অধিকৃত অঞ্চলে পদত্যাগের ঢেউয়ের সূচনা,পশ্চিম তীরের ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অভিযান এবং গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলি সরকারের ১৫ মাসের নৃশংস যুদ্ধের নতুন পরিসংখ্যানসহ অধিকৃত অঞ্চলের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আজকের পার্সটুডের নিবন্ধন সাজানো হয়েছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হার্জি হালেভির পদত্যাগ
ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হার্জি হালেভি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আল-আকসা তুফান অভিযান ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় গ্রহণ করে পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি গতকাল (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুদ্ধমন্ত্রী ইসরাইল কাতজকে নিজের পদত্যাগের কথা জানিয়ে বলেছেন, আগামী ৬ মার্চ পদত্যাগের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। নিজের পদত্যাগপত্রে জেনারেল হালেভি লিখেছেন, “প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে এই ব্যর্থতার দায় আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। বাকি জীবন আমাকে এই দায় বয়ে বেড়াতে হবে।” জেনারেল হালেভির পদত্যাগের ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর ইসরাইলি বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান ইয়েরোন ফিঙ্কেলম্যানও পদত্যাগ করেছেন
ইসরাইলি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেছেন
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রতিবাদে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার পর ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভিরও মন্ত্রণালয়ে তার পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরকে ফিলিস্তিনি ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ হিসেবে বর্ণনা করা বেন-গাভির তার পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার পর বলেন যে তার মন্ত্রিত্বের সময় তিনি একটি অকল্পনীয় কাজ করেছেন এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের কাছে ২০০,০০০ অস্ত্র বহনের অনুমতি দিয়েছেন।
ফিঙ্কেলম্যানও পদত্যাগ করেছেন
জেনারেল হালেভির পদত্যাগের ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর ইসরাইলি বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান ইয়েরোন ফিঙ্কেলম্যানও পদত্যাগ করেছেন।
লিবারম্যানের দাবি
এদিকে ইসরাইলের সরকার বিরোধী দল ইসরায়েল বেইতেনুর প্রধান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এভিডগোর লিবারম্যান বলেছেন,জেনারেল হালেভির পদাঙ্ক অনুসরণ করে নেতানিয়াহুর উচিত তার গোটা মন্ত্রিসভা নিয়ে পদত্যাগ করা।
জেনিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলা : ৩৯ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি হতাহত
গাজা উপত্যকায় যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে তখন ইহুদিবাদী ইসরাইল জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অন্তত আট ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। বর্বর ইহুদিবাদী সেনাদের গুলিতে আহত হয়েছেন আরো ৩৫ জন। এ ঘটনার পর গাজা-ভিত্তিক ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস দখলদার সেনাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার জন্য পশ্চিম তীরের তরুণ সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম বলেছে,ইসরাইলি সেনারা গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে হেলিকপ্টার গানশিপের ছত্রছায়ায় জেনিন শহর ও এর শরণার্থী শিবিরে বড় ধরনের অভিযান চালায়। ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের পুলিশ বাহিনীর মুখপাত্র আনোয়ার রজব এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইসরাইলি সেনারা বেসামরিক নাগরিক ও ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে বহু মানুষ হতাহত হন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীও জেনিনে হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওই হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটনের জন্য বিশাল ও উল্লেখযোগ্য’ অভিযান বলে দাবি করেছেন।
গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইসরাইলি সরকারের ১৫ মাসের নৃশংস যুদ্ধের নতুন পরিসংখ্যান
মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সরকারের মিডিয়া অফিস ইহুদিবাদী সরকারের নৃশংস যুদ্ধ এবং গণহত্যা সম্পর্কে নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন অনুসারে, ৪৭১ দিনের যুদ্ধে, ইহুদিবাদী সরকার গাজায় ১০,১১০টি গণহত্যা চালিয়েছে। এছাড়াও, এই যুদ্ধে মোট ২,০৯২টি ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের সকল সদস্যসহ শহীদ হয়েছিল এবং বেসামরিক রেজিস্ট্রিতে গাজার পরিবারের পরিসংখ্যান থেকে তাদের নাম সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলা হয়েছিল। গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি সরকারি মিডিয়া অফিস আরও ঘোষণা করেছে যে ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সাল থেকে গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৪৭,৩৫০ জনে এবং আহতের সংখ্যা বেড়ে ১,১১,০৯১ জনে দাঁড়িয়েছে। নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা ১৪,২২২ জনে পৌঁছেছে। এই নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে ৪৭১ দিনে ১৭,৮৬১ জন শিশু শহীদ হয়েছেন। গাজায় অবস্থিত ফিলিস্তিনি সরকারের মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের সময় গাজার নির্যাতিত জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সরকার ১,০০,০০০ টন বোমা এবং বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে।#