‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

৩ নভেম্বর ২০২২

৮:০৩:৩১ PM
1320037

জাতিসংঘে ইরান বিরোধী প্রস্তাবের বিরুদ্ধে চীন ও রাশিয়ার নিন্দা

ইরানের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের নিন্দা জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ইরানে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আলবেনিয়ার পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আলবেনিয়ার অনুরোধে "ইরানের বর্তমান সহিংসতার উপর ফর্মুলা আরিয়া মিটিং" নামে পরিচিত এই বৈঠকটি ইরানে অস্থিরতা অব্যাহত রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিনিধি মাহসা আমিনীর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করলেও পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বৈত আচরণগুলোর দিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে "অ্যাশলে ব্যাবিট" এর মৃত্যুর দিকে ইঙ্গিত করেন। ব্যাবিট হলেন সেই মেয়ে যে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে মার্কিন কংগ্রেস ভবনে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এছাড়া জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধি বলেছেন যে আরিয়া ফর্মুলা বৈঠকের উদ্দেশ্য হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অনানুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্ট করা। ইরানের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা যেহেতু দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ের মধ্যে পড়ে  তাই সেটি আরিয়া ফর্মুলা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা মোটেও সমীচিন নয়।

আরিয়া ফর্মূলা সভা হল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক যা এই পরিষদের একজন সদস্য দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়। অনানুষ্ঠানিক কাঠামোর কারণে এই ধরনের সভায় ব্যক্তি বা বেসরকারি সংস্থার উপস্থিতির  অনুমতি দেওয়া হয় তবে নিরাপত্তা পরিষদের সভাস্থলে আরিয়া ফর্মুলা সভা অনুষ্ঠিত হয় না। এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না এবং এর সমন্বয় করা পরিষদের পর্যায়ক্রমিক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নয় তবে পরিষদের একজন সদস্যের অনুরোধে তা অনুষ্ঠিত হত পারে। এই বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরাও তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এতে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি জাতিসংঘের জার্নালেও এই বৈঠকের আয়োজনের বিষয়ে ঘোষণা করা হয় না। 

বুধবার বৈঠকে উপস্থিতির মাত্রাও ছিল কম। কেবলমাত্র আমেরিকা এবং আলবেনিয়া রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে এতে অংশগ্রহণ করে। যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ড ডেপুটি প্রতিনিধি পর্যায়ে এবং নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে। ব্রাজিল, মেক্সিকো, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং নিরাপত্তা পরিষদের তিনটি আফ্রিকান দেশ (কেনিয়া, ঘানা ও গ্যাবন) মধ্যপন্থা অবলম্বন করে এবং তাদেরকে ইরানের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায় নি। ভারতের প্রতিনিধি ওই বৈঠকে এমন কোনো বক্তৃতা দেননি যার মাধ্যমে ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতি ভারতের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রদূত বৈঠকে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিমুখী নীতি এবং ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ যেমন নিষেধাজ্ঞাসহ একতরফা আধিপত্যকামী পদক্ষেপের নিন্দা করেন এবং জোর দিয় বলেন যে ইরান বিষয়ে মানবাধিকার উদ্বেগ দেশটির বিরুদ্ধে অন্যায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সাথে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

জাতিসংঘের সনদের ফ্রেন্ডশীপ পার্টি যা ১৯টি দেশ নিয়ে গঠিত এই বৈঠকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সমর্থনে একটি বিবৃতি পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ উপলক্ষ্যে বৈঠকে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রদূত জোয়াকিন পেরেজ আইস্টারান এবং দেশটির একজন উপ-প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন কিন্তু ভেনিজুয়েলার প্রতিনিধিকে সেখানে কথা বলতে দেয়া হয় নি। প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা তার নিজের আমন্ত্রিত অতিথি এবং বন্ধুদের ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা দেশকে সেখানে বক্তৃতা দেওয়ার অনুমতি দেয়া হয় নি। জোয়াকিন পেরেজ আইস্টারান ইরানের বার্তা সংস্থা ইরনার সাথে এক সাক্ষাৎকারে ওয়াশিংটনের দ্বৈত নীতির কড়া সমালোচনা করে বলেছেন,  ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক বা (আরিয়া ফর্মুলা) বৈঠকে ইরানের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা  জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

342/