‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
সোমবার

১ এপ্রিল ২০২৪

১:৫৩:৩২ PM
1448186

ইসরাইলের প্রতি মার্কিন মারণাস্ত্র-সহায়তার মূল লক্ষ্য

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যেই নতুন করে কয়েকশ কোটি ডলার মূল্যের বোমা এবং যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার অনুমোদন দিয়েছে যা গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা অভিযানকে জোরদার করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন সরকার যদিও দাবি করছে যে তারা গাজায় যুদ্ধ-বিরতি প্রতিষ্ঠা ও বন্দি-বিনিময়ের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এর পাশাপাশি ইসরাইলকে সামরিক, গোয়েন্দা, আর্থিক ও রাজনৈতিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে মার্কিন সরকারও গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত শুদ্ধি অভিযানসহ সব ধরনের অপরাধের প্রধান শরিক। 

মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট পেন্টাগন এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে নতুন অস্ত্র প্যাকেজের মধ্যে বৃহৎ আকারের এমকে-৮৪ মডেলের ১৮০০টিরও বেশি বোমা রয়েছে। এগুলো হল দুই হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা যা পুরো শহরের ব্লকগুলো ভেঙে ফেলতে পারে এবং এসব বোমা ভূমিকে ৪০ ফুট পর্যন্ত দাবিয়ে দিতে বা গর্ত করতে পারে। ইসরাইল গত কয়েক মাসে গাজায় এই মডেলের ও এমকে-৮২ মডেলের ধ্বংসাত্মক বোমা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে, ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে গাজাবাসীর। এসব বোমা ছাড়াও  গাজার ওপর বোমা ফেলতে মার্কিন সরকার ইসরাইলকে দেবে ২৫টি A-35এফ মডেলের জঙ্গি-বিমান।

মার্কিন ও ইসরাইলি সূত্রগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী গাজায় ইসরাইলের চলমান আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন সরকার ইসরাইলকে ২৩০টি কার্গো-বিমান ও ত্রিশটি জাহাজ  বোঝাই করে ইসরাইলে অস্ত্র পাঠিয়েছে।

মার্কিন এমন সময় ইসরাইলে এসব মারণাস্ত্র পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে যখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সম্প্রতি গাজায় হামলা বন্ধ করার ও সেখানে মানবিক ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এ ছাড়াও খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা অঞ্চলে ইসরাইলে মারণাস্ত্র পাঠানোর উদ্যোগের বিরুদ্ধে গণ-বিক্ষোভ হয়েছে। তারা এ পদক্ষেপকে ইসরাইলি গণহত্যায় প্রকাশ্যে মার্কিন অংশগ্রহণ বলে প্রতিবাদও নিন্দা জানিয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে আমেরিকার ভার্মন্ট রাজ্যের নির্দলীয় সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বাইডেন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম এক্স-এ তাঁর নিজস্ব অ্যাকাউন্টে লিখেছেন:

আমেরিকা নেতানিয়াহুকে বেসামরিক লোকদের ওপর বোমা হামলা বন্ধ করার অনুরোধ জানাতে পারে না। কেননা পরের দিনই ইসরাইলে ২ হাজার পাউন্ড ওজনের হাজার হাজার বোমা পাঠায় আমেরিকা। ওইসব বোমা দিয়ে গাজা শহরের আশেপাশের পুরো এলাকাকেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া সম্ভব। এটা সভ্যতা বিবর্জিত নোংরা কাজ।

স্যান্ডার্স আরও বলেন: আমাদের অবশ্যই ইসরাইলের হাতে হাত মেলানো বন্ধ করতে হবে: ইসরাইলে আর কোনো বোমা দেওয়া যাবে না।

ইহুদিবাদী ইসরাইল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিমা সরকারগুলোর সর্বাত্মক সমর্থন ও সহায়তা নিয়ে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের মজলুম ও প্রতিরক্ষাহীন ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নতুন করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। গাজায় ইসরাইল যত বোমা বর্ষণ করেছে তা জাপানের হিরোশিমা শহরে ফেলা মার্কিন পরমাণু বোমার বিস্ফোরকের ওজনের চেয়েও দ্বিগুণ ভারী। ফলে গাজার অবকাঠামোর প্রায় ৭০ শতাংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।  সর্বশেষ খবর অনুযায়ী গাজায় ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় তেত্রিশ হাজার ফিলিস্তিনি শহীদ ও ৭৫ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই হল নারী ও শিশু। এ ছাড়াও নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ফিলিস্তিনি। তাদের সবাই যদি শহীদ হয়ে থাকেন তাহলে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩৯ হাজারে। 

ইসরাইলে নতুন করে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র পাঠানোর মার্কিন পদক্ষেপ এমন সময় নেয়া হল যখন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত শুক্রবার গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে সতর্ক করে সেখানে হামলা বন্ধ করতে ইসরাইল ও তার সহযোগীদের আহ্বান জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা বিতরণে সুনিশ্চিত করতে বলেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও গত সপ্তায় একই ধরনের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস করেছিল। 

আসলে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থসহ সর্বাত্মক পশ্চিমা-মদদপুষ্ট ইহুদিবাদী ইসরাইল পুরো গাজাকেই ফিলিস্তিনি-শূন্য করে সেখানে স্থায়ী দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন। ইসরাইল প্রথমে ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে উত্তর-গাজাকে অচল করে সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ গাজায় চলে যেতে বাধ্য করার এবং এরপর দক্ষিণ গাজা ও রাফাহ শহরে গণহত্যা চালিয়ে গাজাবাসীকে মিশরের দিকে বা সাগর-পথে দেশত্যাগে বাধ্য করার ষড়যন্ত্র করছে বলে তারা মনে করেন। #