‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : নিজস্ব প্রতিবেদক
মঙ্গলবার

৩১ মার্চ ২০১৫

৪:১১:৪৫ PM
680290

ইয়েমেনের উপর সৌদি হামলার নিন্দায় মাজমা’র বিবৃতি

ইয়েমেনের নিরীহ জনগণের উপর সৌদি আরব ও তার মিত্রদের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা (মাজমা)। পাশাপাশি এ হামলায় অংশগ্রহণকারী সকল দেশের প্রতি অনতি বিলম্বে আগ্রাসন বন্ধ করার আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থা।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : মাজমা’র এক বিবৃতিতে ইয়েমেনের জনগণের উপর সৌদি ও তার মিত্রদের বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

বিবৃতির মূল অংশ :

بسم الله الرحمن الرحیم

«وَمانَقَموا مِنهُم إِلّا أَن يُؤمِنوا بِالله العَزيزالحَميد»

“তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল।” [সূরা বুরুজ : ৮]

ইয়েমেনের জনগণ যখন নিজেদের মাঝে প্রশংসনীয় ঐক্যে গড়ে তুলে তাদের লুট হয়ে যাওয়া বিপ্লবকে উদ্ধার পূর্বক একটি গণতন্ত্র ভিত্তিক সরকার গঠন করতে চেয়েছে ঠিক তখন মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরাচারী সরকারগুলো সৌদি আরবের নেতৃত্বে অন্যায় ও যুক্তিহীনভাবে ইয়েমেনের জনগণের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছে।

এ সকল দেশের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ইয়েমেনে জুমআর নামাযে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিরীহ ও ধর্মপ্রাণ শত শত মুসল্লিকে হতাহত করার কয়েকদিন পরই এ হামলা শুরু হল। মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমের সুযোগ সন্ধানী কিছু দেশের সহযোগিতায় চালানো এ হামলা আধিপত্যকামীদের সমস্যা দূর করবে না। বরং নিরীহ মানুষগুলোর রক্ত ঝরবে এবং আরো একটি দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।

একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা –বিভিন্ন দেশে যার শত শত সদস্য রয়েছে- মর্মান্তিক এ হামলায় শহীদদের বিষয়ে ইয়েমেনের জনগণের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করে নিম্নের কয়েকটি বিষয়ের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে :

১. যেভাবে ‘হযরত আয়াতুল্লাহ আল-উজমা ইমাম খামেনেয়ীবলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি জাগরণের নতুন ঢেউ উঠেছে। ইয়েমেনের গণবিপ্লব ঐ জাগরণেরই ধারাবাহিকতা এবং মৌলিক বিপ্লবগুলোর অন্যতম এবং এর ভিত ইসলামি মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত। একটি বিপ্লবী মুভমেন্ট সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই ইয়েমেনের গণবিপ্লবের মাঝে রয়েছে। যেমন : এ বিপ্লব ইসলামি’, এটি জাতীয় ও গণবিপ্লব, এতে রয়েছে সতর্ক ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতার নেতৃ্ত্ব, শিয়া ও সুন্নি নির্বিশেষে বিশ্বের আলেম সমাজের সমর্থন রয়েছে এর সাথে এবং উত্তরাঞ্চলীয় শহর সাআদা থেকে শুরু করে রাজধানী সানয়া এবং দক্ষিনে এডেন পর্যন্ত ইয়েমেনের সকল দল, সম্প্রদায় ও গ্রুপের মধ্যকার ঐক্য।

২. এ বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থানকারী সরকারটি ছিল দূর্নীতিগ্রস্থ। বহুবছর যাবত দেশটির শাসনভার তাদের হাতে থাকলেও তারা ইয়েমেনকে দরিদ্রতা ও বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। আর পদত্যাগী প্রেসিডেন্টও বিদেশীদের ব্যাপক সহযোগিতা সত্ত্বেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে না পেরে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে হতে বাধ্য হয়েছে এবং অবশেষে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশীদের নিকট আশ্রয় নিয়েছে।

৩. বরকতময় এ বিপ্লবের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিম-আরব-হিব্রু অক্ষ পূনরায় ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পশ্চিম, জায়নবাদ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অপর স্বৈরশাসকদের এ নাটক ইয়েমেনে কয়েক দফায় মঞ্চস্থ হয়েছে। সামরিক ও সন্ত্রাসী উপকরণ ব্যবহার করে দূর্নীতিবাজ সরকারকে পূনরায় ক্ষমতায়ন করতে চায় তারা।

৪. ইয়েমেনের নিরীহ জনগণের উপর আগ্রাসনের অর্থ হচ্ছে, এমন কোন জাতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য আগ্রাসন চালানো, যে জাতি নিজেদের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের অপর সকল দেশের উপর নির্ভরতা থেকে মুক্তি পেতে চায়। অতএব, ইয়েমেনের জাতি বিরোধী এ নাটকের পূণঃমঞ্চস্থ করার পরিণতি হবে পরাজয়। কেননা যদি এ ষড়যন্ত্র সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ফিলিস্তিনে ফলপ্রসু হত তবে ইয়েমেনে ফলপ্রসু হওয়ার সম্ভাবনা থাকত।

৫. এ হামলার মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্যে পৌঁছুতে ব্যর্থ হবে আল সৌদ। চার বছর পূর্বে তারা বাহরাইনে সৈন্য প্রেরণ করে বাহরাইনকে এক প্রকার দখল করে নিলেও এ দেশের জনগণের ফরিয়াদ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।

৬. এ হামলা থেকে আগ্রাসীদের একমাত্র অর্জন হচ্ছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া জঙ্গিবিমানের মাধ্যমে ইয়েমেনের নিরাপরাধ ও বেসামরিক জনগণের উপর বোমা নিক্ষেপ করবে, পাশাপাশি এদেশের অবকাঠামোকেও ধ্বংস করবে; যা ইসরাইলের পক্ষেই যাবে। কিন্তু এ আগ্রাসনই –যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে এবং জায়নবাদের সেবা করা হচ্ছে- শেষ নয়। কেননা এ যুদ্ধের আগুন স্বয়ং এর প্রজ্বলনকারীদের হাতকেই পোড়াবে এবং ইয়েমেনের সংগ্রামী জনতার জবাব আগ্রাসীদেরকে অনুতপ্ত করবে।

৭. কিছু কিছু আরব ও ইসলামি দেশ কর্তৃক নিজ মুসলিম ভাইদেরকে হত্যার লক্ষ্যে সৈন্য প্রেরণের বিষয়টি আরো অবাক করার মত। আল সৌদ তার বিলাসবহুল প্রাসাদ এবং সন্তানদের রক্ষায় ব্যস্ত। অথচ আরব ও ইসলামি দেশের সরকারদের সহযোগিতায় মুসলমানদের সন্তানদেরকে ফলাফলহীন একটি যুদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

৮. আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা, ইয়েমেনের জনগণের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী আল সৌদ এবং তার মিত্রদের হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। পাশাপাশি এ হামলায় অংশগ্রহণকারী সকল দেশের প্রতি অনতি বিলম্বে আগ্রাসন বন্ধ করার আহবান জানায়।

৯. বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষের প্রতি মাজমা’র আহবান হল, তারা যেন ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক এ হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, ইসলামি সমন্বয় সংস্থা এবং বিশ্বের অন্যান্য সংস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করে এ ধরনের রক্তাক্ত হস্তক্ষেপ বন্ধের কারণ হয়।

১০. বিবৃতির শেষে এ বিষয়টি উল্লেখ করা জরুরী যে, এ হামলা ইয়েমেনের জন্য ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হলেও ইয়েমেন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি মোক্ষম সুযোগের জন্ম দিয়েছে। যাতে তারা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছুতে সক্ষম হয় এবং নিজেদের দেশকে রক্ষা করতে পারে।

«وَمَا جَعَلَهُ اللّهُ إِلاَّ بُشْرَى لَكُمْ وَلِتَطْمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِ وَمَا النَّصْرُ إِلاَّ مِنْ عِندِ اللّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيم»

“বস্তুতঃ এটা তো আল্লাহ্ তোমাদের সুসংবাদ দান করলেন, যাতে তোমাদের মনে এতে সান্ত্বনা আসতে পারে। আর সাহায্য শুধুমাত্র পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী আল্লাহরই পক্ষ থেকে।” [সূরা আল ইমরান : ১২৬]

আহলে বাইত বিশ্বসংস্থা

৯ই ফারভারদিন-১৩৯৪

২৯শে মার্চ-২০১৫