১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১৯:৫১
‘মুসলিম ন্যাটো’ গঠনের প্রস্তাব কতটা বাস্তব?

গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে দখলদার ইসরায়েল। গত ৩ বছর ধরে হামাসের বিরুদ্ধে চলা যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ ছিটকে পড়ছে ইরান, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া, কাতারের মতো রাষ্ট্রগুলোতে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): মুসলিম সহযোগী সংস্থার (ওআইসি) বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে ইরানের পক্ষে প্রস্তাব এসেছে, ন্যাটোর মতো মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে ‘যৌথ সামরিক ফ্রন্ট’ গঠনের। একই প্রস্তাব দিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানিও।



 কাতারে বসেছে ওআইসির শীর্ষ সম্মেলন। তার আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের সাবেক কমান্ডর তথা এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য মোহসেন রেজাই।

তিনি বলেন, ওআইসি যদি উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয় তবে ভবিষ্যতে সৌদি আরব, তুরস্ক এবং ইরাক ইসরায়েলের হামলার মুখে পড়বে। ইরানের সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এর একমাত্র সমাধান হলো মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে একটি সামরিক জোট গঠন করা।’

রেজাইয়ের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন ইরানের কোম প্রদেশের প্রধান শিয়া ধর্মগুরু জালাল রাজাভি মেহর। তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে এই ধরনের সামরিক বাহিনী গঠন না করা হলে ভবিষ্যতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জন্য সমূহ বিপদ।’

সামরিক বাহিনী কেমন হওয়া উচিত তার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘এক সেনাবাহিনী এমন হওয়া উচিত যেখানে একক কমান্ডের অধীনে পুরো বাহিনী কাজ করবে। প্রতিরক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজন শত্রুর উপর হামলা চালিয়ে তাকে নিশ্চিহ্ন করতেও দ্বিতীয়বার ভাবা হবে না।’

তবে প্রস্তাব উঠলেও তার বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ইসরায়েল গঠন হওয়ার পর তার অস্তিত্ব অস্বীকার করে মিশরের নেতৃত্বে দেশটির উপর হামলা চালায় সিরিয়া, জর্ডান, ইরাক ও লেবানন। তবে মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে পিছু হঠে মুসলিম দেশগুলো। ১৯৬৭ সালের এই যুদ্ধের পর নীলনদ দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। ধাপে ধাপে সহাবস্থান ও শান্তির পথে হেঁটেছে ইহুদি রাষ্ট্র ও বাকি মুসলিম রাষ্ট্রগুলো।

তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সব শান্তি প্রক্রিয়া বিসর্জন দিয়ে বেপরোয়া হামলার পথে হেঁটেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনকে কার্যত ধ্বংস করার পাশাপাশি ইসরায়েলের কোপে পড়েছে ইরান, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া।

সম্প্রতি মার্কিন সুনজরে থাকা কাতারেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম ন্যাটো গঠনের প্রস্তাব ‘সঙ্গত’ হলেও তার বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামলেও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর একজোট হওয়া বেশ কঠিন। ধর্ম এক হলেও মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিভেদ কম নেই। প্রথমত, শিয়া সুন্নি সমস্যায় জর্জরিত মুসলিম বিশ্ব। এই দুই সম্প্রদায়ের বিভাজন এতটাই যে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে নামতেও পিছুপা হয় না তারা।

তাছাড়া মুসলিম ন্যাটো গঠিত হলে তার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে সংঘাত কম হবে না। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্নেহধন্য দেশ আরব আমিরশাহি, কাতার, ওমান-সহ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো। ইরানের প্রস্তাব মেনে আমেরিকার বিরুদ্ধে গিয়ে এই জোট তৈরির সম্ভাবনা অনেকটা মরীচিকার মতোই।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha