ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, প্রতিরোধ সংগ্রামের অক্ষ বা ফ্রন্টের উজ্জীবন ছিল শহীদ সোলাইমানি কৌশলগত নীতি ও এই নীতি সফল করতে তিনি সব সময় সক্রিয় ছিলেন। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, পবিত্র স্থানগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করা ছিল হাজ কাসেম সোলাইমানির জন্য একটি মূল-নীতি বা আদর্শ এবং তিনি ইরানকেও পবিত্র স্থান মনে করতেন।
ইমাম খামনেয়ী শহীদ সোলাইমানির আত্মত্যাগ ও নানা অবদানকে অতুলনীয় বলে প্রশংসা করেন।
আজ বুধবার সকালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরআইজিসি'র কুদস্ ব্রিগেডের সাবেক প্রধান শহীদ জেনারেল কাসেম সোলাইমানির পঞ্চম শাহাদাত-বার্ষিকীর প্রাক্কালে তাঁর পরিবার-পরিজন ও ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি বাগদাদ বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী মার্কিন ড্রোন হামলায় তাঁর সঙ্গে শহীদ হওয়া সহযোগী বা সঙ্গীদের পরিবার-পরিজন ও গত বছরে কেরমান প্রদেশে শহীদ কাসেম সোলাইমানির সমাধি-স্থলের কাছে সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারবর্গকে দেয়া এক সাক্ষাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ওইসব মন্তব্য করেন।
এই সমাবেশে অন্য অনেক শহীদ পরিবার, প্রতিরোধ অঙ্গনের অনেক ত্যাগী কর্মী বা যোদ্ধা ও ব্যক্তিত্বরাও উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পবিত্র স্থানগুলোর প্রতিরক্ষার জিহাদে শহীদদের পরিবারবর্গের এই সমাবেশে আরও বলেছেন, সিরিয়ার মালিক হলেন সিরিয় জনগণ, সিরিয়ার ভূমিতে আগ্রাসনকারীরা নিঃসন্দেহে দেশটির আত্মমর্যাদাশীল যুবকদের শক্তির মোকাবেলায় পিছু হটবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে পার্স-টুডে জানিয়েছে, প্রতিরোধ যুদ্ধ ও পবিত্র স্থানগুলো রক্ষার যুদ্ধের শহীদ-পরিবারগুলোর এই সমাবেশে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আরও বলেছেন, সিরিয়ায় একের পর এক সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলছে মার্কিন সরকার, কিন্তু আগ্রাসীদের উচিত অন্য এক জাতি বা দেশের ভূখণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়া, তা না হলে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হবে; তাই মার্কিন ঘাঁটিগুলো অবশ্যই সিরিয় যুবকদের পদতলে পিষ্ট হবে। তিনি সিরিয়ায় আগ্রাসী দখলদারদের উপস্থিতি অব্যাহত রাখাকে অসম্ভব হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, সিরিয়ার মালিক হচ্ছে সিরিয় জনগণ, নিঃসন্দেহে দেশটির ভূখণ্ডে আগ্রাসনে লিপ্তরা একদিন আত্মমর্যাদাশীল সিরিয় যুবকদের শক্তির চাপে পিছু হটতে বাধ্য হবে।
সিরিয়ার জনগণ আজ হোক বা কাল হোক তথা শিগগিরই বা বিলম্বে দখলদারদের ওপর জয়ী হবেই এবং ইয়েমেন, ফিলিস্তিন ও লেবাননের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে-এই বাস্তবতার ওপর জোর দিয়ে ইমাম খামেনেয়ী আরও বলেছেন, লেবানন হচ্ছে প্রতিরোধের প্রতীক, আহত হলেও লেবানন নতজানু হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবে যেমনটি প্রতিরোধের প্রতীক ইয়েমেনও বিজয়ী হবে এবং মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আগ্রাসী শত্রুরা -যাদের শীর্ষে রয়েছে লোভী ও অপরাধী মার্কিন সরকার- তারা এ অঞ্চলের জনগণের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে বাধ্য হবে এবং অপমান হয়ে এ অঞ্চল ত্যাগ করবে।
ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা শহীদ কাসেম সোলাইমানির ব্যক্তিত্বের ও আচরণের কিছু কিছু বিশেষ দিক তুলে ধরে বলেছেন, এইসব বৈশিষ্ট্য থেকে শিক্ষা নিয়ে সোলাইমানির আদর্শের মূল লক্ষ্য তথা ইসলাম ও পবিত্র কুরআনের আদর্শ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনেয়ী পবিত্র স্থানগুলোর প্রতিরক্ষার জিহাদে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের প্রশংসা করে বলেছেন, ওইসব পবিত্র রক্ত বিসর্জন ছাড়া আজ পবিত্র মাজারগুলোর সীমানা ও চত্বরের কিছুই অবশিষ্ট থাকত না।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ফার্সি ১৩৮০'র দশকে ( খ্রিস্টিয় ২০০১ থেকে ২০১০) আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্ততাগুলো-বিরোধী সংগ্রামের ময়দানে হাজ কাসেম সোলাইমানির উপস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেছেন, এই দু'টি দেশ দখলের আসল উদ্দেশ্য ছিল ইরান, কিন্তু ওই মর্যাদাশীল ও আন্তরিক ব্যক্তিত্ব মার্কিন বাহ্যিক শক্তিমত্তার পরোয়া না করে ময়দানে নামেন এবং শেষ পর্যন্ত মার্কিন দখলদারিত্ব ও বিশাল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেন।
কথিত আইএস বা আইসিস তথা দায়েশ নামক মার্কিন মদদপুষ্ট তাকফিরি সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র বানচাল করা প্রসঙ্গে ইমাম খামেনেয়ী বলেছেন, এটি ছিল খুব দ্রুত ও যথাসময়ে এবং ভাগ্য নির্ধারণী কায়দায় ময়দানে কাসেম সোলাইমানির উপস্থিতির সুফল। তিনি বলেন, তাকফিরি সন্ত্রাসের মোকাবেলায় ইরাকি যুব সমাজ সত্যিকার অর্থেই প্রোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু এই মহা-ষড়যন্ত্র বানচাল করা- যার ওপর নির্ভর করছিল এ অঞ্চলের জীবন ও মরণ – তা সোলাইমানির অতুলনীয় উদ্যম, বীরত্ব, মৃত্যুর ঝুঁকি ও শক্তিমান ভূমিকার কারণেই সম্ভব হয়েছিল। #