আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): নিরাপত্তাজনিত কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে যান না বললেই চলে। এক বিরল ঘটনায় সী ফুড খেতে হোয়াইট হাউসের কাছাকাছি এক রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সে ঘটনা খুব একটা সুখকর হয়নি ট্রাম্পের জন্য।
রেস্তোরাঁর ভেতর আগে থেকে অপেক্ষা করছিলেন বিক্ষোভকারীরা। তারা ট্রাম্পকে 'একালের হিটলার' বলে শ্লোগান দিতে থাকেন।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসি বাহিনীর নেতৃত্ব দেন দেশটির নেতা অ্যাডলফ হিটলার। বিশ্বের সবচেয়ে নির্দয় ও হিংস্র মানবতা বিরোধী অপরাধীদের অন্যতম তিনি।
তার নেতৃত্বে বৈশ্বিক আধিপত্য স্থাপনের এক সহিংস লড়াইয়ে মেতে উঠেছিল তৎকালীন জার্মানি। ওই সংঘাতে বিশ্বজুড়ে লাখো-কোটি মানুষের প্রাণহানি হয়। পরবর্তীতে মিত্র বাহিনীর হাতে পরাজিত ও পরাস্ত হন তিনি।
একালের হিটলার
ওয়াশিংটন ডিসির ফিফটিন্থ স্ট্রিটে অবস্থিত 'জো'স সী ফুড, প্রাইম স্টেক অ্যান্ড স্টোন ক্র্যাব' নামের রেস্তোরাঁয় ট্রাম্পের গাড়িবহর এসে পৌঁছায়। রেস্তোরাঁর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯১৩ সালে এর উদ্বোধন হয়েছিল।
হোয়াইট হাউস থেকে জায়গাটি বেশি দূরে নয়। নিজের লিমুজিন গাড়ি থেকে যখন ট্রাম্প নেমে আসেন, তখন চার পাশে উল্লাসধ্বনি শোনা যায়। উপস্থিত জনতা তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান।
তবে একইসঙ্গে দেখা যায় বিপরীত চিত্রও।
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থন দেখানোর নীতির প্রতিবাদে সেখানে উপস্থিত একদল বিক্ষোভকারী দুয়ো ধ্বনি দেন।

রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমকে ট্রাম্প বলেন, 'আমরা ডিসির একদম কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। আপনারা জানেন, গত ২০ বছর ধরে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি জায়গা ছিল। কিন্তু গত এক বছরে পরিস্থিতি বদলে গেছে—এখন এখানে কার্যত কোনো অপরাধই নেই।'
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, রেস্তোরাঁয় ঢোকার পর সেখানে খেতে আসা কয়েকজন মানুষের সঙ্গে হাত মেলান ট্রাম্প।
তারপর একদল বিক্ষোভকারীর মুখোমুখি হন তিনি। তারা ফিলিস্তিনের পতাকা উঁচিয়ে বলতে থাকেন, 'ডিসিকে মুক্ত কর! ফিলিস্তিনকে মুক্ত কর! ট্রাম্প হচ্ছেন একালের হিটলার।'
ট্রাম্প তাদের দিকে এগিয়ে যান। হাত নেড়ে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি রিপাবলিকান নেতা।

কয়েক সেকেন্ড পর জায়গাটি খালি করার জন্য তার সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের ইঙ্গিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এরপর আবারও হাত নেড়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন তিনি।
সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা একে একে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিতে থাকেন। এ সময় তারা 'যাওয়ার সময় হয়েছে। এখন চলে যাওয়ার সময় হয়েছে', বলতে থাকেন।
রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনের পতাকাসম্বলিত ব্যানার উঁচিয়ে ধরেন।
রেস্তোরাঁয় উপস্থিত বাকি মানুষদের কাউকে কাউকে 'ইউএসএ! ইউএসএ!' বলে শ্লোগান দিতে শোনা যায়। আবার কেউ কেউ দুয়ো ধ্বনিও দেন।
নারীবাদী সংগঠন কোডপিংক জানিয়েছে, ওই রেস্তোরাঁয় তাদের বিক্ষোভকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
নৈশভোজের বিস্তারিত
নৈশভোজে ট্রাম্পের সঙ্গে আরও ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস ও ছিল।
রেস্তোরাঁয় ঢোকার আগে ট্রাম্প বলে, 'রেস্তোরাঁগুলোতে দারুণ ব্যবসা হচ্ছে।'
'বছরের পর বছর (আতংকে) যেসব রেস্তোরাঁয় মানুষ যেতে পারতো না, এখন সেখানেও নৈশভোজ করতে যাচ্ছেন তারা', যোগ করেন তিনি।
রাত ১০টার পর হোয়াইট হাউসে ফেরেন ট্রাম্প।
নৈশভোজে অন্যদের পাশাপাশি ট্রাম্পের সঙ্গী ছিল তার প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিটও।
তিনি জানান, রেস্তোরাঁয় প্রেসিডেন্ট কাঁকড়া, চিংড়ী, সালাদ, স্টেক ও ডেজার্ট খেয়েছেন।
Your Comment