আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): লেফটেন্যান্ট কাসেম সোলাইমানীর মত জাঁদরেল জেনারেলকে গুপ্ত হত্যা করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসন খুশি; খুশিতেঘাটতিনেইইসরাইল, সৌদি রাজতান্ত্রিক শাসকদেরও।এরপাশাপাশিখুশীহয়েছে সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়ার প্রচারণায় অতি মাত্রায় প্রভাবিত কিছু মানুষ।কথা হল, ১নং শত্রুর মৃত্যুতে সাম্রাজ্যবাদিরা খুশি হবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তুএতে আমাদের খুশির কি আছে!
মিডিয়ার ভুমিকার বিষয়ে নোয়াম চমস্কি প্রসিদ্ধ তত্ত্ব হচ্ছে,কর্পোরেট মিডিয়া, সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে মানুষের মনে সম্মতি উৎপাদন করে চলছে।
এদিকে মার্শাল ম্যাকলুহান বলে গেছেন- মিডিয়াই আমাদের চেতনাকে নির্ধারণ করে দেয়। এর মানে আমরা যা বলি, যা মত প্রকাশ করি 'সত্য' বলে, তা কি মিডিয়ার প্রোডাক্ট নাকি আমার চিন্তা চেতনার প্রোডাক্ট তা ভেবে দেখা দরকার।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সম্প্রসারণে ওদের কাজ হল নকল শত্রু তৈরি করা এবং তাকে কাজে লাগানো। নকল শত্রুকে যখনি মানুষের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে শুধু তখনি ওদের (সাম্রাজ্যবাদের) আসল শত্রুকে দমন করা সহজ হবে। কারণ এমতাবস্থায় সাধারন মানুষ আসল শত্রুকেও নকল শত্রু মনে করে সমর্থন দেবে।
এই কৌশলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এগিয়ে গেলেও আমাদের চিন্তা চেতনা আগায়নি। সে কারনে ভাবখানা এমন যে, আমেরিকা সারা পৃথিবীর সব কিছু দখল করে নিকতা মানা যায়, কিন্তু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতিরোধ যারা করবে তাদের প্রতি সমর্থন জানানোর কার্পণ্য তো রয়েছেই পাশাপাশি মার্কিনরা সুপরিকল্পিতভাবে তাদেরকে সন্ত্রাসীদের তালিকাভূক্ত করবে আর এই বলে প্রচার করবে যে এই 'সন্ত্রাসী' ওমুক পন্থি, আরতখনি আমরা কাফের কাফের বলে চিৎকার করতে থাকি।
কোরান শরীফের সূরা নিসার ৯৪নং আয়াত পড়ে দেখুন, কাদেরকে কাফের বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের এক শ্রেনী, স্বল্প জ্ঞানী মানুষের ওয়াজের প্রভাবে কাফের কাফের বলে চিৎকার করে।আর এই চিৎকারের পুরো ফায়দাটা নিচ্ছে মার্কিন-ইসরাইল সাম্রাজ্যবাদ। অথচ কুরআনের কুরআনের নিষেধাজ্ঞার পরোয়া আমারা করি না।
আগে মার্কিন-ইসরাইলি মিডিয়া প্রচার করত; সিরিয়ায় লাখ লাখ মানুষ হত্যাকারী আসাদ সরকার। সাদ্দামের মত আসাদের বেলাতেও এই বলে মার্কিন বলয় সোচ্চার হল যে, ওকে যে কোন মূল্যে উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু ব্যর্থ হল রাশিয়া ওইরানের ভুমিকায়। এর জেরে নিরীহ ও সাধারণ মানুষ এবং সৈন্যদেরকে হত্যা করল মার্কিন, ইসরাইলী, সৌদি, ব্রিটিশ, ফ্রান্সসহ বহুদেশের জোট বাহিনী আর তারা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলোআইএস তথা দায়েশকে। এই যুদ্ধে যখন মার্কিন- ইসরাইল সাম্রাজ্যবাদ পরাস্ত হল (কারণ মার্কিন-ইসরাইলের প্ল্যান ছিল আসাদকে সরিয়ে ফিলিস্তিনের সকল সহযোগিতার সব পথ বন্ধ করে দেয়া) তখনি এরা মিডিয়া শক্তি ব্যবহার করে এই প্রচার শুরু করল যে, এ মানুষগুলোর খুনী হল আসাদ সরকার।এরপর রাশিয়ার উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করলো।সর্বশেষে যখন জেনারেল সুলাইমানীকে হত্যার প্ল্যান করল, তখন প্রচার শুরু করল সব মানুষ খুন করেছে এই সোলাইমানী।
অথচ প্রচারনায় আইএস এবং এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক সৌদ পরিবারের বিরুদ্ধে কোন কথা নাই। এর মানে সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়া যাই প্রচার করবে তাই 'সত্য'।ফলশ্রুতিতে আমাদেরকে সাম্রাজ্যবাদের ছায়াতলেই থাকতে হবে। আর তাই সিরিয়া, ফিলিস্তিনসহ সকলআরব রাষ্ট্রও যদি আমেরিকা ও ইসরাইলের দখলে চলে যায় তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু কোন স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাওয়া মানুষ যদি এ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজতখন মিডিয়ার দ্বারা মোহবিষ্ট মানুষগুলো প্রচার শুরু করবে কেয়ামত ঘনিয়ে আসছে। আর যদি কেউ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেপালটা প্রতিরোধ করে তখন একটা ট্যাগ দিয়ে তাকে জাহান্নামী বানিয়ে দেয়।
ইয়েমেনে সৌদি-মার্কিন নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, ফলে দেশটিতে দুর্ভিক্ষ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, এ নিয়েআমাদের কোন উচ্চবাচ্য নেই। পক্ষান্তরে জেনারেল সোলাইমানি মার্কিন-সৌদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সহযোগিতা করছে, এগুলো আমাদের কাছে অপছন্দ। কারণ 'শিয়া' 'সুন্নী' ভেদরেখা দেখিয়ে সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টরা যেভাবে শিখিয়েছে আমরা সে ভাষাতেই বুঝি ও কথা বলি। ফলে জনগণের অধিকার নিয়ে আমরা চিন্তিত নই, আমরা আছি ভেদাভেদ নিয়ে। আর তাই আমরা চিনতে পারিনি কাসেম সোলাইমানিকে। কারণ আমাদের অজ্ঞতাই আমাদের চিনার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। আর এইঅজ্ঞতার কারণেই আমরা মিডিয়ার দ্বারা এতটাই প্রভাবিত যে, যা গিলাচ্ছে আমরা তা গোগ্রাসে গিলছি এবং যাকে চাইছে তার সাফাই গাইছি, যাকে চাইছে না তার গুষ্টি উদ্ধার করছি।
এ কারণেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আর ইসরাইলী জঙ্গীবাদের বিস্তার দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। কারণ ওরা চায় 'শিয়া' ও'সুন্নী' নিয়েমুসলমানরানিজেদেরমধ্যে কামড়াকামড়ি করুক, এতে বাধাহীনভাবে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার হবে এবংমার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীদের দমনও করা যাবে। মার্শাল ম্যাকলুহান লিখেছেন মিডিয়াই আমাদের মন মানসিকতা ঠিক করে দেয়, আমরা তাই করছি ...শত্রুকে ডেকে আনছি সব কিছু দখল করে নেয়ার জন্য।
আশেক মাহমুদ : সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা