‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
মঙ্গলবার

৫ ডিসেম্বর ২০২৩

৪:২২:০৩ PM
1417635

হজরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) পরিপূর্ণ অর্থে মানবতার জন্য এক উত্তম আদর্শ : আয়াতুল্লাহ রামাজানী

আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব বলেছেন, ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গৃহ পরিচালনা করতেন সিদ্দিকা-এ কোবরা, আমরা তাঁর নিকট থেকে সর্বোত্তম ধরনের শিক্ষাদান প্রত্যক্ষ করেছি, তিনি ছিলেন সর্বোত্তম প্রশিক্ষক এবং তিনি সর্বোত্তমদেরকে প্রশিক্ষণ দান করেছেন।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ধর্মীয় নগরী কোমে আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব আয়াতুল্লাহ রেজা রামাজানীর আলোচনা এবং কারবালায়ী আলীরেজা আফসারীর শোকগাথা পরিবেশনায় আইয়্যামে ফাতেমিয়ার শোকানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই অনুষ্ঠানে আয়াতুল্লাহ রামাজানী বলেন, একজন নারী চাইলে ঘরে এবং ঘরের বাইরে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। কখনো কখনো বাহিরে নারীর ভূমিকা পূর্ব নির্ধারিত নয় বরং প্রয়োজন সাপেক্ষ হয়ে থাকে; যেমন নারীদের চিকিৎসা শাস্ত্রের মত কতিপয় বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা উচিত যাতে শরীয়তের বিধান ঠিক রাখা যায়।

প্রশিক্ষক হিসেবে একজন নারীর সামাজিক ভূমিকা পালন করার বিষয় উল্লেখের পর তিনি বলেন, সামাজিক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি, একজন নারী তার পরিবারের শিশুদের প্রশিক্ষক এবং এই মর্যাদাটি আল্লাহ তাকে দান করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পশ্চিমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়, সন্তানের প্রশিক্ষণে পিতা-মাতার ভূমিকা শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে এবং মূলতঃ এই ভূমিকা তাদের নিকট থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এটি একটি বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে, কেননা একটি শিশুর লালন-পালনে পিতামাতার ভূমিকা এবং পরিবারের মধ্যে বেড়ে ওঠা পূর্ব নির্ধারিত এবং মৌলিক।

সিদ্দিকা-এ কোবরার (সা.আ.) মর্যাদা এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব বলেন, হজরত ফাতিমা যাহরার (সা.আ.) মধ্যে অনুভূতি, আবেগ, বুদ্ধিবৃত্তি এবং সেবার ভূমিকা রয়েছে। যেখানেই প্রয়োজন হয়, তিনি জনসমক্ষে উপস্থিত হন, ভাষণ দেন এবং আল্লাহর খলিফার পাশে অবস্থান নেন; এই বৈশিষ্ট্যাবলী হজরত যাহরার (সা.আ.) মধ্যে বিদ্যমান এবং তিনি পরিপূর্ণ অর্থে মানবতার জন্য এক উত্তম আদর্শ।

তিনি বলেন, হজরত যাহরা (সা.আ.) বাড়িকে এতটাই নিরাপদ করেন যে, আমিরুল মুমিনীন (আ.) প্রশান্তি অনুভব করতেন। মুমিনদের উদ্দেশ্যে একটি আয়াত নাজিল হয়, তারা যেন রসুলকে (সা.) নাম ধরে না ডাকে। হজরত ফাতিমা সা.আ বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বিস্ময় ও মহিমা আমাকে “হে পিতা!” বলে ডাকতে বাধা দিচ্ছিল। আমি চেয়েছিলাম: “হে আল্লাহর রসূল!” বলে ডাকতে। তখন তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আমার কন্যা, এই আয়াত তোমার জন্য অবতীর্ণ হয়নি। তুমি আমার থেকে আর আমি তোমার থেকে। তুমি আমাকে পিতা বলে ডাকো, কেননা এই শব্দটি আমার নিকট অধিক প্রিয় এবং আল্লাহর নিকট অতীব পছন্দনীয়।

হজরত ফাতিমাকে (সা.আ.) “উম্মে আবিহা” হিসেবে উপস্থাপন করে হাউযা ইলমিয়ার উচ্চ স্তরের এই শিক্ষক বলেন, সূরা দাহর আমাদেরকে জীবন যাপন করতে শেখায়; «إِنَّمَا نُطۡعِمُكُمۡ لِوَجهِ ٱللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمۡ جَزَآءٗ وَلَا شُكُورًا» হজরত ফাতিমা (সা.আ.) ও আহলে বাইত (আ.) কারো নিকট কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ চান না বরং তারা স্থায়িত্বের জন্য কাজ সম্পাদন করেন।

