১০ আগস্ট ২০২৫ - ০৮:২৩
গাজা দখলের অনুমোদন, বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ইসরায়েল

ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত দেশি-বিদেশি মহলে নতুন করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

আহলে বাইত (আ.) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা (আবনা): রয়টার্স জানিয়েছে, গাজায় ব্যবহার হতে পারে এমন সামরিক সরঞ্জাম ইসরায়েলে রপ্তানি বন্ধ করবে জার্মানি। ব্রিটেনও ইসরায়েলকে সামরিক অভিযান আরও তীব্র করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।



তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসরায়েল-বিষয়ক রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেছেন, কিছু দেশ হামাসের পরিবর্তে ইসরায়েলের ওপর চাপ দিচ্ছে। ২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর থেকেই এই যুদ্ধ শুরু হয়।

ইসরায়েলের ভেতরেও গাজায় বন্দী ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার এবং বিরোধীদলীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের মতে, এতে জিম্মিদের প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়বে। নেতানিয়াহুর জোটের ডানপন্থী মিত্ররা হামাস ধ্বংসের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে গাজা পুরোপুরি দখলের চাপ দিচ্ছে। তবে সেনাবাহিনী সতর্ক করেছে, এতে অবশিষ্ট জিম্মিদের জীবন আরও বিপন্ন হবে।

বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিড এই অনুমোদনকে ‘বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করছে। তিনি অভিযোগ করেন, কট্টরপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন গভির ও বেজালেল স্মোটরিচ নেতানিয়াহুকে দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে ঠেলে দিচ্ছেন, যার ফলে জিম্মি ও সেনাদের মৃত্যু বাড়বে।

এর আগে নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সেনাবাহিনী গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শুক্রবারের বিবৃতিতে শুধু গাজা সিটি দখলের কথা বলা হয়েছে, পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ নেই।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বর্তমানে প্রায় ৭৫ শতাংশ গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করেছে। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আভিভির মতে, গাজা সিটি দখল হলে নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ ৮৫ শতাংশে পৌঁছাবে।

গাজা সিটি ‘গাজার হৃদয়’ হিসেবে পরিচিত। আভিভি বলেন, এটি প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং হামাসের চোখে এর পতন মানে পুরো হামাসের পতন। বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ মানুষ গাজা সিটিতে বসবাস করছে, যাদের মধ্যে অনেকেই বাস্তুচ্যুত। যুদ্ধের আগে হামাসের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী এখানেই অবস্থান করত।

নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজা রাখতে চায় না, বরং একটি ‘নিরাপত্তাবেষ্টনী’ তৈরি করে তা আরব বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে চায়। বর্তমানে গাজায় ৫০ জন জিম্মি আছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছিল। জুলাই মাসে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিবিনিময় নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যায়।

বিদেশি নেতাদের মধ্যে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনও ইসরায়েলকে গাজা সিটিতে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। আঞ্চলিক শক্তি সৌদি আরব ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না বলে জানিয়েছে। তারা গাজা দখলের যেকোনো পদক্ষেপের নিন্দা করেছে।

দেশের ভেতরে চাপ বাড়ছে। মতামত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইসরায়েলি চান নেতানিয়াহু অবিলম্বে কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করে জিম্মিদের মুক্ত করুক। ‘হোস্টেজেস ফ্যামিলিস ফোরাম’ বলেছে, গাজা দখলের মানে হলো জিম্মিদের পরিত্যাগ করা এবং জনমতের প্রতি অগ্রাহ্য করা।

তেল আবিবের হোটেল মালিক ড্যানি বুকোভস্কি বলেছেন, এটি জিম্মিদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের সমান এবং এই সময়ে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত।

গাজার পূর্ণ দখল ২০০৫ সালের সেই সিদ্ধান্তকে উল্টে দেবে, যখন ইসরায়েল ওই অঞ্চল থেকে হাজার হাজার বসতি স্থাপনকারী ও সেনা সরিয়ে নেয়। তবে সীমান্ত, আকাশসীমা ও সরবরাহব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রেখে দেয়।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha