‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
বৃহস্পতিবার

২৫ এপ্রিল ২০২৪

৫:৫৭:২৫ AM
1453931

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের সাথে আয়াতুল্লাহ্ রামাজানীর সাক্ষাত;

যৌক্তিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও ন্যায়পরায়ণতা; শিয়া চিন্তাধারার তিন মূল উপাদান: আয়াতুল্লাহ রামাজানী

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার মহাসচিব তার ভেনেজুয়েলা সফরে দেশটির প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাত ও মতবিনিময় করেছেন।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা):  আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার (মাজমা) মহাসচিব আয়াতুল্লাহ রেজা রামাজানী তার ভেনেজুয়েলা সফরে দেশটির প্রসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো’র সাথে সাক্ষাত ও মতবিনিময় করেছেন।

সাক্ষাতে নিকোলাস মাদুরো আয়াতুল্লাহ রামজানীর ভেনেজুয়েলা সফরে আনন্দ প্রকাশ করে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, গভীর ও প্রাচীন বলে আখ্যায়িত করেন; তিনি বলেন: হুগো চাভেজ ২১ বিংশ শতাব্দিকে আমাদের শতাব্দি বলে আখ্যায়িত করেছেন; আমরা একবিংশ শতাব্দির অংশ, একবিংশ শতাব্দি আমাদেরই, কেউ আমাদের স্বাধীনতা ও শান্তিতে বসবাসের অধিকার এবং আমাদের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। ইরানের ও ভেনেজুয়েলার সম্পর্ক রাজনৈতিক ও ক্ষণিকের জন্য নয় বরং এ সম্পর্ক বাস্তবসম্মত ও কৌশলগত। 

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁকে বিচক্ষণ এবং বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে সূক্ষ্ম ও গভীর একজন বিশ্লেষক হিসেবে  আখ্যায়িত করে তিনি বলেন: আমরা সর্বদা ইরানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশনাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার মহাসচিবকে অনুরোধ করবো যেন তিনি আমার সালাম আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীকে পৌঁছে দেন।




জায়নবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রকে শাসন করছে

আজ, জায়নবাদীরা আমেরিকাকে শাসন করছে। এবং সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা তাদেরই হাতে। আমেরিকার রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রাট দু’টি দলই জায়নবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সামরিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মত দু’টি প্রধান শক্তি আজ তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। জায়নবাদীরা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বিশ্ব শান্তিকে বিপন্ন করে তুলেছে এবং তারাই ফেসবুক ও এক্স-এর মত অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় জনমনকে নিজেদের স্বার্থের পক্ষে প্রভাবিত করছে।

অবশ্য আজ আমরা একটি বহুমুখী বিশ্বে প্রবেশ করেছি যেখানে চীন, রাশিয়া ও ইরানের মতো বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ ঘটেছে। সামরিক খাতে ইরানের অগ্রগতি প্রসংশনীয়; ইরানের উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও গুরুত্ব দেওয়া। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভেনেজুয়েলায় আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছি। ভেনেজুয়েলা ও ইরানের মধ্যে বৈজ্ঞানিক বিনিময় শুরু করেছি, এ খাত আরও প্রসারিত হবে বলে আমরা আশাবাদি।

 

ইরান ও ভেনেজুয়েলার সম্পর্ক গভীর ও কৌশলগত

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার মহাসচিব আয়াতুল্লাহ রামাজানী ইরান ও ভেনেজুয়েলার সম্পর্ককে গভীর ও কৌশলগত আখ্যায়িত করে বলেন: জুলুম করা ও জুলুম সওয়া দু’টোই আমাদের ধর্মে নিন্দিত। এর বিপরীতে মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন: ইমাম খোমেনী (রহ.) ইরান জাতি ও বিশ্বের জনগণকে এক মহান শিক্ষা দিয়ে গেছেন; তা হলো, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সভ্যতার পথে অগ্রসর হওয়া। ইমাম খোমেনী (রহ.) চার নীতিতে বিশ্বাস করতেন; আল্লাহর প্রতি ঈমান, উদ্দেশ্যের প্রতি বিশ্বাস, পথ ও পন্থার প্রতি বিশ্বাস এবং মানুষের প্রতি বিশ্বাস। এই চার নীতি ও বিশ্বাসের স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে ইমাম খোমেনী বিপ্লব ঘটিয়ে ইরান ও বিশ্বে পরিবর্তন এনেছেন এবং বিদ্যমান বৈশ্বিক সমীকরণগুলোকে ব্যাহত করেছেন।

