৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ২২:৩৯
ইসলাম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ, কলকাতায় উর্দু কবি জাভেদ আখতারের অনুষ্ঠান বাতিল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতারের একটি অনুষ্ঠান বাতিলের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন কলকাতার মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): সরকারি প্রতিষ্ঠানটির সদস্য-সম্পাদক নুজহাত জয়নাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুষ্ঠান বাতিলের ঘোষণা দেন। ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।



গত ৩১ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতের প্রসিদ্ধ লেখক ও গীতিকার জাভেদ আখতারের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে উর্দু ও হিন্দিভাষী আলেম-ওলামাদের তরফ থেকে এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করা হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান সমাজের সংবাদপত্রগুলোতে লেখা হয়েছে, এই অনুষ্ঠান বন্ধের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন মুসলমান সমাজের সর্ববৃহৎ সংগঠন জমিয়ত উলেমায়ে হিন্দের কলকাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত জিল্লুর রহমান আরিফ ও ইমামে ইদাইন কারি ফজলুর রহমান।

পশ্চিমবঙ্গ জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তাঁদের সংগঠন এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেছে।

কারণ, জাভেদ আখতার খুব বড় শিল্পী, বুদ্ধিজীবী এবং নাস্তিক হলেও এ নিয়ে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি ‘অযৌক্তিকভাবে ইসলামি শরিয়া এবং আল্লাহকে ব্যঙ্গ করার পরে তাঁকে এই অনুষ্ঠান করতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ উর্দু একাডেমি একটি সরকারি সংস্থা। উর্দুর সঙ্গে মুসলমান সমাজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতে যাঁরা উর্দু বলেন তাঁদের ৯৫ শতাংশই মুসলমান। তাঁদের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার কোনো অধিকার নেই।’

জাভেদ আখতারের অনুষ্ঠান বাতিল করতে উর্দু একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যান নাদিমুল হককে অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার এমপি। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠান বাতিল করেননি। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে অনুষ্ঠান বন্ধ হয় বলে জানান সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী।

স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একদিকে মুসলমান সমাজের একাংশ জাভেদ আখতারকে শহরে আসতে না দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা মনে করেন, অনুষ্ঠানটি করতে দেওয়া উচিত ছিল।

অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদীদের তরফে বলা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে উগ্র ইসলামপন্থীরা শহরের সংস্কৃতি ও ভাষাভিত্তিক সংস্কৃতির দখল নিয়েছে, এ ঘটনায় তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।

বিজেপির সমর্থক পঙ্কজ চৌধুরী বলেন, অতীতে সিপিআইএমের সময় উর্দুভাষী মুসলমানেরা বিরাট এক আন্দোলন গড়ে তুলে একইভাবে রাজ্য থেকে তসলিমা নাসরিনকে বের করে দিয়েছিল।

ঠিক সেই একই কাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে তারা আবার করল জাভেদ আখতারের মতো স্বনামধন্য একজন লেখক ও শিল্পীকে শহরে প্রবেশ করতে না দিয়ে।

সংবাদমাধ্যমে জাভেদ আখতার বলেছেন, ‘যেকোনো অজ্ঞাত কারণে হিন্দু সমাজের একাংশ তাঁকে উগ্রবাদী মুসলমান বলে চিহ্নিত করে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেন।

অন্যদিকে মুসলমান সমাজের একটি অংশ তাঁকে ইসলামবিরোধী বলে চিহ্নিত করে নাম পরিবর্তন করে হিন্দু নাম নেওয়ার পরামর্শ দেন। “এর থেকে মনে হয়, সম্ভবত আমার চিন্তাভাবনা সঠিক পথেই আছে”’ বলেন তিনি।

সমালোচনা হলেও অনুষ্ঠানটি কবে হবে সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি পশ্চিমবঙ্গ উর্দু একাডেমি।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha