‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শনিবার

২১ মে ২০২২

১১:৪৮:০০ AM
1259415

পশ্চিমারা নিজেদের অপকর্মকে যেভাবে ভালো ও সহনীয় করে উপস্থাপন করে

মার্কিন কারাগারে নির্যাতন করার বিষয় সম্পর্কে ইউফেমিজম পদ্ধতি ব্যবহার করে পশ্চিমা দেশগুলো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে যে তা বন্দীদের ওপর নির্যাতন নয় বরং তা হচ্ছে Enhanced interrogation technique (জিজ্ঞাসাবাদের উন্নত কৌশল ও পদ্ধতি)! অথচ প্রতিপক্ষ দেশগুলোতে একই ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে ‘বন্দী নির্যাতন’ এর মত ঘৃণ্য শব্দ প্রয়োগ করে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): Euphemism; শ্রুতিকটু (বা অস্বস্তিকর বা আপত্তিকর) পদের পরিবর্তে কোমলতর পদের প্রয়োগ । এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পাশ্চাত্য (বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো) নিজেদের অন্যায়, অত্যাচার (যুলুম), অপরাধ, অপকর্ম-কুকর্মসমূহ ঢাকে অথবা সাদা দেখানোর চেষ্টা করে। মোট কথা নিজেদের অন্যায়, অপরাধ ও অপকর্ম জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সহনীয় করে তুলে । যেমন: বেশ্যাবৃত্তি (prostitution); যা বিশ্বের সকল সমাজে অত্যন্ত জঘন্য, ঘৃণ্য ও মন্দ পেশা হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে স্বয়ং এ পেশার উদ্ভব কাল থেকেই।কিন্তু পাশ্চাত্য এ পেশাটার কদর্যতা দূর বা লাঘব করার জন্য এ পেশাটিকে যৌন পেশা (Sex work) বলে অভিহিত ও প্রচার করছে। তাতে সমাজ যেন এটাকে অন্য সকল বৈধ পেশার মতো মনে করতে থাকে এবং এর কদর্যতা ও মন্দ হওয়ার ব্যাপারটা লোপ পায়। ঠিক একই ভাবে পাশ্চাত্য ও আমাদের মত দেশে prostitute বা দেহ পসারিণীকে যৌনকর্মী (Sex worker) বলছে। এতে করে এ ঘৃণ্য নোংরা পেশা ও এ পেশাজীবীকে সমাজে এ শিরোনামে গ্রহণীয় ও সহনীয় করা হচ্ছে। আসলে এটা হচ্ছে ভালোর জায়গায় মন্দ ও মন্দের জায়গায় ভালোকে স্থাপন এবং যালিমের জায়গায় মযলূম এবং মযলূমের জায়গায় যালিমকে বসানোর প্রয়াসের মতো। অর্থাৎ সত্যের জায়গায় মিথ্যা এবং মিথ্যার জায়গায় সত্যকে বসানো। পশ্চিমারা এ সব দুষ্কর্ম ও অপকর্ম ঘটনা ও সাধনে খুবই পটু ও সিদ্ধহস্ত।

পশ্চিমারা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া এবংইরান, উত্তর কোরিয়া ইত্যাদির মতো প্রতিপক্ষ‌ দেশের শাসকবর্গকে অলিগার্চ্ (ওলিগার্শ্) ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বা সংখ্যালঘু গোষ্ঠী থেকে আগত বলে চিহ্নিত করে এবং পাশ্চাত্য নিজেদেরকে ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর শাসক নয় বরং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ ও স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্যোক্তা (enterpreneur) ও ঝুঁকি গ্রহণকারী বলে প্রচার করে।

