আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইসরাইলি গণমাধ্যম হারেটজের প্রতিবেদন মতে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে অপ্রত্যাশিত ইসরায়েলি হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া সংঘাত তেহরানের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এই হামলার ফলে ইরানিদের মধ্যে জাতীয় সংহতি আরও বেড়েছে। ইসরায়েলি সরকার যা আশা করেছিল আজ যুদ্ধবিরতির এক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক খারাপ।
১২ দিনের যুদ্ধের পর ইরানি জনগণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। এমনকি যারা আগে সরকারের বিরোধী ছিলেন তারাও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন, আমাদের দেশের স্বার্থে আমরা যেকোনো আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে লড়াই করব।
নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও এখন ক্রমবর্ধমান জনসাধারণের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে। যা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এই যুদ্ধ কেবল তার কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়নি বরং ইসরায়েলকে কৌশলগত এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার এক অভূতপূর্ব স্তরে নিয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ভৌত অবকাঠামো ধ্বংসের মাত্রা অভূতপূর্ব। ইরানের প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিব, হাইফা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলের পরিবেশ সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আনুমানিক ৮ লাখ টন নির্মাণ ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে। যা ইসরায়েলের বার্ষিক নির্মাণ বর্জ্যের প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশের সমান। দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই বর্জ্য জমা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানে কয়েক ডজন ভবন ধসের চিত্র উঠে এসেছে।
ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল অসাধারণ গতিতে সামরিক আমদানি বাড়িয়েছে। সম্ভাব্য দ্বিতীয় পর্যায়ের সংঘর্ষের প্রস্তুতির জন্য উন্নত অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে পশ্চিমা পণ্যবাহী বিমানের একটি অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ ইসরায়েলি বিমানঘাঁটিতে পৌঁছাতে দেখা গেছে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম আনা হচ্ছে।
ইসরাইল যুদ্ধে এভাবে সহায়তা পেলেও এই সংঘাত দেশটির জনসাধারণের আস্থাকে মারাত্মকভাবে নাড়া দিয়েছে এবং ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থানের মধ্যে গভীর দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।
এমনকি ইসরায়েলি সমাজেও মানসিক ক্ষতি বিস্ময়কর। কিছু বসতি স্থাপনকারী অধিকৃত অঞ্চল থেকে পালিয়ে গেছে। আর যারা রয়ে গেছে তারা এমন একটি যুদ্ধের মানসিক আঘাতের সাথে লড়াই করছে যা তারা আশা করেনি বা প্রস্তুত ছিল না - বিশেষ করে ইরানের প্রতিশোধের মাত্রা বিবেচনায়।
একসময়কার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে নেতানিয়াহু ইরানে ‘শাসক পরিবর্তন’ এর জন্য দীর্ঘকাল ধরে যে স্বপ্ন দেখে আসছিল তাও ম্লান হয়ে গেছে। বরং যুদ্ধ ইরানের স্থিতিস্থাপকতা এবং জাতীয় গর্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
Your Comment