আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): পার্স টুডে প্রতিবেদন অনুসারে: ফিলিস্তিনের গাজার সরকারি সূত্র ও নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে, গাজায় সীমিত পরিমাণে সাহায্য পৌঁছানোর দাবি ইসরায়েলের প্রচারণাগত প্রতারণা মাত্র।
তারা জোর দিয়ে বলেছে যে গাজায় ৪০,০০০ শিশু অপুষ্টিতে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং অনাহারে আরও ১৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর নতুন খবর পাওয়া গেছে।
গাজায় দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধার সংকট যখন তীব্রতম এবং ক্ষুধার কারণে বেসামরিক নাগরিকদের, বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যু সাধারণ ঘটনা তখন ইহুদিবাদীরা এই অপরাধ ঢাকতে ও গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দেয়া সম্পর্কে প্রতারণামূলক দৃশ্যপট তুলে ধরে বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বারশ বলেছেন, স্থলপথে বা বিমানপথে সাহায্য পৌঁছানোর প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো মিডিয়ার বা গণমাধ্যমের প্রচারণা। আর এ ধরনের কিছু সাহায্য এমনকি যদি পৌঁছেও দেয়া হয়, তবুও সেসব গাজার ক্ষুধা সংকট সমাধানে সাহায্য করবে না। কাজ চলছে
গাজায় ডাক্তাররাও ক্ষুধার্ত!
তাসনিম নিউজ এজেন্সির উদ্ধৃতি অনুসারে, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক "মুনির আল-বারশ" বলেছেন:গাজার ডাক্তাররাও খাবার খুঁজে পাচ্ছেন না এবং গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সরকারের ক্ষুধা যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ব্যাপক দুর্ভিক্ষের মধ্যে তাদের শরীর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে।
আল-বারাশ আরও বলেন: "অপারেশনের সময় সার্জনরা তাদের মনোযোগ হারাচ্ছেন এবং ক্ষুধার কারণে চিকিৎসা কর্মীদের স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে যাচ্ছে। এখানকার মানবিক পরিস্থিতি বর্ণনাতীত, সর্বত্র দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে, শিশুরা ক্ষুধার্ত, এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মায়েরা অজ্ঞান হয়ে পড়ছে।"
গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর অস্থায়ী মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবি সম্পর্কে বলেছেন: "যতক্ষণ না যুদ্ধবিরতি মানুষের জীবন বাঁচানোর একটি বাস্তব সুযোগে পরিণত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এতে কোনও কাজ হবে না।"
গাজার শিশুরা চামড়া ও হাড়ে পরিণত হয়েছে
দক্ষিণ গাজা উপত্যকার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু বিভাগের পরিচালক আহমেদ আল-ফারাহ সতর্ক করে বলেছেন যে, যদি খাদ্য এবং শুকনো দুধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজায় পৌঁছানো না যায়, তাহলে উপত্যকায় ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
আল-ফারাহ আরও বলেন: "প্রায় দশ লক্ষ শিশু ক্ষুধা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে, এবং নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের পুষ্টি বিভাগে তাদের দেহগুলি কেবল চামড়ায় ঢাকা হাড়ে পরিণত হয়েছে এবং তাদের দেহে আর কোনও পেশী বা ফ্যাটি টিস্যু নেই।"
গাজা উপত্যকার চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেছেন: "গাজা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিস প্রদেশে দশ লক্ষ নাগরিক বাস করে, যাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন স্তরের অপুষ্টিতে ভুগছেন, তবে অপুষ্টির সাম্প্রতিকতম ঘটনাগুলি নবজাতকদের জন্য দুধের অভাব এবং শিশুদের অপুষ্টির সাথে সম্পর্কিত।"
গাজায় ৪০,০০০ শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে
গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তথ্য অফিস এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে যে ইসরায়েলি শাসক-চক্র গুড়ো দুধ প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে গাজা উপত্যকার হাজার হাজার শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিবৃতি অনুসারে, গত ১৫০ দিন ধরে ইসরায়েল গাজায় গুড়ো দুধসহ যেকোনো খাবারের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে, যা গণহত্যার অপরাধের শামিল। এই শ্বাসরুদ্ধকর এবং অপরাধমূলক অবরোধের কারণে গাজায় এক বছরের কম বয়সী ৪০,০০০ এরও বেশি শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
গাজায় সাহায্য প্রবেশের বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি প্রতারণামূলক
গাজা উপত্যকার এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শেওয়া বলেছেন, গাজায় ত্রাণ সাহায্য ঢুকতে দেয়ার বিষয়ে দখলদার ইসরায়েলের দাবি মিডিয়া ক্ষেত্রের প্রচারণা মাত্র এবং গাজায় যা পৌঁছেছে তা খুবই সীমিত। আমজাদ শেভা জোর দিয়ে বলেন: মানবিক ত্রাণ চাহিদা কেবল অবরোধ তুলে নেয়া এবং ক্রসিংগুলো খুলে দেওয়ার মাধ্যমেই পূরণ করা যেতে পারে, মিডিয়ার প্রচারণার মাধ্যমে নয়।
গাজার শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে যে গাজা উপত্যকার জনসংখ্যার সকল অংশই ক্ষুধার্ত, তবে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে যে: "গাজা উপত্যকার অল্পবয়সী মেয়েরা স্কুলে যাওয়া এবং খেলার পরিবর্তে, তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু খাবার পাওয়ার আশায় বিপজ্জনক স্থানে যাচ্ছে।" বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও ঘোষণা করেছে যে গাজায় অপুষ্টি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
গাজায় পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষের ক্ষতি আকাশপথে ত্রাণ ফেলে পূরণ করা অসম্ভব
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল টম উইল্টশায়ার বলেছেন, গাজা উপত্যকার পরিস্থিতির জন্য কেবল সামরিক অভিযান স্থগিত রাখাই জরুরি নয়, একইসঙে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিও প্রয়োজন।
গাজায় বিমান থেকে সাহায্য পাঠানোর ইসরায়েলি প্রতারণামূলক প্রদর্শনীর প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে গাজায় কয়েক মাস ধরে তীব্র দুর্ভিক্ষের পর বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং ইসরায়েল এখনও বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফামও জোর দিয়ে বলেছে যে ইসরায়েলের বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা গাজার জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া কয়েক মাসের অনাহারের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবে না।
Your Comment