আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক অধিকার সংস্থা (এফআরএ)-এর ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে অপরাধ, ঘৃণা প্রচার ও বৈষম্যের নথিভুক্ত ঘটনার সংখ্যা- ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এই প্রবণতা আর কেবল শারীরিক হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, শ্রমবাজার এবং সামাজিক পরিসরেও তা নিয়মিতভাবে পুনরুৎপাদিত হচ্ছে।
ইউরোপে মুসলিম নারীরা তাদের পোশাক ও দৃশ্যমান ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন। তারা গালিগালাজ, রাস্তায় হয়রানি, চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং সামাজিক চাপের মুখে পড়ছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারি জরিপেও মুসলমানদের মধ্যে বৈষম্যের অনুভূতি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার কথা উঠে এসেছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অনাস্থা ও প্রতিক্রিয়ার ভয় থাকায় অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ জানাতেই সাহস পাচ্ছেন না।
যুক্তরাজ্যে ২০২৫ সালে ইসলামবিদ্বেষী অপরাধ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনলাইন ও রাস্তাঘাট ছাড়িয়ে এই ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছে স্কুল, কর্মক্ষেত্র ও সরকারি সেবায়। ঘৃণাজনিত অপরাধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো নতুন রেকর্ডসংখ্যক অভিযোগের কথা জানালেও, পার্লামেন্টে ইসলামবিদ্বেষের আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা নিয়ে মতবিরোধ চলতে থাকায় কার্যকর নীতিনির্ধারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ফ্রান্সে একটি মসজিদে নামাজরত মুসল্লিকে হত্যার ঘটনা এবং ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হুমকি ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে বৈষম্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এবং রাজনৈতিক ও গণমাধ্যমের ভাষ্য সরাসরি এই উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।
জার্মানিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসলামবিদ্বেষী উদ্দেশ্যে সংঘটিত শত শত অপরাধ নথিভুক্ত করেছে। তবে নাগরিক সংগঠনগুলোর দাবি, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি—কারণ বহু ঘটনা রিপোর্টই করা হয় না।
ইউরোপীয় কমিশন যদিও বর্ণবাদবিরোধী নীতির আওতায় ইসলামবিদ্বেষ মোকাবিলার কথা বলছে কিন্তু সমালোচকদের মতে, ঘোষণার ভাষা ও মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার মধ্যে বড় ধরনের ফাঁক রয়ে গেছে। এমনকি কিছু নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ পরোক্ষভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যকে আরও উসকে দিচ্ছে।
২০২৫ সাল দেখিয়েছে যে, ইউরোপে ইসলামোফোবিয়ার দুটি মুখ রয়েছে; স্পষ্ট সহিংসতা এবং নীরব কাঠামোগত বৈষম্য। মানবাধিকার রক্ষার পশ্চিমা স্লোগান আর মুসলিম সংখ্যালঘুদের বাস্তব অভিজ্ঞতার এই গভীর বৈপরীত্য ২০২৬ সালের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও ইউরোপের অন্যতম প্রধান ও অমীমাংসিত চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে।
Your Comment