৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ২১:০৯
মৃতের সংখ্যা ২২০০ ছাড়িয়েছে, ত্রাণ সংকট প্রকট

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা):  ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় অনুসন্ধান অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রবিবারের ভূমিকম্পে ৮৪ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুনার প্রদেশে প্রায় ৯৮ শতাংশ ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে।



তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে, সর্বশেষ মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৫ জনে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩ হাজার ৬৪০ জন। 

কুনার প্রদেশের একজন বাসিন্দা আলেম জান বলেন, আমাদের যা কিছু ছিল সব ধ্বংস হয়ে গেছে। একমাত্র অবশিষ্ট জিনিস হলো আমাদের গায়ে থাকা এই পোশাকগুলো। তার পরিবার গাছের নিচে বসেছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে সামান্য কিছুই রক্ষা করতে পেরেছিল তারা।

রবিবার আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এতে কুনার এবং নাঙ্গারহার প্রদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়। ভূমিকম্পটি ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) গভীরতায় আঘাত হানে।



কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৬ হাজার ৭০০-এরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে যে, অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ায় জীবিতদের উদ্ধারের আশা কমে আসছে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ ফেডারেশন জানিয়েছে,মানবিক চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

ব্রিটিশ-ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইডের একটি মূল্যায়ন অনুসারে, কুনার প্রদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কিছু গ্রামে, প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন নিহত বা আহত হয়েছেন, যেখানে ৯৮ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, জীবিতরা মরিয়া হয়ে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজছিলেন। ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে লাশ বের করছিলেন, খড়ের তৈরি স্ট্রেচারে দেহ বহন করছিলেন, আর কুদাল দিয়ে কবর খুঁড়ছিলেন। সাহায্যের অপেক্ষায়।

ট্রাকগুলো দুর্গম উঁচু ঢালু গ্রামগুলোর দিকে যাচ্ছে—কিছু ট্রাক ভর্তি ছিল আটার বস্তা, আবার কিছুতে কোদাল হাতে লোকজন ছিল।

যেহেতু ঘরবাড়ি প্রধানত শুকনো ইট-পাথর ও কাঠ দিয়ে তৈরি, তাই অনেক পরিবার ঘরে ফেরার বদলে খোলা আকাশের নিচেই থাকছেন। কারণ নিয়মিত আফটারশক বা ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন এখনও চলছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় বলেছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর এসব ঘরবাড়ি ভূমিকম্প থেকে খুব সামান্য সুরক্ষা দিচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই ৪ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও সংকুচিত আন্তর্জাতিক সহায়তায় জর্জরিত। সীমিত সম্পদের কারণে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তার ওপর রয়েছে কঠোর আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি সহায়তায় কাটছাঁট করেছিলেন, আর নারীদের ওপর তালেবানের বিধিনিষেধ ও সাহায্যকর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ দাতাদের হতাশ করেছে। ফলে আফগানিস্তান আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, তাদের কাছে মাত্র চার সপ্তাহ পর্যন্ত সহায়তা দেওয়ার মতো অর্থ ও মজুদ আছে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha