‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শুক্রবার

৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৩:০৬:৪১ PM
853087

মিয়ানমারে মুসলিম হত্যার নিন্দায় মাজমার বিবৃতি

বিবৃতিতে, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিম হত্যার নিন্দা জানিয়ে এ সমস্যা নিরসনে আন্তর্জাতিক সমাজের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : মিয়ানমারে নতুনভাবে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যা শুরুর ঘটনায় আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা বিবৃতি প্রদান করে এ বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি এ বিপর্যয় নিরসনে দ্রুত আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বহুবছর ধরে ‘মিয়ানমারের অধিবাসী না হওয়া’র অজুহাতে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানরা। এ নির্যাতন উগ্র বৌদ্ধদের প্ররোচনা ও সরকারের সহযোগিতায় সেনবাহিনী কর্তৃক অব্যাহত রয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঘর-বাড়ি, মসজিদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চরম বর্বরতার সাথে তাদেরকে তাদের বসত-ভিটা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা সরকার ও সাম্রাজ্যবাদের সাথে সম্পৃক্ত আন্তজার্তিক সংস্থাগুলোর রহস্যজনক নিরবতায় মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নৃশংস নির্যাতনের নতুন পর্ব শুরু হয়েছে।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ বর্বরতা অব্যাহত থাকার বিষয়ে তাকফিরি ওয়াহাবিদের ভূমিকার কথার প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে; এ সহিংসতায় উগ্র বৌদ্ধদের ভূমিকার পাশাপাশি তাকফিরি ও ওয়াহাবিদের ভূমিকার কথাও ভুলে গেলে চলবে না। উপসাগরীয় দেশসমূহের পেট্রোডলারের সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ভীতি প্রসারে ব্যস্ত এ দলটি মুসলমান, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধসহ কোন ধর্মের অনুসারীদের প্রতি দয়ার্দ্রতা দেখায় না।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিগত ৫ বছরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বৌদ্ধদের বর্বরতার শিকার হয়ে বাড়ি ছাড়তে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে অথবা সরাসরি বৌদ্ধদের হামলায় নিহত হয়েছে। ভিটে-মাটি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতিমধ্যে ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তবে গত ১ সপ্তাহের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে ৪০০ মানুষ।
বিবৃতিতে, নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে:
১. ধর্মের সংক্ষিপ্তরূপ হচ্ছে ‘একত্ববাদ’, ‘নৈতিকতা’, ‘সহমর্মিতা’ ও ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’। অতএব, যে দল বা সরকারই মানুষ হত্যার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয় –তাই সে যে ধর্মের অনুসারী হওয়ার দাবীই করুক না কেন- সে মিথ্যাবাদী।
২. একটি ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের সাধারণ নাগরিক অধিকার, প্রতিটি দেশের জনগণের প্রাথমিক অধিকার হিসেবে পরিগণিত, যা আন্তর্জাতিক আইনসিদ্ধ।
৩. একটি দেশের সরকার সেদেশের জনগণের একটি অংশকে নাগরিক হিসেবে অস্বীকৃতি জানালেও তাদেরকে হত্যা করার অধিকার রাখে না; বা তাদেরকে পুড়িয়ে দেয়া বা বের করে দেয়ার অধিকারও তাদের নেই।
৪. বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশই যুদ্ধ কবলিত দেশগুলোর শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, মিয়ানমার সরকার নিজেদের দেশের জনগণের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বাসিন্দা না হওয়ার অভিযোগ তুলে চরম অমানবিকভাবে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান ও হত্যা করছে। অথচ বহু বছর ধরে এ ভূখণ্ডেই তাদের বাস।
৫. এ নৃশংসতায় উগ্র বৌদ্ধদের ভূমিকার পাশাপাশি তাকফিরি ও ওয়াহাবিদের ভূমিকার কথাও ভুলে গেলে চলবে না। উপসাগরীয় দেশসমূহের পেট্রোডলারের সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ভীতি প্রসারে ব্যস্ত এ দলটি মুসলমান, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধসহ কোন ধর্মের অনুসারীদের প্রতি দয়ার্দ্রতা দেখায় না।
৬. মুসলমানদের পক্ষ থেকে সামান্যতম সহিংসতার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে মার্কিন সরকার ও বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলো যে চিৎকার-চেচামেচি শুরু করে তাতে বিশ্বের মানুষের কান তালা লাগার উপক্রম হয়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারে যে প্রজন্ম হত্যা অব্যাহত রয়েছে সে বিষয়ে তারা নিরবতা পালন করেছেন। এক্ষেত্রে তারা অনর্থক কিছু মন্তব্য ও দুমুখো নীতি অবলম্বনের পন্থা বেছে নিয়েছেন।
৭. মিয়ানমার সরকার ও মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে এ প্রজন্ম হত্যা রোধে ভূমিকা রাখার জন্য আমরা ইসলামি সমন্বয় সংস্থা ও মুসলিম সরকারগুলোর প্রতি আমরা আহবান জানাচ্ছি। যেমনভাবে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী নিজের হজ্জবাণীতে উল্লেখ করেছেন: মিয়ানমারের নির্যাতিত মুসলমানদের ন্যায় নির্যাতনের শিকার প্রতিটি সংখ্যালঘু মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো ইসলামি সরকার প্রধানগণ এবং মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের কর্তব্য।
৮. এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পরিণতির বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক করার পাশাপাশি উভয় পক্ষকে নৈতিক মানদণ্ড ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সংলাপের মাধ্যমে এ বিপর্যয় নিরসনের আহবান জানাচ্ছি।
৯. এছাড়া বিভিন্নভাবে এ হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের ঘোষণা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানোর জন্য বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষ এবং বিশ্বের সকল মুসলমানদের প্রতি আমরা আহবান জানাই। হয়তবা এখনো এমন জাগ্রত বিবেক রয়েছে যারা ধর্মের নামে এ জুলুম প্রতিরোধ করার বিষয়ে সোচ্চার হবেন।
الَّذينَ أُخرِجوا مِن دِيارِهِم بِغَيرِ حَقٍّ إِلّا أَن يَقولوا رَبُّنَا الله وَلَولا دَفعُ الله النّاسَ بَعضَهُم بِبَعضٍ لَهُدِّمَت صَوامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَواتٌ وَمَساجِدُ يُذكَرُ فيهَا اسمُ اللَّهِ كَثيرًا وَلَيَنصُرَنَّ الله مَن يَنصُرُهُ إِنَّ الله لَقَوِيٌّ عَزيز.
“তাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি হতে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এ কারণে যে, তারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্’। আল্লাহ্ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনাস্থল, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ-যাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহর নাম। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই শক্তিমান, পরাক্রমশালী।” (সূরা হাজ্জ : ৪০)