২০ মার্চ ২০২৫ - ১৯:৫৪
Source: Parstoday
গাজা ও ইয়েমেনে অপরাধযজ্ঞ ঠেকাতে মুসলিম উম্মাহসহ বিশ্বের মুক্তিকামীরা রুখে দাঁড়ান: ইমাম খামেনেয়ী

পার্স-টুডে-ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসন পুনরায় শুরু হওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এই আগ্রাসনকে অত্যন্ত বড় ধরনের অপরাধ ও বিপর্যয়কর বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেছেন, এটি পুরো ইসলামী উম্মাহর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, আর তাই গোটা উম্মাহকে সব ধরনের মতভেদকে পাশ কাটিয়ে এই অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের সব অঞ্চলের মুক্তিকামী সবাইকে এই বিশ্বাসঘাতকতামূলক ও বিপর্যয়কর পদক্ষেপ মোকাবেলা করতে হবে যাতে আবারও শিশু-হত্যা, ঘরবাড়ি ধ্বংস ও ফিলিস্তিনি জনগণের শরণার্থী হওয়া ঠেকানো যায়।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, মার্কিন সরকার এই বিপর্যয়ের দায়দায়িত্বের শরিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী মার্কিন সরকারের ইশারায় অথবা তাদের সম্মতিতে এই অপরাধযজ্ঞ চালিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। তিনি আরও বলেছেন, ইয়েমেনের ওপর ও দেশটির বেসামরিক জনগণের ওপর হামলাও আরও এক অপরাধযজ্ঞ যা অবশ্যই ঠেকাতে হবে। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আজ (২০ মার্চ, বৃহস্পতিবার) ফার্সি নববর্ষ ১৪০৪ শুরু হওয়া উপলক্ষে দেয়া ভাষণের একাংশে এইসব মন্তব্য ও উদাত্ত আহ্বান তুলে ধরেন। 

ইমাম খামেনেয়ী ইরানের জন্য নতুন ফার্সি বছরের নামকরণ করেন 'উৎপাদনের জন্য পুঁজি-বিনিয়োগের' বছর হিসেবে। 

নতুন ফার্সি বছর শবে ক্বদর বা মহিমান্বিত রজনী ও আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র শাহাদাতের প্রাক্কালে শুরু হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে লাইলাতুল ক্বদরের বরকত ও মোত্তাকিদের তথা খোদাভীরু বা খোদা-সচেতনদের নেতার (মাওলা আলীর) দৃষ্টি প্রিয় ইরানি জাতির ও যেসব জাতির নববর্ষ নওরোজের বসন্ত-উৎসবের মাধ্যমে শুরু হয় তাদেরও নসিব হবে। 

পার্স-টুডের রিপোর্টে জানা গেছে, ইমাম খামেনেয়ী সদ্য-বিগত ফার্সি ১৪০৩ সালকে ফার্সি ১৩৬০ (১৯৮১ ইসায়ি সন) সালের মতই ধারাবাহিক নানা দুর্ঘটনায় ভরপুর বছরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, দামেস্কে ইরানের কয়েকজন সামরিক উপদেষ্টার শাহাদাত বরণ, ইরানি জাতির জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জনাব ইব্রাহিম রায়িসি'র শাহাদাত এবং এরপর তেহরান (ফিলিস্তিনি নেতা ইসমাইল হানিয়ার শাহাদাত) ও লেবাননের তিক্ত ঘটনাবলীর (সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহসহ হিজবুল্লাহ'র কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও কমান্ডারের শাহাদাতের)  কারণে ইরানি জাতি ও ইসলামী উম্মাহ বেশ কয়েকজন মূল্যবান ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে এই ফার্সি বছরে (বিগত ইসায়ি বছরের মার্চের ২১ তারিখে থেকে এ বছরের মার্চের ২০ তারিখ পর্যন্ত সময় ছিল ফার্সি ১৪০৩ সাল)।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, বড় বড় নানা দুর্ঘটনা ও জটিল সমস্যা সত্ত্বেও ইরানি জাতি দৃঢ় আধ্যাত্মিক মনোবল ও ঐক্য এবং উচ্চমানের প্রস্তুতি দেখাতে সক্ষম হন যার প্রকাশ দেখা গেছে প্রিয় প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে আসা বিপুল জনগণের উচ্চতর মনোবল ও শ্লোগানগুলোতে; আর এ থেকে প্রমাণ হয়েছে যে বড় ধরনের বিপদ-মুসিবতও ইরানি জাতির মধ্যে দুর্বলতার অনুভূতি সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়। 

ইমাম খামেনেয়ী নির্ধারিত আইনি-সময়সীমার মধ্যে খুব দ্রুত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশকে নেতৃত্বের শূন্যতা থেকে মুক্ত করার ঘটনাকে ইরানি জাতির আরও একটি উচ্চতর আধ্যাত্মিক সক্ষমতা ও উচ্চতর মনোবলের প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন।  

লেবানন ও ফিলিস্তিনি জাতির নানা সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রেও ইরানি জাতি উদার চিত্তে তাদের লেবাননি ও ফিলিস্তিনি দ্বীনী ভাইবোনদের সহায়তায় বন্যার জোয়ারের মত সাহায্যের বিপুল চালান পৌঁছে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। আর এর মধ্য দিয়েও ইরানি জাতির উচ্চতর মনোবল ও আধ্যাত্মিক শক্তি ফুটে উঠেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

ইমাম খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি ইরানি জনগণের বিস্ময়কর সহায়তা, বিশেষ করে ইরানি নারীদের স্বর্ণালংকার উপহার দেয়ার ঘটনাকে ইরানের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ইরানি জাতির দৃঢ় সংকল্প ও ইচ্ছাশক্তি, প্রস্তুতি ও আধ্যাত্মিক মনোবল প্রিয় এই জাতির ভবিষ্যৎ ও সব সময়ের জন্য মূল্যবান পুঁজি এবং এর ফলে এই দেশটির ওপর খোদায়ি অনুগ্রহের ধারা অব্যাহত রয়েছে।   #

342/

Your Comment

You are replying to: .
captcha