শিল্প ক্ষেত্রে ইরানের অগ্রগতির একই সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের জের ধরে বিগত বছরগুলোতে অসংখ্য ইরানি চলচ্চিত্র ও নাটক পাকিস্তানের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ফার্সি থেকে উর্দু ভাষায় ডাবিং করেছে এবং সেগুলো দেশটির বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানি দর্শকদের মধ্যে ইরানি নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে গেছে।
পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘সেতায়েশ’, ‘পেদার’, ‘মোখতারনামে’, ‘জিরান’, ‘মালাকুত’ ও ‘জাখম করি’র মতো ইরানি ধারাবাহিক নাটক এবং আরও কয়েক ডজন চলচ্চিত্র ও সিরিজ বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন পাকিস্তানি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। সমৃদ্ধ কাহিনী নির্ভর এসব নাটকের অভিনয় শিল্পীদের অভিনয় পাকিস্তানি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। পাকিস্তানের চলচ্চিত্র বোদ্ধারা মনে করেন, দেশটির দর্শকদের ইরানি সিনেমার প্রতি আকর্ষণের অনেকগুলো কারণ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, দুই দেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় বন্ধন।
পাকিস্তানি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পাশাপাশি দেশটির শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি আরো যেসব কারণে ইরানি চলচ্চিত্রের প্রতি পাকিস্তানি দর্শকদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সেসবের মধ্যে রয়েছে, ফার্সি ও উর্দু ভাষার মধ্যে মিল, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের দীর্ঘ ইতিহাস, শক্তিশালী সংলাপ, পেশাদার অভিনয় এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একদিকে ইরান টিভি সিরিজ ও আর্ট ফিল্ম তৈরিতে নিজের সফল অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে নিজের সগৌরব উপস্থিতির সূত্র ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণ শিল্পে পাকিস্তানকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করতে পারে এবং অন্যদিকে নিজের বিশাল জনগোষ্ঠীর সামনে এসব চলচ্চিত্র তুলে ধরে পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সাংস্কৃতিক বিনিময় শক্তিশালী করার পথ সুগম করতে পারে।
উল্লেখ করা যায়, বিশ্বের যেসব দেশে সর্বপ্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ইরান সেগুলোর অন্যতম। লুমির ভ্রাতৃদ্বয়ের মাধ্যমে সিনেমা হল আবিষ্কারের মাত্র পাঁচ বছর পর ১৯০০ সালে ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরে প্রথম সিনেমা হল উদ্বোধন করা হয়। একই বছর, ইরানের তৎকালীন শাসক মোজাফরুদ্দিন শাহ ইরানে সিনেমাটোগ্রাফ মেশিন আমদানি করেন এবং এর ৩০ বছর পর ১৯৩০ সালে, ইভান্স ওগানিয়ানাসের পরিচালনায় ‘অবি এবং রবি’ নামে প্রথম ইরানি সিনেমা তৈরি হয়। আর বর্তমানে ইরানি চলচ্চিত্র বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্রে পরিণত হয়েছে। বহু বছর ধরে ইরানি সিনেমা এই খ্যাতি অর্জন করেছে এবং বিশ্ব অঙ্গনে নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে।
আমরা যদি বিশ্বের প্রধান চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর দিকে তাকাই, তাহলেও দেখতে পাবো, ইরানি সিনেমা এই সমস্ত উৎসবে অনুষ্ঠানে অন্তত একবার প্রধান পুরস্কার জিতেছে।#
342/