‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বুধবার

২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

৪:২৯:৫৩ PM
1306990

খান জাহান আলী: একজন ইসলাম প্রচারক, সেনানায়ক ও দক্ষ শাসকের কথা

খান জাহান আলী কী একজন পীর না প্রশাসক? এ প্রশ্নের উত্তর দু’টোই। তবে মূলত: তিনি একজন বীর সেনানায়ক, দক্ষ প্রশাসক এবং ইসলাম প্রচারক। ঐতিহাসিকদের কাছে তার পরিচয় কুতুবুদ্দিন আজম শাহ ওরফে আল-আজম উলুগ খান।

তৎকালীন গৌড়ের সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে তিনি  দক্ষিণ বাংলার বিশাল অঞ্চল জয় করে এ অঞ্চলের নামকরণ করেন খলিফাবাদ। আজকের বৃহত্তর যশোর অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগ, ফরিদপুর ও বরিশালের কিছু অংশ এবং পশ্চিমবাংলার চব্বিশ পরগনা ও নদিয়া জেলা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল খান জাহান আলীর প্রশাসনিক অঞ্চল। ১৪৫৯ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত খান জাহান আলী হাভেলী খলিফাবাদ (বর্তমান বাগেরহাট) থেকে উক্ত অঞ্চল শাসন করেন।

সুলতানী আমলে গনেশ দত্ত খান নামের দিনাজপুর অঞ্চলের একজন হিন্দু নৃপতি (১৪০০-১৪১১ খ্রিষ্টাব্দ) একটি স্বাধীন হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে পরাজিত হন। পরে তার পুত্র যদু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জালাল উদ্দিন মহাম্মদ শাহ নাম ধারণ করে ১৪১৮ থেকে ১৪৩২ সাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেন। এ সময় একজন অন্তর্বর্তীকালীন সুলতানের ভূমিকা পালনকারী কুতুবুদ্দিন আজম শাহ ওরফে খান জাহান আলী খলিফাবাদের পক্ষে মুদ্রাও প্রচলন করেন। এ রকম কয়েকটি মুদ্রা সিলেট অঞ্চলে পাওয়া গেছে।

“বাংলাদেশে প্রাচীন কীর্তি“ পুস্তকের লেখক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া উল্লেখ করছেন, খান জাহান আলী খুব সম্ভবতঃ রাজা গনেশের পুত্র যদু অর্থাৎ জালাল উদ্দিন মহাম্মদ শাহের আমলে (১৪১৮-৩২ খৃষ্টাব্দ) বাগেরহাটে এসেছিলেন একজন শাসনকর্তা হিসেবে। সেই সময় থেকে আরম্ভ করে জালাল উদ্দিন পুত্র শামস উদ্দিন আহমদ শাহ (১৪৩২-৩৬) এবং পরবর্তী সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের রাজত্বকাল (১৪৩৬-৫৯) পর্যন্ত  প্রায় চল্লিশ বছর ধরে অনেকটা স্বাধীনভাবেই  খলিফাবাদ শাসন করেছেন খান জাহান আলী।   

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা মাওলানা আব্দুল মান্নান তালিব বলেছেন, যশোর ও খুলনা অঞ্চলে ইসলাম প্রচার, ইসলামী ভাবধারার প্রচলন ও ইসলামী সমাজবিধি প্রবর্তনে হযরত উলুখ খান-ই-জাহান বা খান জাহান আলী’র নাম সর্বাগ্রে স্মরণযোগ্য। এই দুই জেলায় প্রচলিত জনশ্রুতি এবং বাগেরহাটে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে অনুমিত হয় যে, তিনি সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের একজন সেনাপতি ছিলেন এবং তিনিই এ এলাকায় মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন করেন। তিনি নিজে ইসলাম প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শিষ্যগণকেও বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচারে জন্য প্রেরণ করেন। তার সংগঠন ক্ষমতা, জনসেবা ও অকৃত্রিম চরিত্র মাধুর্যে মুগ্ধ-বিমোহিত হয়ে এতদচঞ্চলের অমুসলিম সম্প্রদায়গুলো দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে।

খান জাহান আলীর তৈরি ষাট গম্বুজ মসজিদ

এসব ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ ছাপিয়ে এ বীর শাসক উলুগ খান এদেশের সাধারণ হিন্দু-মুসলমানদের কাছে খাঞ্জে আলী পীর নামে অধিক পরিচিত। নিঃসন্তান হবার কারণে খাঞ্জে আলী পীরের কোন বংশপরম্পরা রক্ষা হয় নি। তবে তার ভাইদের বংশধরগণ এতদঞ্চলের সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত পরিবার হিসেবে ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে চলছেন।

এরকম একজন অধস্তন পুরুষ গবেষক, লেখক ও কবি মহসিন হোসাইন এ প্রসঙ্গে রেডিও তেহরানকে বলেন, খান জাহান আলী ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি এবং  সুবা বাংলার উজিরে আজম। সাধারণ মানুষ, হিন্দু-মুসলমান তাকে চেনে খাঞ্জে আলী  বা খাঞ্জেলী পীর বলে।

খান জাহান আলী বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে বৃহত্তম এবং সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম চিত্তাকর্ষক নিদর্শন ষাট গম্বুজ মসজিদসহ অসংখ্য মসজিদ ও রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করেন এবং প্রজাদের কল্যাণে পুকুর-দিঘি খনন করে সুপেয় পানির আধার ব্যবস্থা করেন।  

ঐতিহাসিকগণ মনে করেন, কুতুব উদ্দিন আজম শাহ ওরফে খান জাহান আলী সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও বাংলার সুলতান হতে চান নি। কিন্তু রাজা গনেশের ষড়যন্ত্রের সময় সমান্তরাল সুলতান হিসেবে নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন করে সঙ্কটকালে তার নিজের ও ইলিয়াস শাহী শাসনের অস্তিত্ব রক্ষা করেছেন।#

342/