আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): সুদান উইটনেস প্রজেক্ট বলছে, তারা ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সংঘাতে সামরিক বিমান হামলার সবচেয়ে বড় ও জানা তথ্যগুলো একত্র করেছে। এ তদন্তের তথ্য বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, বিমান বাহিনী জনবহুল এলাকায়ও নির্বিচারে বোমা ব্যবহার করেছে।
এ রকম বিমান হামলা কেবল সুদানের সশস্ত্র বাহিনী বা এসএএফই চালাতে সক্ষম। কারণ এই সংঘাতের অন্য পক্ষ আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসর (আরএসএফ) কাছে কোনো বিমান নেই। তারা ড্রোন হামলার ওপরই নির্ভরশীল।
সুদানের পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে জাতিগত গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছে আরএসএফ। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও এনেছে।
প্রকল্পের পরিচালনাকারী মার্ক স্নোয়েক বলেন, ‘অনেক ক্ষয়ক্ষতি ও আইন লঙ্ঘনের জন্য আরএসএফকে দায়ী করা হচ্ছে এবং সেটা ঠিক আছে। তবে আমি মনে করি এসএএফকেও তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী করা উচিত।’
নির্বিচারে বোমা হামলার অভিযোগে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখোমুখিও হয়েছে সুদানের সামরিক বাহিনী। এ বিষয়ে এসএএফ এর সাথে কথা বলতে চাইলেও বিবিসির অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি তারা।
সুদান উইটনেস নামের উদ্যোগটি সেন্টার ফর ইনফরমেশন রেজিলিয়েন্স বা সিআইআর এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। যা একটি অলাভজনক সংগঠন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাগুলো সামনে আনতে কাজ করে। এই প্রকল্পের জন্য তারা ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অর্থায়ন পেয়েছে।
বিবিসির হাতে আসা এই প্রতিবেদনের একটি কপি অনুসারে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে পরিচালিত ৩৮৪টি বিমান হামলা বিশ্লেষণ করেছে সুদান উইটনেস। তাদের নথিভুক্ত ঘটনাগুলোতে এক হাজার ৭০০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং এক হাজার ১২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আবাসিক এলাকা সংক্রান্ত ১৩৫টি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বাড়িঘর ও বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ৩৫টি ঘটনা পাওয়া গেছে, যেখানে বোমা হামলা হয়েছে বাজার ও বাণিজ্যিক স্থাপনায়, অনেক সময় সেখানে মানুষের ভিড় ছিল। এছাড়া ১৯টি হামলা স্বাস্থ্যসেবা, বাস্তুচ্যুত মানুষের আবাসস্থল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো স্থানেও হয়েছে।
তবে সুদান উইটনেস স্বীকার করেছে, তাদের গবেষণা অসম্পূর্ণ। কারণ ফলাফলগুলো মোট হামলার সংখ্যার চেয়ে তথ্যের প্রাপ্যতাকে সামনে আনে। দুর্বল টেলিযোগাযোগ ও বিশ্বাসযোগ্য উৎস শনাক্ত করতে অসুবিধার কারণে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলো থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন।
সুদানে বিদেশী অস্ত্র সরবরাহের ওপর নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান কনফ্লিক্ট ইনসাইটস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাস্টিন লিঞ্চ বিবিসিকে বলেন, সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে লড়াইয়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে সুদানের বেসামরিক নাগরিকদের।
সুদান যুদ্ধে জড়িত উভয়পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ সপ্তাহে আরএসএফ ও তার মিত্র সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট-নর্থের বিরুদ্ধে দক্ষিণ করদোফান শহরের কালোগিতে একটি কিন্ডারগার্টেন ও একটি হাসপাতালে ড্রোন হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এই ঘটনায় ১১৪ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩ জন শিশু।
Your Comment