‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : নিজস্ব প্রতিবেদক
রবিবার

২৩ আগস্ট ২০১৫

৫:২১:২৯ AM
707299

মাজমা’র সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী বিবৃতি

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার (মাজমা) আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান, এ সংস্থার সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী বিবৃতি পাঠ করেন। এতে আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের ঐক্য ও সংহতির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা -বনা- : আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার (মাজমা) আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান, এ সংস্থার সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী বিবৃতি পাঠ করেন। এতে বলা হয়েছে, আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের জন্য বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজেদের মধ্যকার ঐক্য রক্ষা করা। কোন অবস্থাতেই শিয়াদের মাঝে সহিংস ও বিভ্রান্ত চিন্তার অধিকারী কোন দল যাতে গঠিত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সালার বলেন : ইসলাম রক্ষা এবং এর সর্বজনীন শিক্ষা প্রসারের সর্বোত্তম কেন্দ্র হচ্ছে হওযা ইলমিয়া, একে সমগ্র বিশ্বে আরো অধিক শক্তিশালী করতে হবে।

ইসলাম ও আহলে বাইত (আ.) এর বার্তা পৌঁছে দিতে মসজিদ হচ্ছে সর্বোত্তম কেন্দ্র এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন : সকল দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উচিত মুসলমান ও আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের অধিকার ও ধর্ম ভিত্তিক স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দান করা।

 

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী বিবৃতি:

بسم الله الرحمن الرحیم

الحمد لله رب العالمین و الصلاه و السلام علی سیدنا و نبینا محمد و علی اهل‌بیت الطیبین الطاهرین لا سیما بقیة الله فی الارضین.

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ অধিবেশন আয়োজনের যে তওফিক মহান আল্লাহ প্রদান করেছেন সে জন্য তাঁর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। এ অধিবেশন যথাযোগ্যভাবে ১৩০টি দেশের ৫ শতাধিক অতিথির উপস্থিতিতে ১৫-১৮ আগস্ট ৪ দিন ব্যাপী তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইসলামি বিপ্লবের স্থপতি হযরত ইমাম খোমেনি (রহ.) এর মাজারে উপস্থিতির মধ্য দিয়ে এ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে অব্যাহত থাকে।

সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ অধিবেশন শেষে এর সদস্যরা ইসলাম বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিনিময়ের পর বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ’র প্রতি সমর্থন এবং মুসলমানদের মাঝে ঐক্য ও সংহতির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে নিম্নের ৩টি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

ক. আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদী

১- আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের জন্য বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজেদের মধ্যকার ঐক্য রক্ষা করা। কোন অবস্থাতেই শিয়াদের মাঝে সহিংস ও বিভ্রান্ত চিন্তার অধিকারী কোন দল যাতে গঠিত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। তাদের উচিত শত্রুদের জন্য শিয়াদের মাঝে অনুপ্রবেশের সকল পথ রুদ্ধ করা।

২- ইসলামি ও আহলে বাইত (আ.) এর শিক্ষা প্রসারের সর্বোত্তম কেন্দ্র মসজিদের অবস্থান ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের উচিতদ্বীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে মসজিদসহজামায়াতের নামায, জুমআর নামায, কুরআন মজিদ, মহানবি (স.) এর সুন্নাত, নাহজুল বালাগা এবং আহলে বাইত (আ.) এর জীবনী ইত্যাদি বিষয়াদির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।

৩- সর্বোচ্চ নেতা ও বেলায়েতে ফকীহ’র অতুলনীয় ভূমিকা ইমাম খোমেনি (রহ.) কর্তৃক ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে শুরু এবং সর্বোচ্চ নেতার দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতার মধ্য দিয়ে অব্যাহত রয়েছে। এমনভাবে যে, বর্তমানে শিয়াদের শক্তি ও ক্ষমতা সর্বোচ্চ নেতার বিজ্ঞ নির্দেশনারই ফসল।

৪- ইসলাম রক্ষা এবং এর সর্বজনীন শিক্ষা প্রসারের সর্বোত্তম কেন্দ্র হচ্ছে হাওযা ইলমিয়া, একে সমগ্র বিশ্বে আরো অধিক শক্তিশালী করতে হবে। মহানবি (স.) এর প্রকৃত ইসলাম ধর্মের প্রহরী হিসেবে ওলামাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আহলে বাইত (আ.) এর সকল অনুসারীদের জন্য আবশ্যক। পাশাপাশি মারজাগণ ও আলেমগণের অনুসরণ করাও তাদের অন্যতম কর্তব্য ও দায়িত্ব।

৫- শিয়া মাযহাবের মহান মারজা আয়াতুল্লাহ আল-উজমা সিস্তানি’র নির্দেশনা ফলো করা এবং দেশ রক্ষার্থে আত্মোৎসর্গতার জন্য ইরাক কর্তৃপক্ষ এবং এদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।

৬- জ্ঞানচর্চা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক তৎপরতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ সকল কেন্দ্রের প্রতি আহলে বাইত (আ.) এর মাযহাবের অনুসারীদের অবজ্ঞা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের উচিত শিক্ষা কেন্দ্রগুলো যাতে বস্তুবাদী না হয়ে ওঠে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আদর্শ ইসলামি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সোচ্চার হওয়া।

৭- গাদীর, আশুরা, আরবাঈন (চল্লিশা), মাহদাভিয়্যাত সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করণ এবং এর প্রসার লাভে যথাযথ প্রচেষ্টা চালানো। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ইরাকের তাগুতি সরকারের পতন ঘটেছে এবং বিশ্বে ইমাম হুসাইন (আ.) এর চল্লিশার অনুষ্ঠান শিয়াদের ক্ষমতা, ঐক্য ও সম্মানের প্রতীক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত এ সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধি করণ ও শক্তিশালী করণে সদা সচেষ্ট থাকা।

