‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

১৪ এপ্রিল ২০২২

১০:৩৮:২১ AM
1247893

বাংলাদেশে খুন-গুমের বিষয়ে বিএনপি ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, সরকারের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আবারো অভিযোগ করে বলেছে, আওয়ামী সরকারের আমলে তাদের ছ’শ নেতাকর্মীকে খুন বা গুম করা হয়েছে এবং ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা, বানোয়াট এবং গায়েবী মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) :গতকাল (বুধবার) রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জে আড়াইহাজার থানা বিএনপি’র সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন অভিযোগ করেন।

এদিকে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২১ প্রকাশ করা হয়।

এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নাগরিকদের প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ, রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার এবং অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তির ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি তদন্তের প্রতি সরকারের বৈরী মনোভাব, বৈষম্য ও সামাজিক হয়রানি ও শ্রমিক অধিকারের ব্যাপারে মন্তব্য করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিপীড়ন, হত্যা ও দুর্নীতির খুব কমসংখ্যক ঘটনাতেই তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যাকে খুশি তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে, বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দল বা ভিন্নমতাবলম্বীদের। আইন অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক কর্মকর্তার কাছে আটক ব্যক্তিকে উপস্থাপনের কথা, সেটা সব ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। বিচার বিভাগেও দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঘটছে। আদতে সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়।   

বাংলাদেশে কথা বলার স্বাধীনতা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাও বিধিনিষেধের জালে আটকে আছে বলে মার্কিন প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে বলা হয়, বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে কর্তৃপক্ষ

মার্কিন সরকারের রিপোর্ট উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন স্টেশন এবং ওয়েব পোর্টালসহ মোট ৪৮টি মিডিয়া আউটলেটের মালিক মোট ৩২টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতাসীন দল তাদেরকেই টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছে, যারা সরাসরি এই দলের সঙ্গে যুক্ত অথবা ২০০৯ সাল থেকে প্রশ্নাতীতভাবে শাসকগোষ্ঠীর প্রতি অনুগত। 

তবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, মার্কিন প্রতিবেদনে তথ্যবিভ্রাট ঘটেছে। তিনি বরাবরই বলে আসছেন, বাংলাদেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যা ঘটেনা। এ দফায়ও তিনি একটু ঘুরিয়ে বলেছেন, ‘২০২১-এ যে পরিমাণ গুম-খুনের কথা এখানে বলা হচ্ছে, আমাদের রেকর্ডে সে পরিমাণ নেই। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা যদি কেউ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন, নিরাপত্তা বাহিনী আত্মরক্ষায় যদি গুলিও করে; প্রতিটি ঘটনায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করেন। এতে যদি ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলেই আমরা সেই বিষয়টি ক্লোজ করে দিই। আর যদি ম্যাজিস্ট্রেট মনে করেন এখানে ঘটনাটি অন্যায় বা অসতর্কতায় হয়েছে, সেটা আমরা বিচার বিভাগে পাঠিয়ে দিই।’

বিচার বিভাগ ব্যবহার করে রাজনৈতিক হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগ যখন যে নির্দেশনা দিচ্ছে সব জায়গায় সেটি পালন হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুম-খুনের কথা যেগুলো বলা হয়েছে, এগুলো প্রায়ই অনুসন্ধান করে আমরা দেখেছি। তারা অনেকেই হয়তো আত্মগোপন করে গুম বলে চালিয়ে দিয়েছে। হয়তো ব্যবসায়ে লস করে নিজেই কোথাও চলে গেছেন।

বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে প্রকাশিত অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।  

বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী জানান, রোববার এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে এবং পরবর্তীতে মার্কিন সরকারের সঙ্গে সিরিজ মিটিংয়ে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতীতের মতো রিপোর্টে একটা ধারাবাহিকতা আছে। একটা গৎবাঁধা বিষয় আছে। বাংলাদেশের সরকার বিরোধী যেসব প্রপাগান্ডা মেশিন আছে সে মেশিনগুলো থেকে তথ্যগুলো প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। সেই মিডিয়া থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে।#

342/