আহলে বাইত (আ.) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা (আবনা): লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওয়াশিংটন হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি উত্থাপন করে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে এই দাবি আরও জোরালোভাবে উল্লেখ করছে ওয়াশিংটন। এই লক্ষ্যে বৈরুত সরকারের উপর চাপও বাড়াচ্ছে মার্কিন সরকার।
লেবাননে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপকে পূর্বশর্ত হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লেবাননে হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণের উপর জোর দিচ্ছে এবং এই বিষয়ে ওয়াশিংটনের লক্ষ্য কী?
লেবাননে হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণের উপর জোর দেওয়ার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল ইহুদিবাদী সরকারের স্বার্থ জোরদার করা। ইহুদিবাদী ইসরায়েল পশ্চিম এশিয়ায় একটি নতুন আঞ্চলিক ব্যবস্থা তৈরির দাবি করছে, এটা এমন একটি ব্যবস্থা যা এই অঞ্চলে ইসরাইয়েলের আধিপত্যকে পাকাপোক্ত করবে। এই ধরণের একটি ব্যবস্থা গঠনের জন্য, প্রতিরোধের অক্ষকে দুর্বল করাই এজেন্ডায় রয়েছে এবং আমেরিকাও এই ইহুদিবাদী এজেন্ডার সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছে।
যদিও লেবাননের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে যে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ এবং সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র কেন্দ্রীভূত করলে বৈরুতের স্বার্থ রক্ষা হবে, বাস্তবতা হলো ওয়াশিংটন তেল আবিবের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই ভাবছে না। এই প্রসঙ্গে, হিজবুল্লাহর একটি সংসদীয় সূত্র বলেছে: "আমেরিকানরা লেবাননের স্বার্থের জন্য নয়, বরং ইসরায়েলের স্বার্থের জন্য কাজ করছে। তারা জোর করে হুকুম এবং এজেন্ডা চাপিয়ে দিতে চায়। তারা চায় লেবানন তার সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করুক, কিন্তু বিনিময়ে তারা ইসরায়েলের কাছ থেকে কিছুই চায় না।"
হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ জোরদারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল লেবাননকে ইহুদিবাদী সরকারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে নিয়ে যাওয়া। প্রকৃতপক্ষে, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার অর্থ হল ইহুদিবাদী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হুমকি দূর করা এবং তেলআবিবের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কাজকে সহজতর করা।
ইহুদিবাদী দখলদারি শাসনব্যবস্থার সাথে লেবাননের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এই শাসনব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিজবুল্লাহ বর্তমানে লেবাননের ক্ষমতা কাঠামোতে একটি বিশিষ্ট অবস্থানে রয়েছে। এই দল ও তার আন্দোলন প্রতিরোধের অক্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বলে বিবেচিত।
আমেরিকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল লেবাননের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করা। একদিকে, আমেরিকা হিজবুল্লাহ ও লেবাননের অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা আন্দোলনের মধ্যে বিভেদ ও ফাটল তৈরি করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার দাবি তুলে (এমনকি তা বাস্তবায়নে সক্ষম না হলেও) বা প্রস্তাব দিয়ে লেবাননে প্রতিরোধ-ধারার রাজনৈতিক ওজন কমানোর চেষ্টা করছে এবং দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে ।
Your Comment