৫ অক্টোবর ২০২৪ - ২০:০১
কিভাবে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে ইরানি অভিযানের শরিক হওয়া যায়? দার্শনিকদের উত্তর

নিৎসের মত দার্শনিকরা এক ধরনের 'ইচ্ছার শক্তির' ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন; আর ডিজিটাল যুগে 'বাস্তবতার প্রতি আকর্ষণ বা ইচ্ছাকে' এর তথা ইচ্ছার শক্তির অংশ বলা যায়।

'অপারেশন ট্রু প্রমিজ-২' বা 'সত্য প্রতিশ্রুতি-দুই' শীর্ষক ইরানের সামরিক অভিযান ইহুদিবাদী ইসরাইলের সন্ত্রাসবাদ, সামরিকায়ন ও দখলদারিত্বের মোকাবেলায় এক সুস্পষ্ট প্রতিক্রিয়ার প্রতীক।  তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা ও লেবাননে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে সন্ত্রাসী হামলায় আহত করাসহ ইরানের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা লঙ্ঘনের জবাবে এবং লেবাননের বেসামরিক জনগণের ওপর ব্যাপক সন্ত্রাসী গণহত্যা ও  সেখানে হিজবুল্লাহর প্রধান ও ইরানের শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিলফুরুশানকে হত্যাসহ প্রতিরোধ ফ্রন্টের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নানা অপরাধের  জবাবে এই অভিযান চালিয়েছে তেহরান। এই অভিযান আঘাতের জবাবে পাল্টা আঘাতের নীতির দৃষ্টান্ত। 

ইন্টারনেট-ভিত্তিক মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে ব্যাপক তথ্য ও মত-বিনিময় জনমতকে সত্যের দিক-নির্দেশনা  দেয়া ও আধিপত্যবাদ আর উপনিবেশবাদী নিপীড়ন-বিরোধী চেতনা জোরদারের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ বা অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই যারা এই ময়দানে তথা ইন্টারনেটের জগতে সক্রিয় তারা ইরানের এই সংগ্রামী ও ন্যায়কামী অভিযানের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এ সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ বা প্রচার-পদ্ধতি এখানে তুলে ধরা হল: 

১. প্রতিরোধের মাধ্যম হিসেবে সত্য ও বাস্তবতা তুলে ধরা 

প্লেটো তার 'রিপাবলিক' বা 'জনসাধারণতন্ত্র' নামক বইয়ে ন্যায়বিচারকে সব সময়ই সত্য ও বাস্তবতার সেবক বলে উল্লেখ করেছেন। 'সত্য প্রতিশ্রুতি'-দুই শীর্ষক ইরানের ইসরাইল-বিরোধী সামরিক অভিযান সম্পর্কে যথাযথ ও সঠিক খবরগুলো তুলে ধরতে পারেন সত্যের অনুসন্ধান হিসেবে। ইহুদিবাদী ও পশ্চিমা প্রচারণা ও তথ্য-বিকৃতিসহ নানা ধরনের আরোপিত সীমাবদ্ধতা বা সেন্সরশিপের মোকাবেলায় তারা এইসব সত্য ও বাস্তবতা তুলে ধরতে পারেন প্রতিরোধ সংগ্রামের অংশ হিসেবেই। এ ধরনের সংগ্রামের কথা বলেছেন হানা আর্নেটের মত দার্শনিকরা। জুলুম ও অসচেতনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইন্টারনেট মাধ্যমে বাস্তবতা তুলে ধরা রণাঙ্গনের অন্যতম প্রধান ফ্রন্ট।

২. শিল্পকলার মাধ্যমে প্রতিরোধ সংগ্রাম

 দার্শনিক হেগেলের মতে শিল্প হচ্ছে চিন্তাধারার সহযোগী। ইন্টারনেট ও সোশাল মিডিয়ার ইউজাররা প্রতিরোধ সংগ্রাম সম্পর্কে নানা গ্রাফিক্স বা ছবি ও ভিডিও তুলে ধরে প্রতিরোধের চেতনাকে জীবন্ত ও অনুভবের পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারেন। এইসব শিল্পকর্ম হয়ে উঠতে পারে সামষ্টিক চেতনা জাগ্রতকারী ও শানিত করতে পারে ন্যায়বিচার ও প্রতিরোধের প্রবল ইচ্ছাশক্তি যা সমাজে আনতে পারে গভীর পরিবর্তন।  
৩. বিশ্লেষণ ও সংলাপ বা আলোচনা সত্য ও বাস্তবতা উপলব্ধির মাধ্যম

সক্রেটিস  সংলাপের মাধ্যমে নানা চিন্তাধারার মোকাবেলা করতেন ও সত্যকে তুলে ধরতেন। একই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন ভার্চুয়াল মিডিয়া বা ইন্টারনেট-এর গ্রাহকরা। তথ্য-বিকৃতি রোধের এই পদ্ধতি 'সত্য প্রতিশ্রুতি'-দুই শীর্ষক ইরানের ইসরাইল-বিরোধী সামরিক অভিযান সম্পর্কেও প্রযোজ্য। এ ধরনের পদক্ষেপ সামষ্টিক প্রজ্ঞা গড়ে তোলারও সহায়ক। 

৪. শত্রুর মিথ্যাচার মোকাবেলায় ভার্চুয়াল মিডিয়ায় সত্য ও মিথ্যার লড়াই 

নিৎসের মত দার্শনিকরা এক ধরনের 'ইচ্ছার শক্তির' ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন; আর ডিজিটাল যুগে 'বাস্তবতার প্রতি আকর্ষণ বা ইচ্ছাকে' এর তথা ইচ্ছার শক্তির অংশ বলা যায়।  বিভিন্ন মিডিয়ার মিথ্যাচারের মোকাবেলা করা হচ্ছে তথ্য ও চিন্তাধারার লড়াই। নানা ধরনের প্রামাণ্য রিপোর্ট ও চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে সত্যকে বিজয়ী করা সম্ভব। মিথ্যাচার তথা প্রোপাগান্ডা যদি জবাবহীন থাকে তাহলে জনমত ধীরে ধীরে মিথ্যাচার ও গুজবকেই গ্রহণ করে ও ইতিহাসের ভুল দিকের পক্ষ নেয়। ইরানের ইসরাইল বিরোধী অভিযানগুলোর ব্যাপারেও এ সত্য প্রযোজ্য। 

৫. ডিজিটাল সহমর্মিতা ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে অভিন্ন মূল্যবোধ প্রচারের গুরুত্ব

ইমানুয়েল লেভিনাস-এর মতে অন্যদের ব্যাপারে সহমর্মিতা ও দায়িত্বশীলতা অন্যতম প্রধান নৈতিক মূল্যবোধগুলোর অংশ। তাই প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি ইন্টারনেট মিডিয়ার গ্রাহক বা ইউজারদের সমর্থন ও সংহতি ঘোষণা জুলুম ও বৈষম্য বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামকে জোরদার করতে সক্ষম। প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতৃবৃন্দের বাণী তুলে ধরার মাধ্যমেও এ কাজ করা যেতে পারে যা হয়ে উঠতে পারে জুলুম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর। 

৬. কার্যক্ষেত্রে সংহতি প্রকাশের আহ্বান ও সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহ দেয়া

 বাস্তববাদীরা বলেন সত্য কার্যক্ষেত্রে স্পষ্ট হয়। ইন্টারনেট মিডিয়াগুলোর গ্রাহকরা সত্যের পথে লড়াইরত সেনাদের প্রতি ও শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি সমর্থনের বার্তা পাঠিয়ে এবং এ ধরনের কাজে অন্যদেরও অংশ নিতে উৎসাহ যুগিয়ে কার্যক্ষেত্রের নৈতিক বাস্তবমুখিতা প্রদর্শন করতে পারেন। এসব কাজ রাজনৈতিক-সামাজিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। 

৭. জুলুমের মোকাবেলায় প্রতিরোধের সাহিত্য, বাণী, ও চিন্তাধারার প্রচার ও সম্মিলিত নৈতিকতার পুনর্গঠন

ইন্টারনেট মিডিয়ার গ্রাহকরা নানা উদ্ধৃতি, প্রবন্ধ, বিশ্লেষণ ও মতামত তুলে ধরে এ সংক্রান্ত সাহিত্য ও চিন্তাধারা প্রচারের মধ্য দিয়ে সম্মিলিত নৈতিকতার পুনর্গঠনে সহায়তা করতে পারেন। বর্তমান বিশ্বে যখন বস্তুগত স্বার্থকে ন্যায়বিচারের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয় তখন প্রতিরোধ সংক্রান্ত কথাবার্তা ও চিন্তাধারা জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে উৎসাহ যোগাবে এবং এতে বৈশ্বিক মুক্তি সংগ্রাম জোরদার হবে।