‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
সোমবার

২১ মার্চ ২০২২

৪:০০:০৫ PM
1241292

বাংলাদেশে ভোগ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি: সংকটে নিম্ন আয়ের মানুষ

আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে ভোগ্য পণ্যের মূল্য কয়েক গুণ বেশি। দেশে বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার অভাব, চাহিদা-জোগান সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকাসহ বেশ কিছু কারণকে এজন্য দায়ী করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকগণ।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) :গতকাল (রোববার) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তারা এসব ধারনা ব্যক্ত করেছেন।

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতির বড় ঝুঁকি হচ্ছে—একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অন্যদিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমছে। টিসিবির ট্রাকের পেছনে যে বড় লাইন, সেটিই বলে দেয় নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্কট কতটা বেড়েছে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বহিঃখাত অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে বৈশ্বিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম ওঠানামার সঙ্গে বাংলাদেশও সম্পর্কযুক্ত। দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টে গত সাত মাসে যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তাতে এত বড় চ্যালেঞ্জ আর আসেনি। জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত লেনদেনের ভারসাম্য ছিল মাইনাস দুই বিলিয়ন ডলার, যা তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ছয় বিলিয়ন ডলার। এর অর্থ হলো প্রায় আট বিলিয়ন ডলার কমেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে খাদ্যপণ্যের দাম অত্যন্ত বেশি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, মিনিকেট, পাইজাম ও মোটা চালের দামই ঊর্ধ্বমুখী। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশে চালের দাম বেশি। 

এদিকে, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বারে তেমন একটি পণ্য ছোলার দামেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন- রোজার আগে এ পণ্যটির দাম আর বাড়বে না।

এদিকে, রোববার (২০ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ তেল আমদানিকারক ও রিফাইনারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে শেষে জানিয়েছেন, সয়াবিন তেলের দাম কমানো হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী সয়াবিনের দাম, খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোতলজাত ৫ লিটার তেলের দাম ৩৫ টাকা কমে হয়েছে ৭৬০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা কমিয়ে ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা, ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৭৯৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা।

বাণিজ্যসচিব বলেন, আগামীকাল থেকে মিলগেটে এই মূল্য কার্যকর হবে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে কার্যকর হতে আরও পাঁচ-ছয়দিন সময় লাগতে পারে। পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত এই দাম বহাল থাকবে। আমাদের রিফাইনারির সবাই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। আমরা আবার মে মাসে বসবো, বসে আন্তর্জাতিক বাজার দেখে এক মাসের গড় নিয়ে মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

জামায়তে ইসলামীর বিক্ষোভ

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কতোয়ালী থানা শাখা।

সোমবার সকালে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর পুরান ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, ডিম, গোশত ও তরিতরকারিসহ সবকিছুতেই অগ্নিমূল্য। সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও বাজার সিন্ডিকেটের কারণেই দেশে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্টরা জড়িত থাকার কারণেই সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে জনদুর্ভোগ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলেও সরকারের মন্ত্রীরা আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত থেকে জনগণকে নিয়ে পরিহাস শুরু করেছেন। তিনি অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

তিনি আরো বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সারা বছর লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে জনগণের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ক্ষমতাসীনদের অপরিকল্পিতভাবে দফায় দফায় তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনজীবনের সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সরকার সংশ্লিষ্টদের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। মূলত, সরকারের উদাসীনতা ও ব্যর্থতার কারণেই সার্বিক মূল্য পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। সুদ-ঘুষ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এই সরকার মানুষের ন্যায্য কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। কারণ তারা অনির্বাচিত বিনাভোটের সরকার। দেশের মানুষের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।#

342/