‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শনিবার

৭ মে ২০২২

৩:৩১:২৬ PM
1255394

টাকা দিলে সোনার দোকানে সোনা পাওয়া যায় কিন্তু তেল পাওয়া যাবে না: তেল বিক্রেতা

নতুন দাম নির্ধারণের পরও রাজধানীর বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট কাটেনি। এতে হতাশ ক্রেতা-বিক্রেতা। এদিকে ডিলাররা বলছেন, রোববার (৮ মে) থেকে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ হলে দাম আরও কম হতো। বৃহস্পতিবার (০৫ মে) সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম সমন্বয়ের দুইদিন পরও বাজারে মিলছে না সয়াবিন তেল।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): বেশি দামেও তেল না পাওয়ায় হতাশ ভোক্তারা। তারাও বাজার কারসাজি ও সরকারের তদারকির অভাবকেই দুষছেন। বাজারে সয়াবিন তেল না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়া একজন ক্রেতা বলেন, সয়াবিন তেল কিনতে এসে দেখি বাজারে তেল নেই। বাজারে ডাল, চাল, চিনিসহ সবকিছুর দাম বেশি। সেক্ষেত্রে আমরা সাধারণ মানুষ চলব কীভাবে। বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে তেলের নির্ধারিত দামের তুলনায় বেশি চাওয়ার অভিযোগ করে আরেকজন ক্রেতা বলেন, আগের দামের তেল রয়েছে, সে বোতলের গায়ে যে দাম লিখা রয়েছে, সেটি উঠিয়ে দিয়ে আমার কাছে এক হাজার টাকা চাচ্ছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ করে একজন ক্রেতা বলেন, আমরা তো সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি, সাধারণ জনগণ তো আর রাস্তা ঘাটে মারামারি করতে পারবে না। অভিযোগ রয়েছে, কারসাজি আড়াল করতেই বাজারে তেল সরবরাহ করছেন না মিলাররা। তবে ডিলাররা বলছেন, রোববার (৮ মে) ব্যাংক খোলার পর সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। ডিলাররা বলেন, ছুটির কারণে ব্যাংকগুলো বন্ধ। রোববার ব্যাংক খুললে ডিও হবে, পরে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নতুন তেল আসবে।

ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব রয়েছে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, করোনা সংকট ও ইউক্রেনে সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বেই আন্তর্জাতিক বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও ধৈর্য্যের সঙ্গে দেশের সব ধরণের সঙ্কট মোকাবিলা করেছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ওঠানামা করায় এরইমধ্যে নাভিশ্বাস অবস্থা সব দেশেই। ভারতে প্যাকেটজাত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। এতে তেল পাচারের শঙ্কাও রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুতকরণ ও সিন্ডিকেট না থাকলে আরও মানুষ কম দামে তেল কিনতে পারত। এবিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, যদি ইন্দোনেশিয়া তাদের রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করে তাহলে বাংলাদেশের বাজারে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞার আগেই বাংলাদেশ বেশ কিছু তেল আমদানি করেছিল। যদি বাজার ব্যবস্থা ভালো হতো, তাহলে সেক্ষেত্রে মাঝখানে যে কারসাজি হলো, বাজারের সব জায়গায় থেকে তেল উধাও হয়ে গেল, সেটি কিন্তু হতো না। তখন আরও এক মাস আমরা বাজার তেলে তুলনামূলক কম দামে তেল কিনতে পারতাম।

বাজারে পাম তেলের সরবরাহ স্বল্প পরিমাণে থাকলেও ডিলাররা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। টাকা দিলে সোনার দোকানে সোনা পাওয়া যায়। কিন্তু তেল পাওয়া যাবে না।’ এমন মন্তব্য করেন এক তেল বিক্রেতা। বাজারে তেল নিয়ে তেলেসমাতি। বাজার ঘুরে প্রতিটি দোকানেরই সয়াবিন তেল রাখার সারি সারি তাকগুলো খালি।

লিটারে ৪৪ টাকা দাম বাড়ানোর পরও বাজারে মিলছে না কোনো কোম্পানিরই বোতলজাত তেল। রমজানের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া এ দৈন্যদশা এখন ভয়াবহ সংকটে রূপ নিয়েছে। অতিরিক্ত টাকা গুনেও পাওয়া যাচ্ছে না বোতলজাত সয়াবিন। এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ ভোক্তারা। একজন নারী ভোক্তা বলেন, আগে ২০ টাকা তেল কিনতাম। এখন দাম বাড়ায় ২৫ টাকার তেল কিনেও রান্না করা যায় না। হঠাৎ তেলের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়া আরেকজন ক্রেতা বলেন, আগে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে তেল পাওয়া যেত। কিন্তু হঠাৎ করে এত হারে বেড়ে গেলে তো আমরা চলতে পারব না। কোনো দোকানে তেল নেই। এক লিটার তেল ২০০ টাকা এবং ৫ লিটারের তেল এক হাজার টাকা চাচ্ছে। তারপরও তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

এটা কী করে হয়? একটি দেশে একটি পণ্য হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়- এমন অভিযোগ করে ক্রেতারা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, দুই সপ্তাহ ধরে অর্ডার দিয়েও কোম্পানি থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না। এখন বাজার থেকেই উধাও। এজন্য বড় কোম্পানিগুলো আর ডিলারদের কারসাজিকে দুষছেন তারা। বিক্রেতারা বলেন, ডিলারদের কাছে পণ্য রয়েছে, কিন্তু তা তারা সরবরাহ করতে চাচ্ছেন না। সরকার যে তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, আমাদের কাছে সেগুলো এখনও পৌঁছেনি। তেল না থাকায় ভোগান্তিতে পড়া আরেক বিক্রেতা বলেন, আমরা বিক্রি করব কী? আমরা নিজেরাই তেল খেতে পারব না। আমাদেরই অন্য দোকান থেকে তেল কিনে খেতে হয়।#

342/