক্রেনে আটকে পড়েছেন। আটকে পড়াদের মধ্যে অনেকেই ডাক্তারি পড়তে যাওয়া ছাত্র রয়েছেন।

এ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আজ (শুক্রবার) বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তিনি জানিয়েছেন, এদেরকে কীভাবে তাড়াতাড়ি পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু ইতোমধ্যেই যুদ্ধ শুরু হয়েছে গেছে, সেজন্য ওরা বিমান বন্দরে এসেও সেখান থেকে ফিরে চলে গেছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। স্বাভাবিকভাবে আমরাও খুব উদ্বিগ্ন! বাড়ির লোকেরাও উদ্বিগ্ন! ইউক্রেনে বাংলার যারা  আছেন তাদের বিষয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উদ্বিগ্ন! তাদের দ্রুত নিরাপদে সেখান থেকে উদ্ধার করে আনার চেষ্টা চলছে।’    

এদিকে, ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনতে স্থলপথে উদ্ধার অভিযানেই জোর দিচ্ছে নয়াদিল্লি। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং রোমানিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতীয় দূতাবাসের চারটি প্রতিনিধি দল এরইমধ্যে পৌঁছে গেছে এ সব দেশের সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্তে। ভারতীয়দের স্থলপথে ইউক্রেন থেকে বের করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ওই সব দেশের সরকারের সহযোগিতায়। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।    

গতকাল (বৃহস্পতিবার)সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রীকে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ও অন্যরা। 

ভারতের পরধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধি ওই ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘বিশ হাজার ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সরকার সেটা নিশ্চিত করুক।’   

কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টার্গেট করে এক বার্তায় বলেছেন, ‘করোনার সময়ে ওঁর ডাকে মানুষ হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পায়ে হাঁটতে বাধ্য হয়েছিলেন। আজ ইউক্রেন নিয়ে তার নীরবতা ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর জীবন বিপন্ন করেছে। সঙ্কটের সময়ে মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটাই কী মোদি মডেল?’    

ইউক্রেনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পার্থ সৎপথী এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য দেওয়া পরামর্শে বলেছেন, ‘যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। কোথাও যেতে গিয়ে আটকে পড়লে ফের নিজের আগের বাসস্থানে ফিরে যান। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে সংযোগে থাকুন। সর্বোপরি অশান্ত হবেন না, এই সঙ্কটে মাথা ঠান্ডা রাখুন।’   

অন্যদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে ভারতের আমদানি-রপ্তানি ধাক্কা খেতে বাধ্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অধিকন্তু ন্যাটো বাহিনী যদি সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধে জড়ায়, নিশ্চিতভাবেই শোচনীয় অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে ভারতের বাণিজ্যিক স্বার্থেও বড় ধাক্কার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশ, ইউক্রেন হল ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর বড় বাজার। কিয়েভের ভারতীয় দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে র‍্যানব্যাক্সি, ডক্টর রেড্ডিজ ল্যাব, সান গ্রুপসহ বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থার দফতর রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের হিসাব বলছে, ২০২০ সালে ইউক্রেনে ১৫ কোটি ৮১ লাখ ডলারের ওষুধ রফতানি করেছে ভারতীয় সংস্থাগুলো। সামগ্রিকভাবে ইউক্রেনে ভারতের রফতানির পরিমাণ ৪৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। অন্যদিকে, ইউক্রেন থেকে সামগ্রিক আমদানির পরিমাণ ২০০ কোটি ডলারের বেশি। ওষুধ ছাড়াও ভারত বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, প্লাস্টিক, তৈলবীজ, দানাশস্য, বীজ, ফল ও রাসায়নিকসহ বিভিন্ন পণ্য ইউক্রেনে রফতানি করে। আমদানি হয় সূর্যমুখীতেল, সারসহ বিভিন্ন পণ্য।   

শুধু ইউক্রেন নয়, বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার সঙ্গেও ভারতের আমদানি-রফতানিতে বড় ধাক্কা আসতে পারে। রাশিয়ায় ভারতের রফতানির সামগ্রিক পরিমাণ ২৫০ কোটি ডলার। রাশিয়া থেকে ভারতে আমদানির পরিমাণ ৬৯০ কোটি ডলার। রাশিয়ায় রফতানি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন, ওষুধ, চা ইত্যাদি। রাশিয়া থেকে ভারত আমদানি করে অশোধিত তেল, কয়লা ও হীরের মতো পণ্য। #  

342/