আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): লন্ডনের হ্যামারস্মিথ এলাকায় অবস্থিত ফিলিস্তিন মিশনের সামনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত হুসাম জোমলট। তিনি বলেন, ‘ব্যালফোর ঘোষণার রাজধানীতেই, এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর যুক্তরাজ্য অবশেষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে ইতিহাসের একটি ভুল সংশোধন করল।’
ফিলিস্তিন প্রায় ৩০ বছর ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯৪৮ সালে ম্যান্ডেট শেষ হওয়ার পরও রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। যদিও ১৯৫০ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল যুক্তরাজ্য।
জোমলট বলেন, ‘এই মুহূর্তটি একটি সাহসী সত্য উচ্চারণ—গণহত্যাকে চূড়ান্ত কথা হতে না দেওয়ার অঙ্গীকার, দখলদারিত্বকে স্থায়ী হিসেবে মেনে না নেওয়ার ঘোষণা এবং আমাদের অস্তিত্ব ও মর্যাদাকে অস্বীকার করার বিরুদ্ধে এক প্রবল প্রতিবাদ।’
যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রোববার এই স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের নীতির পরিবর্তন নির্দেশ করে। আগে বলা হতো, শান্তি আলোচনার পরেই স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসে হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর প্রতিশোধমূলক অভিযানের পর স্টারমার জানান, ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানের আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি জনগণের জন্য একটি প্রতিশ্রুতি। এতে একটি ভালো ভবিষ্যৎ সম্ভব।’
গাজা ও পশ্চিম তীরে প্রায় ৫৫ লাখ ফিলিস্তিনি এই মুহূর্তে ‘অসহনীয় দুর্দশা ও যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন জোমলট। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আগস্ট থেকে বহুতল ভবন ধ্বংস করছে। এই আগ্রাসনে ইতোমধ্যে ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
পশ্চিম তীরে, ইসরায়েল ‘ই১ বসতি প্রকল্প’ অনুমোদন করেছে। এর ফলে এলাকাটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করবে এবং একটি সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে কার্যত অসম্ভব করে তুলবে।
জোমলট বলেন, ‘গাজায় আমাদের মানুষগুলোকে ক্ষুধার্ত রাখা হচ্ছে, বোমা মারা হচ্ছে, এবং তাদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপে কবর দেওয়া হচ্ছে; পশ্চিম তীরে চলছে জাতিগত নিধন, প্রতিদিনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, ভূমি দখল, এবং দমবন্ধ করে রাখা নিপীড়ন।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাজ্যের এই স্বীকৃতি শুধু প্রতীকী না থেকে প্রকৃত সমাধানের পথে সহায়ক হবে।
এই স্বীকৃতির সাথে যুক্তরাজ্য যুক্ত হলো কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের সাথে। দেশগুলো একই দিনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। ফ্রান্সও এই সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একই সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি এবং সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন উপস্থিত ছিলেন। করবিন ফিলিস্তিনিদের স্বীকৃতিকে ‘অপরিহার্য অধিকার’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘যক্তরাজ্য সরকারকে গাজায় গণহত্যা স্বীকার করতে হবে, মানবতাবিরোধী অপরাধে সহায়তা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে।’
সমাপ্তি বক্তব্যে জোমলট জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশের কবিতা উদ্ধৃত করেন, ‘এই ভূমিতে, বেঁচে থাকার আছে অনেক কারণ।’
তিনি বলেন, ‘দয়া করে আমার সঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করুন—এই পতাকার রংগুলো আমাদের জাতির প্রতীক। শোকের জন্য কালো, আশার জন্য সাদা, ভূমির জন্য সবুজ এবং আমাদের আত্মত্যাগের জন্য লাল।’
Your Comment