২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে গঠিত কমিটির প্রথম সভায় প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২শ ২২ জন বুদ্ধিজীবীর তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে গত বছর ২০২১ সালের ২৫ মার্চ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযু্দ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথম দফার তালিকায় স্থান পায় ১৯১ শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম। যদিও চলতি বছরের (২০২২ সাল) ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা পূর্ণাঙ্গ করার কথা জানিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। কিন্তু প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের এক বছর ৯ মাস হয়ে এলেও এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই।
এবিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আজ বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ২৬ মার্চের আগে বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
বুদ্ধিজীবীদের এই তালিকা প্রণয়নে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব তপন কান্তি ঘোষকে করা হয় কমিটির সভাপতি। মন্ত্রণালয়ের তখনকার অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল হক ভূঁঞাকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। আর উপসচিব রথীন্দ্র নাথ দত্ত কমিটিতে সদস্য-সচিব হন। কিন্তু গত বছরের ৩০ মে তপন কান্তি ঘোষকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।
কমিটিতে গবেষক সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ এবং গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের গবেষক গাজী সালাউদ্দিন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং গবেষক লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ জহির (বীরপ্রতীক)।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাদের সন্তানরা। শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার বলেন,বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো হয়নি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর রেডিও তেহরানকে বলেন,পুরো তালিকা করাটা কঠিন ও কষ্টসাধ্য হলেও শুধু মাত্র আন্তরিক চেষ্টা থাকলেই কেবল এটা সম্ভব হবে। নয়তো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আর অনেক শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের কোন সদস্যকেই হয়ত আর খুজে পাওয়া যাবে না। তাই মাঠ প্রশাসনের নিন্মস্তর থেকে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে আরো তৎপরতা বৃদ্ধির পরামর্শ এ শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তানের।
এদিকে, শহীদ বুদ্ধিজীবী পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতের জন্য গঠিত কমিটির গবেষক সদস্য,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল রেডিও তেহরানকে বলেছেন,কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি সংজ্ঞা নির্ধারন করা হয়েছে। সবই ঠিক আছে কিন্তু বাস্তবিক কাজের তৎপরতা কম থাকায় ধীর গতিতে এগুচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতের কাজটি।#
342/