তার সংযোজন: পৃথিবীতে চলমান নিয়মের পরিবর্তন হওয়া উচিত; যাতে পৃথিবীর সম্পদ সকল মানুষের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বন্টন হয়। এটা ঠিক নয় যে, পৃথিবীর ১০ ভাগ  মানুষ পৃথিবীর ৯০ ভাগ সম্পদ থেকে উপকৃত হবে এবং ৯০ ভাগ মানুষ ১০ ভাগ সম্পদ থেকে।

আধুনিক দাসত্বের প্রচলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের কিছু কিছু সরকারের দ্বারা জনগণ নিপীড়নের শিকার; যাকে আধুনিক দাসত্ব বলা যেতে পারে, এটাকে নির্মূল করতে হবে। অতীতে ১০০ বা ১০০০ জনকে ক্রীতদাস বানানো হত, কিন্তু আজ তারা গোটা জাতিকে ক্রীতদাস বানাচ্ছে, তাই প্রকৃত অর্থে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।

 



ইরান বৈশ্বিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে

আয়াতুল্লাহ রামাজানী বলেন: শিয়া চিন্তাধারায় ‘ন্যায়বিচার’ একটি কেন্দ্রীয় স্থানের অধিকারী; আর ন্যায়বিচারের প্রতীক হল ইমাম আলী (আ.)। জর্জ জোরদাকের মতো (খ্রিষ্টান) চিন্তাবিদরা এই বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন। যৌক্তিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও ন্যায়বিচার হল শিয়া চিন্তাধারার তিন প্রধান উপাদান; যা আহলে বাইত (আ.) এর শিক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

তিনি বলেন: জাতিসমূহের ক্ষমতায়নের জন্য হজরত মসীহ (আ.) আগমন ঘটবে। আমরা শিয়ারাও বিশ্বাস করি যে, ইমাম মাহদীও (আ.) জাতিসমূহের ক্ষমতায়নের জন্যই আসবেন। তখন শাসনভার নেককারদের নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং নিপীড়িত জনতা বিশ্বের শাসনভার গ্রহণ করবে, এ সময় অত্যাচারী ও অহংকারীরা নির্মূল হবে।

তার সংযোজন: ইরান একটি আঞ্চলিক শক্তি থেকে বৈশ্বিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু বৈজ্ঞানিক খাতে ইরান বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে এবং এছাড়া মূল র‌্যাঙ্কিংয়ে ইরানের অবস্থান ১৬তম। এ সকল ক্ষেত্রে ইরান তার অভিজ্ঞতা ও বৈজ্ঞানিক অর্জন অন্যান্য দেশকে প্রদান করতে প্রস্তুত। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এই বছরগুলিতে আমরা ইরানে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা ভেনিজুয়েলাকে দিতে আমরা প্রস্তুত।

 

সরকারি উপলক্ষ ও অনুষ্ঠানগুলোতে আহলে বাইতের মাযহাবের অনুসারীদেরকে আমন্ত্রণের আহবান

আয়াতুল্লাহ রামাজানী’র সাক্ষাতের শেষাংশে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের প্রতি আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখার আহবান জানিয়ে তাদের প্রতিনিধিদেরকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের আহবান জানান।

আয়াতুল্লাহ রামাজানীর এ আহবানকে স্বাগত জানিয়ে মাদুরো বলেন: আহলে বাইত (আ.) এর মাযহাবের প্রতিনিধিবৃন্দকে আমরা সবসময় আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকি।

এ মতবিনিময় সভায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ‘আব্দুল হুসাইন কালান্তার, ভেনেজুয়েলায় নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত ‘হুজ্জাতুল্লাহ সুলতানী’, ভেনেজুয়েলার পরিবহন মন্ত্রী ও ইরানের সাথে সহযোগিতা বিষয়ক কমিশনের প্রধান ‘রামুন ব্লাসকেয’, ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘ইভান খীল পিন্টো’, ভেনেজুয়েলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ‘ফ্রেডি আলফারেদ নাযারেস’ উপস্থিত ছিলেন।#176