২৪ অক্টোবর ২০২৫ - ০৪:১৫
ভারতে- এআই ব্যবহার করে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপতৎপরতা ।

ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি ছবি ও ভিডিও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর নতুন অপতৎপরতা সৃষ্টি করেছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): এআই এখন সংখ্যালঘু বিরোধী প্রচারণার এক শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। 


জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ায় প্রকাশিত ৬০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটি ২৯ সেপ্টেম্বর সিএসওএইচ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে মুসলিমদের লক্ষ্য করে তৈরি করা ১ হাজার ৩২৬টি এআই-নির্ভর ঘৃণামূলক পোস্ট চিহ্নিত করা হয়েছে, যা এক্স, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে সক্রিয় ২৯৭টি পাবলিক এ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হয়েছে। 


সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রাকিব হামিদ নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, এটি কেবল সমুদ্রে ভাসমান বরফের চূড়ার মতোই দৃশ্যমান ক্ষুদ্র এক অংশ। ভারতের ডিজিটাল জগতে এর পরিধি অনেক বিশাল। 


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে এ ধরনের কার্যক্রম তুলনামূলক কম থাকলেও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা হঠাৎ বেড়ে যায়, যা Stable Diffusion, Midjourney I DALL•E- এর মতো এআই টুল সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সহজলভ্য হয়ে ওঠার সঙ্গে সম্পর্কিত।

এতে আরও বলা হয়,  এআই-নির্মিত ছবিগুলো এখন মুসলিমদের মানবিকতাবোধহীনভাবে উপস্থাপন, ষড়যন্ত্র তত্ত¡ ছড়ানো, সহিংসতাকে নান্দনিকভাবে সাজানো এবং নারীবিদ্বেষ ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।


এই প্রতিবেদন ভারতে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে মুসলিম নারীদের যৌন অবমাননাকর এআই-নির্মিত ছবি ও কনটেন্ট তৈরির প্রবণতা ক্রমবর্ধমান বলে সতর্ক করা হয়। সিএসওএইচ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘যেকোনো সাধারণ প্রতিবাদ বা স্থানীয় সংঘাতকেও এখন সহজেই সা¤প্রদায়িক সংঘর্ষ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, বিশেষ করে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘৃণা ছড়াতে চায় তাদের হাতে। এআই-নির্মিত ছবি এসব প্রেক্ষাপটে সহজেই ব্যবহার করা সম্ভব। 


এই অনুসন্ধানের পর উদ্বেগ বেড়েছে, কারণ ভারত এখনো এআই-নির্মিত মিথ্যা তথ্য ও প্রোপাগান্ডা মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত আইনগত ও সাংস্কৃতিক সক্ষমতা অর্জন করেনি। ডিজিটাল প্রাইভেসি অধিকারবিষয়ক গবেষক শ্রীনিবাস কোদালি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো, এসব কনটেন্ট সমাজের বিভিন্ন অংশে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। 


সিএসওএইচএ’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হামিদ বলেন, সমস্যার মূল লুকিয়ে আছে এআই মডেল তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে, কারণ  যেসব কোম্পানি এই মডেল বানাচ্ছে, তারা বিপুল পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত তথ্য, ঘৃণা ছড়ায় এমন কনটেন্ট ও ষড়যন্ত্র তত্ত¡ দিয়ে সেগুলো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।


প্রতিবেদনটির শেষে নয়টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে এআই মডেল নির্মাতাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে যে, তাদের ‘অবিলম্বে ও ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী শনাক্তকরণ, রিপোর্টিং ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে অপব্যবহার তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত ও রোধ করা যায়।’ 


এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ভারতের ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য নতুন নিয়মের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে জানাতে হবে যে-তাদের কনটেন্ট এআই-নির্মিত কি না।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha