‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
বুধবার

২৮ অক্টোবর ২০২০

৭:৪৭:৫৮ PM
1081764

মহানবির (স.) প্রতি অবমাননা হল নৈতিকতা, মানবতা, আধ্যাত্মিকতা ও ন্যায়পরায়নতার প্রতি অবমাননা: রামাজানী

মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননার ঘটনায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার মহাসচিব।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননার ঘটনায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার মহাসচিব।
আয়াতুল্লাহ রামাজানী আজ (বুধবার, ২৮ অক্টোবর) অনলাইনে অনুষ্ঠিত তার ফিকাহ বিষয়ক দরসে খারিজে বলেন: মহানবি (স.) ও ইমাম সাদিক (আ.) এর পবিত্র জন্মবার্ষিকীর দিনগুলো বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অতি আনন্দের। কিন্তু দুঃখজনকভাবে মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননার মাধ্যমে আনন্দের এ দিনগুলোকে দুঃখ ও শোকের দিনে রূপান্তরীত করেছে।
তিনি বলেন: মহানবির (স.) প্রতি অবমাননা হল নৈতিকতা, মানবতা, আধ্যাত্মিকতা ও ন্যায়পরায়নতার প্রতি অবমাননা। সকল মুসলমান, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মুসলিম দেশসমূহে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, মুসলিম ও অমুসলিম সরকার ও জাতিসমূহের উচিত সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবি (স.) এর অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা।
আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার (মাজমা) মহাসচিব মহানবি (স.) এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন: হজরত মুহাম্মাদ (স.) হচ্ছেন দয়া ও ভালবাসার নবি এবং তিনি ভালবাসাকে ছড়িয়ে দিতে এসেছেন। মহানবি (স.) এর চরিত্র ও নৈতিকতা পবিত্র কুরআনের মূর্ত প্রতীক। স্বয়ং মহান আল্লাহ (সূরা ক্বালামের ৪নং আয়াতে) মহানবি (স.) এর চরিত্র ও নৈতিকতার মহত্বের সাক্ষ্য দিয়েছেন। যে নবি (স.) মুশরিকদের শত আঘাত ও নির্যাতন সহ্য করেছিলেন তিনি মক্কা বিজয়ের পর হজরত আলী (আ.) থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন যেন রক্তপাত না ঘটে। মানবজাতির হেদায়েতের বিষয়ে মহানবি (স.) সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকতেন। হেদায়েতের কাজে তিনি ছিলেন অতি আগ্রহী, আর এ কাজের জন্য তিনি নিজেকে কষ্টে ফেলতেন।
পশ্চিমা বিশ্বে মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননার বিষয়ে তিনি বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার কিছু কিছু দেশ –যারা নিজেদেরকে মানবাধীকারের রক্ষক ও সভ্য বলে মনে করে- পবিত্র কুরআনের প্রতি অশোভনীয় আচারণ করে সহিংসতাকে ইসলামের সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করে। অথচ পবিত্র কুরআনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আয়াত রহমত, দয়া, করুণা ও মানবতার কথা বলে। পবিত্র কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী -‘আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি’- সমগ্র মানবসমাজে মহান আল্লাহর রহমতের প্রসার এবং সমগ্র মানবজাতিকে উন্নত চরিত্রের শিক্ষা প্রদানের জন্য মহানবি (স.) আদিষ্ট হয়েছেন।
তিনি বলেন: দুঃখজনকভাবে বেশ কয়েক দশক ধরে, পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা অজুহাত ও রূপে তীব্রভাবে ইসলাম ভীতি ছড়ানোর প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাক স্বাধীনতা ঐ অজুহাতগুলোর অন্যতম। বাকস্বাধীনতার অজুহাতে আমরা বারংবার মহানবি (স.) ও মুসলমানদের প্রতি অবমাননা প্রত্যক্ষ করছি। পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম ভীতির প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু তারপরও তারা তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা পাঠ্যপুস্তকে মহানবি (স.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের চেষ্টায়ও ত্রুটি করছে না।
বাকস্বাধীনতার বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন: পশ্চিমা বিশ্বে হলোকাস্টের বিষয়ে গবেষণাকারী গবেষক ‘রজার গারুডি’কে কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছিল এবং আদালতের রায়ে তাকে অর্থদণ্ডও গুণতে হয়েছিল। যদি পশ্চিমা বিশ্বের কোন প্রেসিডেন্টকে অবমাননা করা হয়, তারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কিন্তু মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননাকে তারা বাকস্বাধীনতা বলে চালিয়ে দেয়! অথচ তৌরাত ও ইঞ্জিলে পবিত্র ব্যক্তিত্ব ও নিদর্শনসমূহের প্রতি অবমাননা অপরাধ হিসেবে গন্য হয়েছে। অতিতে যারাই পবিত্র ব্যক্তিত্ব ও নিদর্শনসমূহের প্রতি অবমাননা করতো তাদেরকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হত। একইভাবে পবিত্র ব্যক্তিত্ব ও নিদর্শনসমূহের প্রতি অবমাননা আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী এবং (মানব সমাজেও) অবমাননা ঘৃণ্য ও জঘন্য কাজ হিসেব বিবেচিত।
হাওযা ইলমিয়ার বিশিষ্ট এ উস্তাদ বলেন: যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে ইনসাফ ভিত্তিক সন্ধির প্রয়োজন বোধ করছে মানব সমাজ। কিন্তু পশ্চিমা সরকারগুলো মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননার মাধ্যমে সহিংসতার প্রসার ঘটাচ্ছে। তারা সন্ধি ও নৈতিকতার শ্লোগান দিলেও মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননা করে –যে মহানবি (স.) নিজেই নৈতিকতার মূর্ত প্রতীক, আর তার আনীত ধর্ম; সন্ধি, নিরাপত্তা ও নৈতিকতার ধর্ম এবং মানব সমাজে ইনসাফ ভিত্তিক সন্ধি সৃষ্টিতে সোচ্চার-। মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননা প্রকৃত অর্থে নৈতিকতা, ন্যায়পরায়নতা, আধ্যাত্মিকতা ও ইনসাফ ভিত্তিক সন্ধির প্রতি অবমাননা; মানবিক মূল্যবোধের প্রতি অবমাননা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানব সমাজে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি, ত্রাস, ভয়-ভীতি বিরাজমান এহেন পরিস্থিতিতে মহানবি (স.) এর মত ব্যক্তিত্বের পরিচয় তুলে ধরা জরুরী।
মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তিতে মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবীগণ (আ.) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ওয়াজিব ও ফরজ। (পশ্চিমাদের) কেউ কেউ অবমাননাকে বাকস্বাধীনতার আওতাভূক্ত বলে সংজ্ঞায়িত করছে; তারা বোঝাতে চাচ্ছে, ‘আমাদেরকে উদার হতে হবে যাতে বাকস্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্থ না হয়’। ফ্রান্সের মত একটি দেশের শাসকের বক্তব্য হচ্ছে, ‘আমাদের অবস্থান বাকস্বাধীনতার পক্ষে এবং ঘটমান অবমাননা বাকস্বাধীনতার আওতাভূক্ত’। কিন্তু বিভিন্ন যুক্তি ও দলিলের ভিত্তিতে প্রমাণিত যে, কোন অবস্থাতেই অবমাননা বাকস্বাধীনতার আওতাভূক্ত নয়। এ কারণেই আসমানী গ্রন্থসমূহ, মানব বুদ্ধিবৃত্তি, মানবাধিকার আইন এবং যে নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও ইনসাফ ভিত্তিক সন্ধির প্রয়োজনীয়তা মানব সমাজ বোধ করে তার ভিত্তিতে বিবেচনা করলে মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননা নিন্দিত ও ঘৃণিত।
ফ্রান্সের সরকারের উদ্দেশ্যে আয়াতুল্লাহ রামাজানী বলেন: মানবজাতির স্বাধীনতার বিষয়ে আপনারা উদ্বিগ্ন, পক্ষান্তরে মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননার মাধ্যমে ১৯০ কোটি মানুষের হৃদয়ে আঘাত করেছেন। আপনাদের এ কর্ম কি মানব সমাজে সহিংসতা সৃষ্টি নয়?! সত্যিকার অর্থেই যদি আপনারা মানবসমাজে সহিংসতা ও ঘৃণার সম্প্রসারণের ঘোর বিরোধী হয়ে থাকেন তাহলে মানবেতিহাসে সবচেয়ে পবিত্র ব্যক্তিত্বের সাথে এমন আচারণ কি সমাজে সহিংসতা ও ঘৃণা সম্প্রসারণের মধ্যে পড়ে না?! সমাজে ভালবাসা, জ্ঞান, যৌক্তিকতা এবং নৈতিকতার প্রসার কি জরুরী নয়?! মহানবি (স.) ও পবিত্র কুরআনের প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপের মাধ্যমে আপনারা সমাজে হুমকি ছড়িয়ে দিতে চান।
