‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শনিবার

১৩ এপ্রিল ২০২৪

৯:২৩:৫৫ PM
1451067

আজকের ইসরাইলি সৈন্যদের পিতারা কি এভাবেই 'দেইর আল-ইয়াসিন' গ্রামের বাসিন্দাদের হত্যা করেছিল?

অবৈধভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এমন কোনো অপরাধযজ্ঞ নেই যা তারা করেনি। ইসরাইল পশ্চিমা নেতাদের সমর্থনে এবং পাশ্চাত্যের মিডিয়ার নীরবতার সুযোগে দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জঘন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। 'দেইর আল-ইয়াসিন' হত্যাকাণ্ড এই ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডিগুলোর মধ্যে একটি।

১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল দখলীকৃত বায়তুল মোকাদ্দাসের পশ্চিম অংশের দেইর আল-ইয়াসিন এলাকায় ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল দখলদার ইহুদিবাদী সেনারা। ওই পাশবিক হত্যাযজ্ঞে ৩৬০ নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী 'মেনাচেম বেগিন'-এর নেতৃত্বে 'আরগুন' এবং বেগিনের উত্তরসূরি 'ইসহাক শামির' এর নেতৃত্বে 'স্টিরেন লেহি' নামে ইহুদিবাদীদের দুটি কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা ওই হত্যাকাণ্ড  চালিয়েছিল।

'দেইর আল-ইয়াসিন' গ্রামটি ১৫১৭ সালে ওসমানিয় শাসনের সময়কালের এবং ১৯৪৫ সালে এই গ্রামের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৬১০। ১৯৪২ সালে গ্রামবাসীরা অভিবাসী ইহুদিদের সাথে একটি অনাগ্রাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এছাড়াও, জাতিসংঘের নির্দেশনা অনুযায়ী এই গ্রামটিকে ইসরাইলি শাসনের বাইরে রাখা হয়েছিল।

'দেইর আল-ইয়াসিন' গ্রামে ইসরাইলের ওই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছিল, ভোর তিনটার দিকে ইসরাইলের আক্রমণ শুরু হয়। এরপর গ্রামের বাসিন্দারা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলায় ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীরা হাগানাহ কমান্ডের কাছে সাহায্য চায়। এরপর তারা আবারও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গ্রামে হামলা চালায় এবং নারী-পুরুষ ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করে। ইহুদিবাদীরা বোমা ও ডিনামাইট দিয়ে একের পর এক গ্রামবাসীর বাড়িঘর উড়িয়ে দেয় এবং এভাবে ওই এলাকা দখল করে নেয়। হামলাকারীরা 'দেইর আল-ইয়াসিন' গ্রামের কয়েক ডজন বাসিন্দাকে দেয়ালের পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে গুলি করে হত্যা করে। এই মাত্রার অপরাধ করেও তারা থেমে থাকেনি এবং গ্রামের কয়েকজনকে চলন্ত গাড়ির পেছনে বেঁধে বায়তুল মোকাদ্দাসের রাস্তায় ও এর আশেপাশে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং বর্ণবাদী স্লোগান দেয়।

কুখ্যাত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হাগানার কমান্ডার মীর পায়েলের দেয়া তথ্য অনুসারে, 'ইহুদিবাদী লাহি ও ইরগুনের লোকেরা গ্রামবাসীদের টাকা, সোনা, চিনি, রেডিও ইত্যাদি যা পেয়েছে তাই লুট করেছে। তারা ফিলিস্তিনি নারী ও মেয়েদের ধর্ষণ, গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিরে ফেলা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা, চোখ উপড়ে ফেলা এবং মৃতদেহ বিকৃত করার মতো বেশ কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব কিছুর পেছনে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে নিজ জায়গা জমি  ছেড়ে তাদেরকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করা'।

চার মেয়াদে ইসরাইলি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ইয়ারি তাজাবান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, 'দেইর আল-ইয়াসিন' গ্রামে গণহত্যার পর তাকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একদল তরুণ ব্রিগেডসহ ওই গ্রামে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি কোনো সশস্ত্র লোকের লাশ দেখতে পাননি। এভাবে ওই গ্রামের মানুষ এবং ইসরাইলি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে বলে যে কথা প্রচার করা হয়েছিল তা আসলে মিথ্যা প্রমাণিত হয় যদিও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে বলে ইসরাইল বহু বছর ধরে প্রচার চালিয়ে আসছে। অবশেষে, ইহুদিবাদীরা তাদের অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার জন্য গ্রামের নিহত ও বিকৃত লাশগুলোকে গ্রামের পানির কূপে ফেলে দেয় এবং কূপের মুখ বন্ধ করে দেয়।

'দেইর আল-ইয়াসিন' গ্রামে ইহুদিবাদীদের বর্বরতার খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার পর, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি ওই গ্রামের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য একজন প্রতিনিধি পাঠায়। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে হাঁটার সময় রেড ক্রসের প্রতিনিধি আরবদের মৃতদেহ এবং বিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলো দেখতে পান এবং কূপের মধ্যে ফেলে দেয়া মৃতদেহগুলোকে  দেখতে পান। তার নির্দেশে পরবর্তিতে সমস্ত মৃতদেহ যা অত্যন্ত জঘন্যভাবে বিকৃত করা হয়েছিল সেগুলোকে কূপ থেকে বের করে আনা হয়।


342/