আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): স্থানীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের জমায়েত ছিল দেখার মত। যার যা সম্বল আছে তাই দিয়ে সহায়তা করছেন এই মসজিদ নির্মাণে। ভিত্তিপ্রস্তরকালে উপস্থিত জনতাকে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিতেও দেখা যায়।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) বহিষ্কৃত নেতা হুমায়ুন কবীর।
ভিত্তিপ্রস্তর শেষে বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেছেন, এই মসজিদ নির্মাণ থেকে কেউই আমাদের থামাতে পারবে না। যতই রাজনৈতিক চাপ থাকুক, মসজিদ নির্মাণের কাজ চলমান থাকবে। বাংলায় মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এসময় তার বিরুদ্ধে তোলা সাম্প্রদায়িক সংঘাতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন হুমায়ুন।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি রাম মন্দিরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর জন্য নয়, বরং সমালোচকরাই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন। আমরা সব ধর্মকে সম্মান করি। কিন্তু বাংলার বাইরে থেকে কেউ এসে এখানে শর্ত চাপিয়ে দিলে আমরা সহ্য করব না।
বাবরি মসজিদের নির্মাণ কেউ থামাতে পারবে না ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, যতই রাজনৈতিক চাপ থাকুক, মসজিদ নির্মাণ কাজ এগোবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি রুপি; যেখানে একই কমপ্লেক্সে একটি হাসপাতালও থাকবে।
হুমায়ূন কবির আরও বলেন, রাজ্যের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে ৮০ কোটি রুপি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘোষণা ঘিরে চলতি মাসের শুরুর দিকে ব্যাপক রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এই ঘোষণার পর মুর্শিদাবাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়াকড়ি করা হয়।
শনিবার বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ঘিরে মুর্শিদাবাদে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যে কোনো ধরনের উত্তেজনা এড়াতে রাজ্য পুলিশ, র্যাফ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের রেজিনগর ও পাশের বেলডাঙা এলাকায় মোতায়েন করা হয়।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’র অভিযোগে হুমায়ূন কবিরকে অনির্দিষ্টকারের জন্য বরখাস্ত করে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এর মধ্যেই শনিবার রাজ্যের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন তিনি। ফিতা কেটে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হুমায়ুন কবীর।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় অযোধ্যা শহরে হামলা চালিয়ে ষোড়শ শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয় দেশটির উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের দাবি, হিন্দু দেবতা রামের জন্মস্থানে নির্মিত প্রাচীন একটি মন্দিরের ওপর বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।
মন্দিরের স্থানে মসজিদ নির্মাণের এই অভিযোগ নিয়ে দেশটিতে কয়েক দশক ধরে হিন্দু-মুসলিম বিবাদ চলে। পরে উগ্রপন্থী হিন্দুরা মসজিদটি ধ্বংস করে দেওয়ায় ভারতজুড়ে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গায় দেশটিতে ২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে; যাদের বেশিরভাগই মুসলিম।
ঐতিহাসিক সেই বাবরি মসজিদ ভাঙার বর্ষপূর্তির দিন (৬ ডিসেম্বর) মুর্শিদাবাদে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় বিধায়ক হুমায়ন কবীর। পরে এ নিয়ে রাজ্যে উত্তেজনা তৈরি ও বিভিন্ন ধরনের সমালোচনার মুখে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
Your Comment