পার্সটুডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আব্দুলহামিদ আতওয়ান নামক প্রখ্যাত এই কলাম লেখক আরবি দৈনিক রাই আল-ইয়াওম পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে লিখেছেন: মার্কিন ও ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো পড়লে আপনার কাছে মনে হবে, লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার মন্ত্রিসভার বৈঠকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছেন। এখন এ সংক্রান্ত চুক্তি সই করতে যেকোনো সময় লেবাননে নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন প্রতিনিধি আমোস হকস্টাইন বৈরুতের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ত্যাগ করতে পারেন।
এই আরব রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরো বলেন: হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা রোববার (২৪ নভেম্বর) ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব, হাইফা ও সাফেদ শহরের সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে অন্তত ২৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী ড্রোন নিক্ষেপ করে। ভয়াবহ ওই হামলা থেকে বাঁচতে প্রায় ৪০ লাখ ইহুদিবাদী ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ছুটে যায়। তেল আবিবের বেন গুরিয়েন বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয় এবং ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরে যায়।
আতওয়ান আরো বলেন, হিজবুল্লাহর হামলায় যখন ইসরাইলি নাগরিকরা দিশেহারা এবং তাদেরকে প্রবোধ দেয়ার মতো কোনো বাণী-বক্তব্য নেতানিয়াহুর ঝুলিতে নেই তখন এসব মানুষকে শান্ত রাখার কৌশল হিসেবে ব্যাপকভাবে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির খবর প্রচার করা হচ্ছে।
এই আরব বিশ্লেষক আরো বলেন, যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে এ ধরনের ইতিবাচক খবর প্রচারের আরেকটি কারণ উত্তর ইসরাইলে বসবাসরত ইহুদিবাদীদের এই বলে আশ্বস্ত করা যে, তাদেরকে এখন যেমন প্রতিদিন বারবার হিজবুল্লাহর হামলার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যেতে হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি হয়ে গেলে সে পরিস্থিতি আর থাকবে না বরং তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। তার মতে, লেবাননে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে একইসঙ্গে গাজায়ও যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে; তা না হলে ইসরাইলের অর্থনীতি অপমৃত্যু ঘটবে।
রোববারের হামলায় ইসরাইলের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবন্দর অ্যাশদোদে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এছাড়া, ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হিজবুল্লাহর হামলায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইহুদিবাদীরা হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য আরো যেসব কারণে তাড়াহুড়ো করছে তা হলো, হিজবুল্লাহ যে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত অ্যাশদোদ শহরে হামলা চালিয়েছে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরাইলের পারমাণবিক স্থাপনা দিমুনায় হামলা চালানো সম্ভব।
এই আরব বিশ্লেষক বলেন: লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ এমন সময় ইসরাইল জুড়ে এমন ভয়াবহ হামলা চালায় যখন নেতানিয়াহু মিথ্যা দাবি করে বলেছিল, ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর ৮০% সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এই সংগঠন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।
আতওয়ানের মতে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে নেতানিয়াহুর সম্মতি এবং এ সংক্রান্ত খবর ফলাও করে প্রচারের ফলে বোঝা যায়, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে নিজের পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে তেল আবিব। বিশেষ করে, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালিয়ে ইসরাইল তার কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করা, অথবা অন্তত দক্ষিণ লেবানন থেকে এই সংগঠনকে উত্তর দিকে হটিয়ে দেয়া ছিল ইসরাইলের স্থল অভিযানের ঘোষিত লক্ষ্য। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই অর্জিত হয়নি।
লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ইসরাইলের ২৪ নম্বর টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক জাভি ইয়াজাকেলি বলেছেন: যুদ্ধবিরতি মানে আমরা নতি স্বীকার করেছি।
ইসরাইলের কান নিউজ চ্যানেল জানিয়েছে, ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার রাতে যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন তা বুধবার সকাল থেকে কার্যকর হবে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলি বাহিনী গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ লেবাননে ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু করে যা এখনও চলছে। এর জবাবে ইসরাইলের বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করে সমান তালে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ। #