১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ২০:০১
পাঁচটি ধারার ৪টিতেই ফেঁসেছে ইসরায়েলআন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যা

২০২৩ সালে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক আইনে সংজ্ঞায়িত গণহত্যার পাঁচটি কাজের মধ্যে চারটির যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): জাতিসংঘের এক তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে।



এগুলো হলো—কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে গুরুতর ক্ষতি করা, গোষ্ঠীটিকে ধ্বংস করার মতো পরিবেশ তৈরি করা এবং জন্ম প্রতিরোধ করা।

প্রতিবেদনটিতে ইসরায়েলি নেতাদের বক্তব্য ও ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের ধরণকে গণহত্যার অভিপ্রায়ের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে “বিকৃত ও মিথ্যা” আখ্যা দিয়েছে। তারা কমিশনের তিন বিশেষজ্ঞকে “হামাসের প্রতিনিধি” হিসেবে অভিযুক্ত করেছে এবং দাবি করেছে, তারা হামাসের প্রচারিত “মিথ্যা তথ্যের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করেছে”, যা বহুবার খণ্ডিত হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলার জবাবে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

তার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৪ হাজার ৯০৫ জন নিহত হয়েছেন বলে ওই অঞ্চলের হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এ ছাড়া, জনসংখ্যার বেশিরভাগই বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে; ঘরের ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে; স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা গাজা শহরে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছেন।

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তদন্তের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ ২০২১ সালে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করে। এর কাজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা।

তিন সদস্যের এই বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান নাভি পিল্লাই, যিনি রুয়ান্ডায় গণহত্যার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অন্য দুই সদস্য হলেন অস্ট্রেলিয়ান মানবাধিকার আইনজীবী ক্রিস সিডোটি এবং ভারতের ভূমি ও আবাসন অধিকার বিশেষজ্ঞ মিলুন কোঠারি।

কমিশন আগেও বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী যুদ্ধাপরাধ ও গুরুতর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে, আর গাজায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ করেছে।

কমিশন তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনকে “এখন পর্যন্ত যুদ্ধসংক্রান্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রামাণ্য জাতিসংঘ অনুসন্ধান” হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে এটি জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক অবস্থান নয়।

৭২ পৃষ্ঠার ওই নথিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদে সংজ্ঞায়িত পাঁচটি কাজের মধ্যে চারটি কাজ—জাতিগত, ধর্মীয় বা জাতীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত—ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনী গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে করেছে এবং করছে।

Tags