যেমন : বন্দীকে নির্যাতন (torture); প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে এ শব্দটি প্রয়োগ করে। যেমন পাশ্চাত্য প্রচার করে বেড়ায় যে রাশিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়ার মতের দেশের কর্তৃপক্ষ নিজেদের বিরোধীদেরকে বন্দী ও গ্রেফতার করে নির্যাতন করে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদী হওয়ার সন্দেহে আটক ও বন্দী কয়দীদেরকে আবূগোরাইব, বাগ্রাম, গুআন্তানামোর মতো মার্কিন কারাগারে নির্যাতন করার বিষয় সম্পর্কে ইউফেমিজম পদ্ধতি ব্যবহার করে পশ্চিমা দেশগুলো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে যে তা বন্দীদের ওপর নির্যাতন নয় বরং তা হচ্ছে এনহ্যান্সড্ ইন্টেরোগেশন টেকনিক (জিজ্ঞাসাবাদের উন্নত কৌশল ও পদ্ধতি)! অথচ নির্যাতন ও এনহ্যান্সড্ ইন্টেরোগেশন টেকনিকের (Enhanced interrogation technique) মধ্যে প্রকৃত অর্থে কোনো পার্থক্য আছে কি?!!

পশ্চিমাদের প্রতিপক্ষ দেশগুলোয় গোয়েন্দা সংস্থাকে নামকরণ করা হয় সরকারী গুপ্তচর বিভাগ (Secret police) বলে এবং ঐ একই সংস্থা পশ্চিমা দেশগুলোয় গোপন পুলিশ বা ছদ্মবেশী বা সাদা পোশাকের বা ডিটেকটিভ পুলিশ (Undercover cops) নামে অভিহিত করা হয়। মারদাঙ্গা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ ও দমনকে প্রতিপক্ষ দেশগুলোয় ভিন্ন মত চূর্ণ করা (crush dissent) এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেত্রে বলা হয় রায়ট্ কন্ট্রোল (Riot control তথা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ ও প্রশমন ) ।

রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের কারাগারকে সোভিয়েত ইউনিয়নে গুলাগ (Gulags) বলা হত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা প্রিজন লেবার (Prison labor : কারাগারে শাস্তিমূলক শ্রম)  বলা হয়।

বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের দমন সংক্রান্ত পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ ও আচরণকে স্বৈরাচারী (Authoritarian) এবং ঐ একই ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর দমনমূলক আচরণ ও পদক্ষেপকে শান্তি শৃঙ্খলা (Law and order) রক্ষাকারী আচরণ ও পদক্ষেপ বলে অভিহিত করা হয়।

প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে পশ্চিমারা বলে যে যুদ্ধ করার জন্য তারা (প্রতিপক্ষ যেমন : রাশিয়া)  অস্ত্রের ব্যবস্থা করে বা অস্ত্র প্রেরণ করে ইত্যাদি। অথচ এরা যখন নিজেদের সৈন্য ও লোকজনকে সশস্ত্র (অস্ত্রে সজ্জিত) করে তখন তারা অস্ত্রকে প্রাণঘাতী সাহায্য (lethal aid) বলে অভিহিত করে।

পশ্চিমাদের  প্রতিপক্ষ যেমন: রাশিয়া যদি কোনো স্থান থেকে বের হয়ে আসে অর্থাৎ সৈন্য প্রত্যাহার করে তখন তারা বলে যে রাশিয়া আত্মসমর্পণ (Surrender) করেছে, পরাজয় বরণ করেছে, হেরে গেছে ইত্যাদি। আর  নিজেরা ঐ একই কাজ করলে তারা বলে যে তারা ঐ জায়গা খালি করে দিয়েছে বা ঐ জায়গা থেকে বের হয়ে এসেছে বা অমুক জায়গা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে!!

বিভিন্ন দেশের সাথে প্রতিপক্ষের সহযোগিতাকে তারা বিদেশী হস্তক্ষেপ (Foreign intervention) বলে প্রচার করে, অথচ বিভিন্ন দেশে নিজেদের অযাচিত হস্তক্ষেপকে তারা গণতন্ত্র প্রচার (Democracy promotion) বলে অভিহিত করে। নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রতিপক্ষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ এবং বিধি নিষেধ ও কড়াকড়ি আরোপকে পশ্চিমারা  সেন্সরশিপ (Censorship) বলে অভিহিত করে। অথচ ঐ একই কাজ তারা (পশ্চিমারা) নিজেরা করলে সেটাকে তারা তথ্য নিয়ন্ত্রণ (Information control) জরুরি অবস্থা ঘোষণা ইত্যাদি বলে অভিহিত করে।

এ ভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেত্রে ইউফেমিজমের বহু উদাহরণ দেওয়া যাবে ।

ভাষান্তর: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

20 - 5 - 2022