তিনি বলেন, হজরত খাদিজার (সা.আ.) ওফাতের পর হজরত ফাতিমা (সা.আ.) পিতার সেবায় নিয়োজিত হন এবং এক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি আরও বলেন, তিনি সর্বোত্তম রূপে একজন স্ত্রীর ভূমিকা পালন করেছিলেন, যেমনটি হজরত আলী (আ.) বলেছেন, নবীর (সা.) কন্যা আমাকে একবারের জন্যও রাগান্বিত বা বিচলিত করেননি এবং এমন কোন অবস্থা তৈরি হয়নি যাতে আমার অবাধ্য হয়েছে। যখনই আমার উপর কোন কষ্ট পতিত হত, ফাতিমার দিকে তাকালেই আমার কষ্ট দূর হয়ে যেত।

বর্তমানে মানুষের জীবনধারার কথা উল্লেখ করে আয়াতুল্লাহ রামাজানী বলেন, বর্তমান সময়ে মানুষের রুচির পরিবর্তনের কারণে, ভোগ-বিলাসিতা সাধারণ হয়ে উঠেছে এবং মানুষের উচ্চাঙ্ক্ষার কারণে বিয়ের বয়সও বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা মনে করা হয় যে, সমকক্ষ হওয়া অর্থ বস্তুগত বিষয়ে একই স্তরে অবস্থান করা, যেখানে সমকক্ষতা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ; অর্থাৎ উভয়ের উচিত মুমিন থাকা।

পারিবারিক ক্ষেত্রে হজরত যাহরার (সা.) প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাগত ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সিদ্দিকা-এ কোবরা ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গৃহ পরিচালনা করতেন, আমরা তাঁর নিকট থেকে সর্বোত্তম ধরনের শিক্ষাদান প্রত্যক্ষ করেছি, তিনি ছিলেন সর্বোত্তম প্রশিক্ষক এবং তিনি সর্বোত্তমদেরকে প্রশিক্ষণ দান করেছেন।

আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব বলেন, হজরত যাহরার (সা.আ.) ফিজ্জা নামক একজন সেবিকা থাকা সত্ত্বেও নিজে গৃহস্থালির কাজ সম্পাদন করতেন এবং সর্বোত্তম রূপে ইনসাফ রক্ষা করতেন। কোন এক আলেম বলতেন, হজরত যাহরার (সা.আ.) ন্যায় অনেকে বরকতময় জীবন যাপন করেছে, দোয়া করুন যাতে আমাদেরও বরকতময় জীবন হয়।

আলোচনার শেষাংশে আল্লাহর খলিফার পাশে সিদ্দিকা-এ কোবরার (সা.আ.) অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ আল্লাহর খলিফার পাশে অবস্থান করতে চাইলে, তাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল এবং প্রতিরোধী হতে হবে। একটি হাদিসে ইমাম রেজা (আ.) বলেন,

لا يكونُ المؤمنُ مؤمنا حتّى تكونَ فيه ثلاثُ خِصالٍ: سُنّةٌ مِن ربِّهِ، و سُنّةٌ مِن نبيِّهِ صلى الله عليه و آله، و سنّةٌ مِن وليِّهِ عليه السلام؛ فأمّا السُّنَّةٌ مِن ربّهِ فكِتْمانُ السِّرِّ، و أمّا السُّنَّةُ مِن نبيِّه صلى الله عليه و آله فمُداراةُ النّاسِ، و أمّا السُّنَّةُ مِن وليِّهِ عليه السلام فالصَّبرُ في البَأْساءِ و الضَّرّاءِ.

একজন মুমিন ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ না তার মধ্যে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকে; একটি তার রবের বৈশিষ্ট্য, একটি তার নবীর বৈশিষ্ট্য একটি আল্লাহর খলিফার বৈশিষ্ট্য। তার রবের বৈশিষ্ট্য, রহস্য গোপন রাখা; আল্লাহর নবীর বৈশিষ্ট্য, মানুষের সাথে নম্র ব্যবহার করা; এবং আল্লাহর খলিফার বৈশিষ্ট্য, কষ্টের সময় ধৈর্য ধারণ করা।#176A