আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা শুধু দেশেই নয়, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে কোনো নারীর জানাজায় বৃহত্তম উপস্থিতির এক নতুন নজির স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তার পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বার্তায় আসিফ আলী জারদারি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব এবং ত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুর পরপরই শোক জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি খালেদা জিয়ার আজীবন ত্যাগ এবং দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদানের কথাও স্মরণ করেন।
আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক টুইটে এই শোক জানান শাহবাজ শরিফ। তিনি লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়া পাকিস্তানের একজন নিবেদিতপ্রাণ বন্ধু ছিলেন এবং পাকিস্তান সরকার ও জনগণ শোকের এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে।’
শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমরা এ কঠিন সময়ে খালেদা জিয়ার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে রয়েছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন তাঁর আত্মাকে শান্তি দান করেন। আমিন।’
এদিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আজ এক্সে দেওয়া এক বার্তায় ইসহাক দার খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি; খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঢাকায় মৃত্যুর খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত।’
মোদি লিখেছে, ‘তার পরিবার এবং বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। এই শোকাবহ ক্ষতি সহ্য করার শক্তি যেন সর্বশক্তিমান তাঁর পরিবারকে দেন।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছে, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির উন্নয়নে, পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান সব সময় স্মরণ করা হবে।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্মরণ মোদি লিখেছেন, ‘২০১৫ সালে ঢাকায় তাঁর সঙ্গে উষ্ণ সাক্ষাতের কথা আমার মনে আছে। আমরা আশা করি, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও উত্তরাধিকার আমাদের পারস্পরিক অংশীদারত্বকে ভবিষ্যতেও পথ দেখাবে।’ তাঁর আত্মা শান্তিতে থাকুক।
চীনের প্রধানমন্ত্রী; আজ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেস্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকার ও খালেদা জিয়ার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক সহানুভূতি জানান।
লি কিয়াং লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে আমি গভীরভাবে শোকাহত। চীন সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক সহানুভূতি জানাচ্ছি।’
লি কিয়াং লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এবং চীনের জনগণের পুরোনো বন্ধু। তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব, সমতা ও পারস্পরিক সুফলের ভিত্তিতে সর্বাত্মক সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, যার ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে চীনের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করা হয়।’
যুক্তরাষ্ট্র; আজ সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়া তাঁর দেশের আধুনিক ইতিহাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে তাঁর নেতৃত্ববিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
ইরান; বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ইরান। এক শোকবার্তায় এ শোক জানায় ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের দূতাবাস।
শোকবার্তায় বলা হয়, খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেত্রী। এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। খালেদ জিয়া গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও বাংলাদেশের জনজীবনে রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদানও।
ইরানের দূতাবাস আরও উল্লেখ করে, খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে বাংলাদেশ ও ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় ছিল।
শোকবার্তায় খালেদা জিয়ার পরিবার-পরিজন, বিশেষ করে তার পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পাশাপাশি তার সহকর্মী ও অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। একই সঙ্গে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন; সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের দপ্তর এক বার্তায় জানায়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে আমরা গভীর শোকাহত। শোকাবহ এই পরিস্থিতিতে আমরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবার এবং তার প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এ সময়ে আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি।’
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসও ফেসবুক পোস্টে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
ফ্রান্সের দূতাবাস এক বার্তায় জানায়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের প্রথম নারী সরকারপ্রধান খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশে অবস্থিত ফরাসি দূতাবাস গভীর শোক প্রকাশ করছে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জাতীয় জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এই শোকের সময়ে ফ্রান্স তার পরিবার, তার দল এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জার্মান; গভীর শোক প্রকাশ করে জার্মানি দূতাবাস জানায়, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। গত কয়েক দশকে তার সঙ্গে জার্মানির সম্পৃক্ততার কথা স্মরণ করছে জার্মানি। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৪ সালে ঢাকায় জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশকা ফিশারের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ এবং ২০১১ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানির প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান উলফের সঙ্গে তার বৈঠক। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে জার্মানির জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে।
ফেসবুক পেজে আরও লেখা হয়েছে, ‘এই শোকের মুহূর্তে জার্মানি জাতীয় জীবনে তার (খালেদা জিয়া) অবদানকে সম্মান জানাচ্ছে এবং তার পরিবার, তার দল ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। জার্মানি আমাদের দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি শান্তিতে বিশ্রাম নিক।’
কানাডা; কানাডা হাইকমিশন এক বার্তায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তার পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানায়।
যুক্তরাজ্য; যুক্তরাজ্য জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ইন্তেকালে তারা গভীরভাবে শোকাহত এবং এই দুঃসময়ে তাঁর পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের পাশে রয়েছে।
জাপান; জাপান দূতাবাস তাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছে, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার পরিবার, বিএনপির সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
এতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়া দুইবার জাপান সফর করেন এবং আমাদের দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা জোরদারে মূল্যবান অবদান রাখেন। তার নিষ্ঠা ও উল্লেখযোগ্য অর্জনের জন্য আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তার আত্মা চিরশান্তিতে বিশ্রাম নিক।’
অস্ট্রেলিয়া; অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন তাদের ফেসবুক পেজে লিখেছে, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া।
আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও এর সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে। তাঁকে তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং আগামীকাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।

Your Comment