২৩ মে ২০২৩ - ১৫:৫৮
সৎকর্মশীলরা সর্বদা আল্লাহকে হাযির-নাযির মনে করে : আয়াতুল্লাহ আহমাদ আবেদী

সর্বোচ্চ পর্যায়ের ইহসান সম্পর্কে তিনি বলেন: সর্বোচ্চ পর্যায়ের ইহসান (সৎকর্ম) হচ্ছে সর্বদা নিজেকে আল্লাহর সান্নিধ্যে অনুভব করা; পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে মুহসিনীন (সৎকর্মশীলরা) এমন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): দরসে খরিজের বিশিষ্ট উস্তাদ আয়াতুল্লাহ ‘আহমাদ আবেদী’ বললেন: সাধারণত ক্রোধ বা রাগের উৎস হলো অহমিকা, নিজেকে বড় ভাবা এবং অহংকার! যে নিজেকে অন্যদের থেকে বড় ভাবে, তার সামনে কেউ কিছু বললে সে দ্রুত রেগে যায়। কিন্তু সে নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোট ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করলে ক্রোধান্বিত হয় না।

তিনি বলে: ধার্মিক ব্যক্তিরা কম রাগান্বিত হয়। যেমন, যে বেশি মসজিদে যায়, জামাতে নামাজ আদায় করে বা হজ্জ ও জিয়ারত যায়, সে তুলনামূলক কম রাগান্বিত হয়।

 হাওযা ইলমিয়া কোমে’র বিশিষ্ট এ উস্তাদ মুহসিনীনের (সৎকর্মশীলদের) তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন: মহান আল্লাহ সূরা আলে ইমরানের ১৩৪নং আয়াতে বলেছেন:

الَّذِيۡنَ يُنۡفِقُوۡنَ فِى السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالۡكٰظِمِيۡنَ الۡغَيۡظَ وَالۡعَافِيۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الۡمُحۡسِنِيۡنَ ۚ‏

‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।’

অতএব, যারা উপরোক্ত তিনটি কাজ আঞ্জাম দেয় তারা সৎকর্মশীল এবং মহান আল্লাহ্ সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।

আল্লামা তাবাতাবাঈ দারুল-কুরআন কোমের পরিচালক বলেন, ইহসান শুধু কল্যাণকর কর্ম নয়, বরং সর্বোচ্চ ইহসান হল নিজেকে সর্বদা আল্লাহর সান্নিধ্যে অনুভব করা।

আল্লাহর রাসূল (সা.) থেকে শিয়া ও সুন্নি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আবুযার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, ইহসান মানে কি?

মহানবী (সা.) বললেন :

«الإحسانُ أن تَعبُدَ اللّهَ کَأنَّکَ تَراهُ، فإن لَم تَکُن تَراهُ فَإنَّهُ یَراکَ»

‘ইহসান হলো;  এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত (ও কর্ম সম্পাদন) করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছো; আর তুমি যদি আল্লাহকে নাও দেখতে পাও তিনি তোমাকে দেখছেন।

 একদা নবী (সা.) এক মৃত ব্যক্তির দাফনের সময় তিনি সযত্নে ঐ ব্যক্তির কবর ঢেকে দিচ্ছিলেন । জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলো: আল্লাহর রাসূল কি ভয় পাচ্ছেন যে, মৃত ব্যক্তি কবর থেকে পালিয়ে যাবে?!  মহানবি (স.) বললেন: আল্লাহ্ এমন বান্দার প্রতি রহম করুন যে সঠিক কিছু করে। এই কাজটি মানুষ দেখুক আর না দেখুক আল্লাহ তো দেখছেনই যে সঠিক ভাবে আঞ্জাম দিলাম কি না।

সূরা আত-তওবার ১৫নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ ۗ وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

‘এবং তাদের মনের ক্ষোভ দূর করবেন। আর আল্লাহ যার প্রতি ইচ্ছা ক্ষমাশীল হবে, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’

আল্লাহ এই লোকদের অন্তর থেকে ক্রোধ ও দুঃখ দূর করেন এবং তাদের ঐ তওবা ও অনুতাপকে কবুল করে নেন যে অনুতাপ হবে ক্রোধ মুক্ত। তাই যে তওবা করতে চায়, তার জানা উচিত যে, তওবার পূর্ব শর্ত হলো রাগান্বিত না হওয়া।

কবিরা গুনাহ ত্যাগ, ক্রোধান্বিত না হওয়ার পূর্ব শর্ত বলে উল্লেখ করে হাওযা ইলমিয়া কোমের বিশিষ্ট এ উস্তাদ বলেন: সূরা শুরার ৩৭নং আয়াতে বলা হয়েছে:

«وَالَّذِینَ یَجْتَنِبُونَ کَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ وَإِذَا مَا غَضِبُوا هُمْ یَغْفِرُونَ»

‘এবং যারা মহাপাপ (কবিরা গুনাহ) ও অশ্লীল কাজ হতে দূরে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করে দেয়’। রাগকে দমনের পূর্ব শর্ত হলো কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। ফাওয়াহিশ (অশ্লীল কর্ম) অর্থ শুধু ব্যভিচার নয় বরং এখানে ফাওয়াহিশ বলতে ব্যভিচার বা মা-বোন তুলে গালি দেওয়াও হতে পারে, আবার না-মাহরামের দিকে তাকানোও হতে পারে। সার্বিকভাবে  এগুলোর সবকটিকেই ফাওয়াহিশ বলা যেতে পারে। অতএব,  ক্রোধান্বিত ব্যক্তিরা এ ধরনের গুনাহ আঞ্জাম দেয়।

অর্থ ও নারী কেন্দ্রীক গুনাহগুলোর পারস্পারিক সম্পর্কের ভুরিভুরি উদাহরণ বর্ণিত হয়েছে; রাগী লোকদের জন্য সম্পদ গুরুত্ব রাখে অথবা তারা নারী সংশ্লিষ্ট গুনাহগুলোয় লিপ্ত। অবশ্য এ বিষয়টির প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে যে, কেউ রেগে গেলে এর অর্থ এমন নয় যে, আমরা বলবো ওমুক ব্যক্তি ওমুক গুনাহ করেছে, এমনটি বলা ঠিক নয়। কিন্তু বিষয়টি হল এমন, যে  ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ ও নারী কেন্দ্রীক গুনাহে লিপ্ত তারা (দ্রুত) রেগে যায়।#176