৮- সাহিফায়ে সাজ্জাদিয়ার -যাকে যাবুর-এ আলে মুহাম্মাদও (স.) বলা হয়- সুগভীর অর্থের প্রতি দৃষ্টি রেখে অধ্যায়ন করা। পাশাপাশি স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্কের মূল ভিত ‘দোয়া’র প্রতি আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীরা যেন বিশেষ গুরুত্ব দেয়।

৯- বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও রীতি-প্রথা সম্পর্কে পরিচিত মুবাল্লিগদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে। পাশাপাশি ভার্চ্যুয়াল জগতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ওয়েব সাইট তৈরী, রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল চালু এবং সাংস্কৃতি আগ্রাসন ও পাশ্চাত্যের প্রচারমাধ্যম যুদ্ধের মোকাবিলার জন্য সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।

১০- সন্তানের সঠিক লালন পালনের উত্তম স্থান হচ্ছে পরিবার। সন্তানের মেধা ও বুদ্ধির বিকাশের ভিত্তিস্থল হিসেবে নারীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। ইমাম খোমেনি (রহ.) এর ভাষ্যমতে : ‘নারীর আঁচল থেকেই পুরুষ মেরাজে (উন্নতির চরম শিখরে) গমন করে’। নারীদের প্রতি গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে পরিবারকে রক্ষার জন্য যথার্থ চেষ্টা চালাতে হবে।

১১- সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের উচিত সকল উপকরণ ব্যবহার পূর্বক মানবাধিকার, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংস্থা গঠন করা এবং বিশ্বে আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া।

১২- কর্ম-সংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, শিয়াদের লাইফ স্টাইলের মানোন্নয়ন, সুদ মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা ওট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং সুবিধা বঞ্চিত, এতিম ও অভাবী শিয়া পরিবারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দাতব্য সংস্থা গঠনের দায়িত্ব আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের মাঝে ধণবান ব্যক্তিদের। এক্ষেত্রে আমিরুল মু’মিনীন (আ.) এর সীরাত আমাদের পথ নির্দেশকের ভূমিকা পালন করতে পারে।

খ. মুসলিম বিশ্ব

১- অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীগণ ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইয়েমেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা তাকফিরিদের জঘন্য অপরাধকর্মের নিন্দা জানিয়ে বুদ্ধিবৃত্তি ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপের পাশাপাশি এর প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই যাতে তারা তাদের দেশের মুসলমান এবং আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের ধর্ম ও মাযহাবগত স্বাধীনতা রক্ষায় যত্নবান হয়।

২- ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন এবং বাহরাইনের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণার পাশাপাশি মানবতা, নৈতিকতা ও স্বাধীনতা রক্ষার্থে সংগ্রামে লিপ্ত এ সকল মানুষের প্রতি আমরা সমর্থন ব্যক্ত করছি।

৩- মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ববহ; পবিত্র কুরআন, মহানবী (স.) এর সুন্নত এবং ইমামগণ (আ.) এর রেওয়ায়েতেও যার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশিইসলামি বিপ্লবের স্থপতি ইমাম খোমেনি (রহ.) এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতাও এ বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। এটাকে ইসলামের একটি মৌলিক বিষয় হিসেবে গণ্য করে সকলের উচিত এর প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা।

৪- দাম্ভিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান, ন্যায় ও সত্যের পক্ষপাতিত্ব এবং অত্যাচারের মোকাবিলা –এ গুলোকে আমরা ইসলাম ধর্ম ও আহলে বাইত (আ.) থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছি। আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের উচিত এটাকে তাদের কর্মসূচীর শীর্ষে স্থান দেয়া।

৫- আমরা বিশ্বের সকল মুসলমান ও ইসলামি দেশের প্রতি বন্ধুত্বের হাত সম্প্রসারিত করছি। পাশাপাশি ইসলামি দেশসমূহে সাম্প্রদায়িক যে কোন ধরনের বিভেদ-বিচ্ছেদের বিষয়ের হুশিয়ারী উচ্চারণ করে সমগ্র ইসলামি ভূখণ্ড রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করছি।

গ. বিশ্ব সমাজ

১- আধিপত্য বিস্তারে দাম্ভিক শক্তিগুলোর প্রচেষ্টা, বিদেশী গণমাধ্যমের বলয়, ইসলাম ফোবিয়া, এবং পাশ্চাত্যকে বৃহত শক্তি আকারে প্রদর্শনের অপচেষ্টার মোকাবেলায় পশ্চিমা যুবসমাজ ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে মহামান্য রাহবার চিঠিটিঅত্যন্ত কার্যকর এবং পথ নির্দেশক।

২- আমরা যৌক্তিকতা ও সংযম সংস্কৃতি সম্প্রসারণের পাশাপাশি সকল প্রকার সহিংসতা ও উগ্রতা রোধে বিশ্বসমাজ ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদেরকে সহযোগিতা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করছি।

সর্বশেষে, ইমাম খোমেনি (রহ.) ও মুসলিম বিশ্বের শহীদদের স্মৃতি স্মরণ রেখে মাজমার সকল প্রয়াত সদস্য এবং আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের জন্য মহান আল্লাহর নিকট রহমত, ক্ষমা এবং সুউচ্চ মর্যাদা কামনা করি। বিশেষ করে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার সাবেক মহাসচিব আল্লামা মরহুম আয়াতুল্লাহ আসেফি (রহ.) কে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এবং তার জন্য মহান আল্লাহর নিকট সুউচ্চ স্থান কামনা করি।

ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার সাধারণ পরিষদের সদস্যবৃন্দ

যিলকদ-১৪৩৬, আগস্ট-২০১৫