তিনি বলেন: যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবসমাজে ঐক্য ও সংহতি প্রয়োজন। মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্য ও সংহতি যত মজবুত হবে, মুসলমানরা সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতে ততবেশী শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর হবে। আর তাই মুসলমানদের মাঝে ঐক্য জোরদার করার লক্ষ্যে কদম ওঠাতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে আহলে বাইত (আ.) এর শিক্ষা হতে পারে কাণ্ডারী। তাই আহলে বাইত (আ.) এর কালাম (কথা)-এর সৌন্দর্যের প্রসার ঘটানো জরুরী। তবে প্রথমে তাদের কথার সৌন্দর্য অনুধাবন করতে হবে, তারপর মানবসমাজে তা প্রচার করতে হবে।
পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম বিদ্বেষের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন: পশ্চিমা বিশ্বে দিন দিন ছড়িয়ে পড়া ইসলাম বিদ্বেষের কারণ হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে ইসলাম ধর্ম বর্তমান মানব সমাজের সকল প্রশ্নের উত্তর দানে সক্ষম। ইসলামে যে সকল শিক্ষা রয়েছে, তা শাসক গোষ্ঠির মনে এ ভীতি জন্ম দিয়েছে যে, গোটা মানব জাতি ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। কেননা যখনই কোন সমাজে (ইসলাম বিরোধী) ষড়যন্ত্রের পরিমাণ বেড়ে যাবে বুঝতে হবে যে, সেই সমাজে (ইসলামি শিক্ষার) প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যদি ইসলাম ধর্মকে সঠিকভাবে পরিচয় করানো হত তাহলে মানুষ এ ধর্মের দিকে আরও বেশী আকৃষ্ট হত। ইসলামি শিক্ষার মাঝে বিদ্যমান বিশেষ আকর্ষণের কারণে পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামকে সীমাবদ্ধ করছে। শরিয়তকে ইসলাম ধর্ম থেকে পৃথক করে হিজাবের মত ইসলামি বিধানের মোবাবিলা করা হচ্ছে সেখানে। তারা বলছে ধর্ম স্বাধীনতা বিদ্যমান, একই সময় তারা হিজাবকে নিষিদ্ধ করছে! পশ্চিমা বিশ্বে দু’টি দেশ ইসলাম ধর্মকে স্বীকৃতি দিয়েছে; তাদের একটি হল অস্ট্রিয়া, এখানেও হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রায় প্রতিনিয়ত হিজাবধারী নারীরা হামলার শিকার হন। পশ্চিমা অনেক দেশে উচ্চ ও সুশিক্ষিত নারীদেরকে তাদের হিজাবের কারণে চাকরীতে নিয়োগ দেয়া হয় না। একইভাবে যে সকল দেশ সমাবেশ ও অনুষ্ঠানাদি পালনে স্বাধীনতা প্রদানের দাবী করে তারা মসজিদে হামলা চালায় এবং মুসলমানদের উপর একেরপর এক চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে সামাজিক দুর্দশা ও সমস্যায় ফেলে।
মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননার ঘটনায় মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তিনি বলেন: মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননার বিরুদ্ধে মুসলমানরা বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া জানাবে। এটা ভাবা ঠিক হবে না যে, মুসলমানরা তাদের নবি, কুরআন ও ইমামদের প্রতি অবমাননার কথা শুনে এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। যে মুসলিম সমাজ ইসলামি বিধি-বিধান পালনে অধিক সোচ্চার তারা ইসলামি বিধান, শরিয়ত, কুরআন, মহানবি (স.) ও ইমামগণ (আ.) এর বিরুদ্ধে অবমাননার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
তিনি বলেন: পশ্চিমাদের উচিত নয় মানব সমাজে উত্তেজনা ও টানাপোড়ন সৃষ্টির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নিজেদের বিভিন্ন অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বে উত্তেজনা ও টানাপোড়ন সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরী করে ফেলেছে তারা। আর তাই তারা আইন বিরোধী বিভিন্ন কাজ নানা অজুহাত ও ভ্রান্ত যুক্তি দেখিয়ে করে চলেছে। এর বিপরীতে তার চায় মুসলমানরা যেন নিরব থাকে এবং কোন কথা না বলে। আমরা আশাবাদী যে, বুদ্ধিজীবি সমাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের উচিত এ ধরনের অবমাননাকর পদক্ষেপ কি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে সে দিকে খেয়াল রেখে ঘৃণ্য ও জঘন্য এ পদক্ষেপের নিন্দা জানানো।
তিনি বলেন: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এমন অবমাননাকর পদক্ষেপের বিপরীতে ঐশী ধর্মের নেতাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশী। তাদের উচিত এ অবমাননার বিরুদ্ধে নিজেদের কর্তব্য পালন করা।#176