১৪ নভেম্বর ২০২৫ - ০৯:৫৩
মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য: গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের গাজায় খুঁড়ে রাখা একেকটি সুড়ঙ্গ বিস্ফোরকে ঠাসা বলে মনে করে ইসরায়েলি সেনারা- তাঁরা এসব সুড়ঙ্গে ঢোকার আগে গাজার সাধারণ মানুষকে সেখানে পাঠিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিত, সেখানে বিস্ফোরক বা ঝুঁকিপূর্ণ কিছু আছে কি না।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আলোচনা করছিলেন, তাঁরা কীভাবে ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গাজার সুড়ঙ্গগুলোর ভেতরে পাঠাতেন।


বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুজন মার্কিন কর্মকর্তা এসব কথা জানিয়েছেন।


এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা বলেন, এই তথ্যটি হোয়াইট হাউসে পাঠানো হয়েছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে গোয়েন্দা তথ্যটি বিশ্লেষণও করা হয়েছিল।

সামরিক অভিযানের সময় বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে নিষিদ্ধ।

গাজায় নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে—বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন নিয়ে লম্বা সময় ধরে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিলেন বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ওয়াশিংটন এই বিষয়টি নিয়ে নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, যা আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি।

২০২৪ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসা নতুন গোয়েন্দা তথ্য হোয়াইট হাউস ও গোয়েন্দা মহলে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের এই কৌশল কতটা ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছিল এবং ইসরায়েলি সেনারা কি সামরিক নেতাদের নির্দেশেই এমন কাজ করছিলেন কি না।

এই দুই মার্কিন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সংবেদনশীল এসব তথ্য নিয়ে কথা বলেছেন। তবে গোয়েন্দা তথ্যে যেসব ফিলিস্তিনির কথা বলা হয়েছে, তাঁরা বন্দী ছিলেন নাকি বেসামরিক নাগরিক ছিলেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি ওই দুজন।

বাইডেন প্রশাসন এই গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছিল কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স। বাইডেন প্রশাসনের হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি। একইভাবে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, তাদের আইনে বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার কিংবা তাদের সামরিক অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য করা নিষিদ্ধ। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মিলিটারি পুলিশ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ফিলিস্তিনিদের সামরিক অভিযানে ব্যবহার করার অভিযোগ তদন্ত করছে।

এই গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি ইসরায়েলি সরকার।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয়েছে, হামাসও বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, হাসপাতাল ও অন্যান্য আবাসিক ভবনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের সশস্ত্র যোদ্ধারা অবস্থান করত। তবে হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা চালায়। ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, এতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয় ২৫১ জনকে। এর পর থেকে গাজায় নৃশংস ও নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

রয়টার্স গত সপ্তাহে জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসন এমন গোয়েন্দা তথ্যও সংগ্রহ করেছিল, যেখানে ইসরায়েলের আইনজীবীরা সতর্ক করেছিলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করতে ব্যবহার করার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে।

ওই দুই সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের এই নতুন গোয়েন্দা তথ্য মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল। তারা ভেবেছিলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সমর্থন জোগাতে পারে এই গোয়েন্দা তথ্য।

আর ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্রও দেশটিকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে দায়ী হবে। এর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল।

বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে বিভিন্ন মার্কিন সংস্থার আইনজীবীরা এই তথ্য পর্যালোচনা করেন এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হন, প্রাপ্ত তথ্যগুলো থেকে প্রমাণ হয় না যে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে। এই অজুহাত দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha